চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে নবাগত ঢাকার দুর্দান্ত শুরু

উদ্বোধনী ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৫ উইকেটে হারাল নবাগত দল দুর্দান্ত ঢাকা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Jan 2024, 12:14 PM
Updated : 19 Jan 2024, 12:14 PM

চার বলে প্রয়োজন ৩ রান। আগের বলে উইকেট নেওয়া উজ্জীবিত মুস্তাফিজুর রহমানের সামনে মাত্রই ব্যাটিংয়ে নামা চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিতে দূর থেকেই ব্যাট চালিয়ে দিলেন চাতুরাঙ্গা। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বল চলে গেল সীমানার বাইরে। নিজেদের নামের মতোই দারুণ ক্রিকেট খেলে জয় দিয়ে আসর শুরু করল দুর্দান্ত ঢাকা।

বিপিএলের দশম আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৫ উইকেটে হারাল ঢাকা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ১৪৩ রান তিন বল হাতে রেখেই টপকে গেল আসরের নবাগত দলটি।

ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকে কুমিল্লাকে দেড়শর আগে আটকে রাখেন শরিফুল ইসলাম। পরে রান তাড়ায় পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ঢাকার কাজ সহজ করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। শেষ দিকে ইরফান শুক্কুরের ক্যামিওতে জয় পায় ঢাকা। 

ছুটির দিন হওয়ায় ম্যাচের শুরু থেকেই গ্যালারিতে দেখা যায় দর্শকের জোয়ার। খেলার শুরুর অংশে তাদের বেশিরভাগ গলা ফাটান কুমিল্লার পক্ষে। তবে ম্যাচ যত সামনে এগোয় ততই বাড়তে থাকে ঢাকার সমর্থন। চাতুরাঙ্গার শেষ ছক্কায় পুরো গ্যালারিই যেন উল্লাসে মাতে ঢাকার পক্ষে।

ঢাকার জয়ের দিন গত আসরের মতো এবারও হার দিয়ে যাত্রা শুরু করল কুমিল্লা। গত বছর টানা তিন ম্যাচ হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। চমৎকার প্রত্যাবর্তনে শেষ পর্যন্ত শিরোপার হ্যাটট্রিক করে তারা।

এবারের আসর শুরুর আগে অধিনায়কত্ব হারিয়ে প্রথম ম্যাচেই প্রায় দুই বছর ফিফটির দেখা পান ইমরুল কায়েস। কিন্তু বড় হয়নি কুমিল্লার সংগ্রহ। শরিফুল ৩টি ও তাসকিন আহমেদ ২ উইকেট নিয়ে চ্যাম্পিয়নদেরকে নাগালের মধ্যেই রাখেন। 

রান তাড়ায় দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন নাঈম। মুশফিক হাসানের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে নেন ১৯ রান। পরে তানভির ইসলাম, রোস্টন চেইসদের ছক্কায় উড়িয়ে পাওয়ার প্লেতে ৫৬ রান তোলে ঢাকা। যেখানে অনেকটা দর্শকের ভূমিকায়ই থাকেন আরেক ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা।

প্রথম ছয় ওভারে স্রেফ ২৩ বলে ৪০ রান করে ফেলেন নাঈম। এরপর খোলসে ঢুকে যান বাঁহাতি ওপেনার। তিনটি করে চার-ছক্কায় পঞ্চাশ পূর্ণ করতে তিনি খেলেন ৩৮ বল। বিপিএলে এটি তার তৃতীয় ফিফটি।

ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটিতে তার সবশেষ ফিফটি ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। রংপুর রেঞ্জার্সের জার্সি গায়ে সেদিন রাজশাহী রয়্যালসের বিপক্ষে তিনি করেন ৪৭ বলে ৫৫ রান। এরপর প্রায় চার বছর ও ২৪ ইনিংস পর আবার পঞ্চাশের দেখা পেলেন ২৪ বছর বয়সী ওপেনার। 

ফিফটি ছোঁয়ার পরপরই থামেন নাঈম। ত্রয়োদশ ওভারে তানভিরের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফ সীমানার অনেক ভেতরে ধরা পড়েন ৪০ বলে ৫২ রান করা ব্যাটসম্যান। তার বিদায়ে ভাঙে ১০১ রানের উদ্বোধনী জুটি। 

এরপর পঞ্চাশের পথে এগোতে থাকেন গুনাথিলাকা। কিন্তু সেটি ছুঁতে পারেননি লঙ্কান ওপেনার। তানভিরের স্লোয়ারে ডিপ মিড উইকেটে জাকের আলির হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৪২ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪১ রান।

দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমানোর আভাস দেয় কুমিল্লা। শেষ দুই ওভারে ১৩ রানের সমীকরণে প্রথম চার বলে স্রেফ ২ রান দিয়ে সাইফ হাসানের উইকেট নেন খুশদিল শাহ। তবে শেষ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ ঢাকার দিকেই রাখেন ইরফান।

শেষ ওভারে চেইসের দারুণ ক্যাচে ফেরেন ১৬ বলে ২৪ রান করা ইরফান। তবে এতে ঢাকার জয়ে কোন সমস্যা হয়নি।

দিনের প্রথমভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে মন্থর শুরু করে কুমিল্লা। প্রথম তিন ওভারে আসে স্রেফ ১৩ রান। চতুর্থ ওভারে চাতুরাঙ্গার প্রথম বলে প্রথম ছক্কা মারেন লিটন দাস, দুই বল পর পান বাউন্ডারির দেখা। শেষ বলে তিনি ধরা পড়েন ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। ১৬ বলে লিটন করেন ১৩ রান।

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তাসকিনের বলে ১৫ রান নেয় কুমিল্লা। ওভারের প্রথম বলে চার মারেন তাওহিদ হৃদয়, চতুর্থ বলে দারুণ পুল শটে ছক্কা মারেন ইমরুল। ছয় ওভারে কুমিল্লার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪৪ রান।

এরপর রানের গতি বাড়াতে পারেননি ইমরুল ও হৃদয়। অষ্টম ওভারে উসমান কাদিরের বলে ক্যাচ ওঠান ইমরুল। শর্ট মিড অফে তা নিতে ব্যর্থ হন ঢাকার অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। ২৩ রানে বেঁচে যান ইমরুল।

জীবন পেয়ে ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ৪২ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন কুমিল্লার সাবেক অধিনায়ক। বিপিএলে এটি তার একাদশ ফিফটি। 

ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটিতে প্রায় দুই বছর ও ১৮ ইনিংস পর আবার ফিফটি করলেন ইমরুল। এর আগে তার সবশেষ ফিফটি ছিল ২০২২ সালের আসরে, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে।

পঞ্চদশ ওভারে শতরান পূর্ণ করে কুমিল্লা। দ্বিতীয় উইকেটে ইমরুল-হৃদয়ের জুটির একশ হয় ৮১ বলে। উনিশতম ওভারে হৃদয়কে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন। ১ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ বলে ৪৭ রান করেন হৃদয়। ৫২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৬ রান করা ইমরুলকে ওভারের শেষ বলে থামান তাসকিন।

ইনিংসের শেষ ওভারে প্রথম তিন বলে খুশদিলের ব্যাটে দুটি ছক্কা হজম করেন শরিফুল। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ তিন বলে হ্যাটট্রিক করেন তরুণ বাঁহাতি পেসার। পরপর আউট করেন খুশদিল, চেইস ও মাহিদুল ইসলামকে।

টুর্নামেন্টের ইতিহাসে হ্যাটট্রিক করা সপ্তম বোলার শরিফুল। বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটিতে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। কুমিল্লার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা প্রথম বোলার ২২ বছর বয়সী এই পেসার।

তাসকিন-শরিফুলের দারুণ ডেথ বোলিংয়ে শেষ দুই ওভারে স্রেফ ১৫ রানে ৫ উইকেট হারায় কুমিল্লা। দেড়শর আগেই থেমে যায় তারা। যা শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট হয়নি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ২০ ওভারে ১৪৩/৬ (লিটন ১৩, ইমরুল ৬৬, হৃদয় ৪৭, খুশদিল ১৩, জাকের ০*, চেইস ০, মাহিদুল ০; তাসকিন ৪-০-৩০-২, শরিফুল ৪-০-২৭-৩, আরাফাত ৪-০-২৫-০, চাতুরাঙ্গা ৩-০-২২-১, উসমান ৪-০-২৮-০, গুনাথিলাকা ১-০-৯-০)

দুর্দান্ত ঢাকা: ১৯.৩ ওভারে ১৪৭/৫ (গুনাথিলাকা ৪১, নাঈম ৫২, ক্রসপুল ৫, ইরফান ২৪, সাইফ ৭, মোসাদ্দেক ১*, চাতুরাঙ্গা ৬*; ফোর্ড ৪-০-২৫-০, মুশফিক ১-০-১৯-০, চেইস ৪-০-১৮-০, তানভির ৪-০-২৭-২, মুস্তাফিজ ৩.৩-০-৩১-২, হৃদয় ১-০-৪-০, খুশদিল ২-০-১২-১)

ফল: দুর্দান্ত ঢাকা ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শরিফুল ইসলাম