তামিমের চোট নিয়ে আগে সঠিক তথ্য পাননি জানিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বললেন, অবহেলা না করা হলে হয়তো এই ওপেনার আগেই সুস্থ হয়ে যেতেন।
Published : 04 Aug 2023, 10:41 AM
তামিম ইকবালের পিঠের চোট নিয়ে আগে সঠিক তথ্য পাননি বলে দাবি করলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। পুরো প্রক্রিয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের অবহেলার ছাপও দেখতে পাচ্ছেন। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা হলে তামিমের চোট আগেই সেরে যেত বলে এখন মনে হচ্ছে তার কাছে। ভবিষ্যতে যাতে অন্য কোনো ক্রিকেটারকে এমন পরিস্থিতির শিকার হতে না হয়, এজন্য পুরো ব্যাপারটির তদন্তের প্রয়োজনীয়তা দেখছেন বিসিবি প্রধান।
গত নভেম্বরে ভারত সিরিজের আগে থেকে এই চোট নিয়ে ভুগছেন তামিম। পিঠের নিচের অংশের এই চোটের কারণে তখন ভারতের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিরিজে খেলতে পারেননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। পরে খেলতে পারেননি বিপিএলের শেষ অংশে। এরপর ইনজেকশন নিয়ে তিনটি সিরিজ খেললেও পরে আবার মাথাচাড়া দেয় সেই ব্যথা।
তামিমের এই চোট নিয়ে বিসিবি থেকে নানা সময় নানারকম কথা শোনা গেছে। বিসিবি কর্তারা, এমনকি স্বয়ং বিসিবি সভাপতিও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, স্ক্যান করে তামিমের কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। দেশের সফলতম ব্যাটসম্যানের চোট নিয়ে তাই নানারকম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। আদৌ তার কোনো সমস্যা আছে কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে কিছু সংবাদমাধ্যমে।
গত মাসে দুবাই যাওয়ার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আরও অনেক কিছু বলার পাশাপাশি তামিম জানান, জিম সেশনে তাকে এমন একটি ট্রেনিং করতে দেওয়া হয়েছিল, যেটির প্রভাবেই তার পিঠের ব্যথা আবার ফিরে এসেছে।
তামিমের সেই কথার প্রেক্ষিতে আবারও তার চোট নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেন বিসিবি সভাপতি। সেই সময় দুবাইয়ে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে থাকা তামিম সেদিনই পিঠের স্ক্যান রিপোর্ট পাঠিয়ে দেন বিসিবি সভাপতিকে। যে রিপোর্টে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, তার পিঠের নিচের অংশের ডিস্কে এল ফোর ও এল ফাইভে ক্ষয় ধরেছে কিছুটা।
বিসিবি সভাপতির দাবি, তখনই কেবল তামিমের সমস্যার কথা তিনি জানতে পারেন। এর আগে যারা তাকে জানিয়েছে, তাদের কারও কাছ থেকে এমন কোনো তথ্য তিনি পাননি।
“তামিম কিন্তু ঢাকাতেও এমআরআই স্ক্যান যা যা করার, এগুলো সব করেছে। আমার জানা মতে, ভারতে করেছে, ব্যাংককে করেছে। লন্ডনেও একবার গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে এসেছে নিজে থেকে। অনেকবারই করা হয়েছে এমআরআই। এবারই প্রথম, দুবাই থেকে ও আমাকে একটা রিপোর্ট পাঠায়। এই রিপোর্টে আমি প্রথমবার দেখি যে, ওর একটা সমস্যা আছে। দেখার পরপরই আমি ওকে বলেছি, ‘তুমি দেবাশিষসহ (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) আমাকে একটা কনফারেন্স কল করো। আমাকে কেন এ কথা বলা হয়নি?”
নাজমুল হাসানকে তখন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বা যারা তাকে ভুল তথ্য দিয়েছেন এতদিন, তাদের কাছে কি কারণটা জিজ্ঞেস করা হয়েছে? বিসিবি সভাপতি তখন কিছুটা বিব্রত হয়ে উত্তর খুঁজতে থাকেন। পাশ থেকে তখন তামিম যোগ করেন আরও বিস্তারিত।
“আমার যে সমস্যা সেটা গত বছরের নভেম্বর থেকেই ছিল। কিন্তু পাপন ভাইয়ের কথা হলো যে, উনাকেও তো একজন এসব জানায়… কিন্তু এটা জানায়নি ( যে সমস্যা ধরা পড়েছে)। আমি তো উনাকে আগে (রিপোর্ট) পাঠাইনি। উনাকে যখন প্রথমবার রিপোর্ট পাঠাই, উনি সাথে সাথে আমাকে ফোন করে বলছেন যে, ‘এ কথা আমাকে জানানো হয়নি কেন এতদিন! এটা তুমি জিজ্ঞেস করবে এবং আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে দেবে।”
“যাই হোক, এটা নিয়ে আজকে আমরা অনেক আলোচনা করেছি। এটা কারও সঙ্গেই হওয়া উচিত নয়। আমরা যদি ওপেন থাকি অনেক সময়, তাহলে এই সমস্যাগুলো হয় না। এখন আমরা খুবই পরিষ্কার যে, গত ছয় মাসে কী হয়েছে।”
বিসিবি সভাপতি পরে আশ্বাস দিলেন, এই ঘটনার তদন্ত করা হবে। তিনি নিজেই বললেন, অবহেলা না করা হলে হয়তো এতদিনে সুস্থ হয়ে উঠতেন তামিম।
“আমার তো মেজাজই গরম হয়ে গেল ওর (তামিম) কাছ থেকে শোনার পর এবং রিপোর্ট দেখার পর। আমি মনে করি, এই ব্যাপারটা আমাদের আরও তদন্ত করে বের করা দরকার যে, এই জিনিসটাকে যেভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে, আর বাস্তবে যা হয়েছে, এটার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। এটা যাতে ভবিষ্যতে আর কারও সঙ্গে না হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। জালাল ভাইয়ের (বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান) সঙ্গেই বসব, এটা আমাদের বের করতে হবে।”
“এমনটা হওয়ার কথা নয়। এটা যদি ২০২২-এ হয়ে থাকে, তাহলে এতদিনে ভাল হয়ে যাওয়ার কথা, যদি উপযুক্ত চিকিৎসা করা হতো। নিশ্চয়ই কোনো না কোনোভাবে অবহেলা করা হয়েছে জিনিসটাকে, এজন্যই আজকে এতদিন পরে এসে, বিশ্বকাপের ঠিক দ্বারপ্রান্তে এসে আমাদেরকে এটা শুনতে হচ্ছে। এটা যদি আগে জানতাম, আগে থেকেই যদি চিকিৎসা করা হতো, তাহলে ভালো হতো আমার মনে হয়।”
এই ব্যথা কমাতে সম্প্রতি লন্ডন থেকে দুই দফায় ইনজেকশন নিয়ে এসেছেন তামিম। আগামী সপ্তাহ থেকে ধীরে ধীরে তার মাঠে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার জন্য এই মাসে এশিয়া কাপে তিনি খেলবেন না। এশিয়া কাপের পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে তিনি মাঠে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।