চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে ও সবুজ উইকেটে দলের বিপর্যয়ের মধ্যে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি উপহার দিলেন ক্যামেরন গ্রিন।
Published : 29 Feb 2024, 11:35 AM
টেস্ট ম্যাচের শেষ বিকেলে হঠাৎই যেন তৈরি হলো সীমিত ওভারের আবহ। ন্যাথান লায়ন যখন আউট হলেন, অস্ট্রেলিয়ার উইকেট বাকি তখন একটি, দিনের ওভারও বাকি একটি। ক্যামেরন গ্রিনের সেঞ্চুরি ছুঁতে তখন লাগে ৯ রান। নাটকীয় দিনের শেষ বেলায় তাই আরও উত্তেজনার ছোঁয়া। দিনজুড়ে দারুণভাবে লড়ে যাওয়া গ্রিন শেষের সেই নাটকেরও নায়ক হয়ে গেলেন। ওই ওভারেই তিন বাউন্ডারিতে পৌঁছে গেলেন তিনি তিন অঙ্কে। মাইলফলক ছুঁয়েই মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে ছুড়লেন হুঙ্কার।
এমন ইনিংসের এরকম উদযাপন তিনি করতেই পারেন। কোনো কোনো ইনিংস বা পারফরম্যান্স অনেক সময় অনেক ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার গড়ে দেয় বা গতিপথ ঠিক করে দেয়। এই ইনিংসটিও গ্রিনের জন্য হতে পরে সেরকম। মেঘলা আকাশ, সবুজ উইকেট, নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের দুর্দান্ত সুইং বোলিং আর আরেক প্রান্তে টানা উইকেট হারানোর চাপ, সব সামলে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান উপহার দিলেন স্মরণীয় এক ইনিংস।
দিনটি হতে পারত নিউ জিল্যান্ডের। কিন্তু গ্রিনের কারণেই তা হলো না। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার রান ৯ উইকেটে ২৭৯।
চারে নেমে ১৫৫ বলে ১০৩ রানে অপরাজিত গ্রিন। তার ২৭ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি। চার নম্বরে নেমে শতরান তার এটিই প্রথম।
ডেভিড ওয়ার্নারের অবসরের পর স্টিভেন স্মিথ ওপেনিংয়ে ওঠে যাওয়ায় চার নম্বরের দায়িত্ব পেয়েছেন গ্রিন। কিন্তু নতুন ভূমিকায় প্রথম সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দুই টেস্টে কোনো ফিফটি করতে পারেননি। তবে দল তার ওপর আস্থা রেখেছে, কোচের ভরসা তিনি পেয়েছেন। নিউ জিল্যান্ডে প্রথম ইনিংসেই অনেক চ্যালেঞ্জের জবাব দেওয়া শতরানে সেটিরই প্রতিদান দিলেন এই অলরাউন্ডার।
সহায়ক উইকেট ও কন্ডিশনে নিউ জিল্যান্ডের পেসাররা ছিলেন কার্যকর। চার উইকেট শিকার করেন ম্যাট হেনরি। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা উইল ও’রোক ও অভিষেকের এক বছর পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা স্কট কুগেলাইন উইকেট নেন দুটি করে। কিন্তু তারা কেউই পারেননি গ্রিনের চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ফাটল ধরাতে।
ওয়েলিংটনে বৃহস্পতিবার সকালে বৃষ্টিপাত হয়েছে বেশ। টসের সময়ও আকাশ ছিল মেঘলা। টস জিতে বোলিং নেন কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি। তবে তাদেরকে হতাশ করে অস্ট্রেলিয়াকে ভালো শুরু এনে দেন স্টিভেন স্মিথ ও উসমান খাওয়াজা।
কিউই পেসাররা যদিও আঁটসাঁট বোলিং করেন। স্মিথ ও খাওয়াজা অস্বস্তিতেও পড়েন বেশ কবার। তবে উইকেট আগলে রাখেন দুজনই।
৬১ রানের জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙে লাঞ্চের একটু আগে। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে স্মিথকে ফেরান ম্যাট হেনরি। দেশের বাইরে ওপেনিংয়ের প্রথম ইনিংসে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান করেন ৭১ বলে ৩১।
লাঞ্চের পরপর অস্ট্রেলিয়া হারায় মার্নাস লাবুশেনকে। ২৭ বলে ১ রান করে তিনি ফেরেন নিজের শটে হতাশ হয়ে।
এরপর খাওয়াজার সঙ্গে গ্রিনে জুটিও লম্বা হয়নি। ১১৮ বল খেলে ৩৩ রান করা খাওয়াজা বোল্ড হন হেনরির সুইংয়ে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে। ট্রাভিস হেডও বিদায় নেন কেবল ১ রানে। ২৮ রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি এরপরই পায় তারা। জুটিতে যেহেতু মিচেল মার্শ ছিলেন, রানের গতিও তাই ছিল দ্রুত। পাল্টা আক্রমণে বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তিনি। আরেকপাশে গ্রিন এগোতে থাকেন ধীরেসুস্থে। জড়তাময় শুরুর পর আস্তে আস্তে থিতু হন তিনি।
নিউ জিল্যান্ডের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটিও ভাঙেন হেনরি। ৩৯ বলে ৪০ রানে ফেরেন মার্শ। জুটি থামে ৭৭ বলে ৬৭ রানে।
ইনিংসের বাকিটা কেবলই গ্রিনের গল্প। অ্যালেক্স কেয়ারি, মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরা টিকতে পারেননি লম্বা সময়। তবে সবাইকে নিয়ে কার্যকর কয়েকটি জুটি গড়ে তোলেন গ্রিন। ফিফটিতে পা রাখেন তিনি ১০৮ বলে।
পরে পরিস্থিতি বুঝে রানের গতি বাড়ান তিনি। পঞ্চাশ থেকে শতরানে পৌঁছে যান কেবল ৪৬ বলেই। আরেকপ্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও তিনি মনোযোগ হারাননি একটুও। দ্বিতীয় নতুন বলেও তাকে ফেরাতে পারেনি নিউ জিল্যান্ড।
দিনের শেষের আগের ওভারে আউট হয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার দশম ব্যাটসম্যান লায়ন। এরপর শেষ ওভারে উইল ও’রোকের বলে ওই তিন বাউন্ডারিতে পূর্ণ হয় গ্রিনের শতরান। জশ হেইজেলউডকে নিয়ে দিনের শেষটাও নিরাপদে করে মাঠ ছাড়েন তিনি মাথা উঁচু করেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮৫ ওভারে ২৭৯/৯ (স্মিথ ৩১, খাওয়াজা ৩৩, লাবুশেন ১, গ্রিন ১০৩*, হেড ১,মার্শ ৪০, কেয়ারি ১০, স্টার্ক ৯, কামিন্স ১৬, লায়ন ৫, হেইজেলউড ০*; সাউদি ২০-৪-৬৮-০, হেনরি ২০-৭-৪৩-৪, ও’রোক ২০-৮-৫৯-২, কুগেলাইন ১৭-১-৫৬-২, মিচেল ৪-০-১৭-০, রাভিন্দ্রা ৪-০-১৯-১)।