মাশরাফির রেকর্ডগড়া বোলিংয়ে মোহামেডানকে উড়িয়ে দিয়েছে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
Published : 27 Mar 2023, 07:03 PM
নিজের তৃতীয় ওভারে প্রথম শিকার ধরলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। পরের তিন ওভারে নিলেন আরও তিনটি। তার ছোট্ট রান আপের জেন্টল মিডিয়াম পেস খেলার কোনো উপায়ই যেন খুঁজে পেল না মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যাটসম্যানরা। রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে একশর আগে গুঁড়িয়ে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের জয়ের নায়ক তিনিই।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সোমবার ১০ উইকেটে জিতেছে রূপগঞ্জ। এবারের আসরে এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জিতল তারা।
মোহামেডানকে স্রেফ ৮০ রানে গুটিয়ে রূপগঞ্জ লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৫০ বলেই। দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যা দ্বিতীয় দ্রুততম জয়। ২০০২ সালে জাতীয় লিগের ওয়ানডে সংস্করণে চট্টগ্রাম বিভাগের ৩০ রান ৩৩ বলেই পেরিয়ে গিয়েছিল সিলেট বিভাগ।
রূপগঞ্জের জয়ের কারিগর মাশরাফি ১৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি এখন তার।
বিকেএসপিতে এদিন ৩৯ বছর ১৭৩ দিন বয়সে এই রেকর্ড গড়েন মাশরাফি। এতে পেছনে পড়ে যায় গত মার্চে মোহামেডানের বিপক্ষেই ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে ৩৭ বছর ২৫৮ দিন বয়সে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেওয়া ২৩ রানে ৫ উইকেট।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান শিবিরে প্রথম ওভারেই ছোবল দেন ভারতীয় অলরাউন্ডার চিরাগ জানি। শূন্য রানে ফেরান মাহিদুল ইসলামকে। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৮ চারে ২৬ বলে ৪১ রান করা সৌম্য সরকার কট বিহাইন্ড হন সোহাগ গাজীর স্পিনে।
এরপর টানা চার ওভারে আঘাত হানেন মাশরাফি। মূলত তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে পুরোপুরি দিক হারিয়ে ফেলে মোহামডোন। তার কাটার বুঝতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে স্টাম্প হারান ইমরুল কায়েস। বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন ভারতের অনুষ্টুপ মজুমদার আর পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন শুভাগত হন। ইনিংসের সপ্তদশ ওভারে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন এনামুল হক জুনিয়র।
শুভাগতকে ফিরিয়ে দেশের প্রথম বোলার হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৪৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন মাশরাফি।
তার বিষাক্ত ছোবলের মাঝে মাহমুদউল্লাহকে দ্রুত বিদায় করেন নাঈম ইসলাম জুনিয়র। স্লিপে চমৎকার ক্যাচ নিয়ে এই উইকেটেও অবদান রাখেন মাশরাফি।
সৈয়দ খালেদ আহমেদকে ফিরিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের সপ্তম পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মাশরাফি।
রান তাড়ায় শুরু থেকে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেন পারভেজ হোসেন। দ্রুত রান তোলেন মুনিম শাহরিয়ারও। তাদের অবিচ্ছিন্ন বিস্ফোরক উদ্বোধনী জুটিতে জয় তুলে নেয় রূপগঞ্জ।
১ ছক্কা ও ৪টি চারে ২৯ বলে ৩০ রান করেন মুনিম। চারটি করে ছক্কা-চারে ২১ বলে ৪৪ রান করেন পারভেজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ২২.৪ ওভারে ৮০ (ইমরুল ১১, মাহিদুল ০, সৌম্য ৪১, অনুষ্টুপ ৭, মাহমুদউল্লাহ ২, আরিফুল ৪, শুভাগত ৩, এনামুল জুনি. ০, খালেদ ৪, কামরুল ৬, নাজমুল ০*; চিরাগ ৪-০-২০-২, আল আমিন ২-০-১৪-০, সোহাগ ৩-১-১৬-১, মাশরাফি ৮.৪-৩-১৭-৫, নাঈম জুনি. ৫-১-১৩-২)
লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ৮.২ ওভারে ৮৪/০ (মুনিম ৩০*, পারভেজ ৪৪*; নাজমুল ৩-০-১৯-০, খালেদ ১-০-১৫-০, এনামুল জুনি. ২-০-১৯-০, কামরুল ১.২-০-১৩-০, ইমরুল ১-০-১৮-০)
ফল: লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১০ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা
রবির ‘প্রথম’ সেঞ্চুরিতে তামিম-মুশফিকদের হারাল গাজী গ্রুপ
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ার তামিম ইকবাল পারলেন না কিছু করতে। মুশফিকুর রহিমের ফিফটি ও ইয়াসির আলি চৌধুরির কার্যকর ইনিংসে কোনোমতে দুইশ ছাড়াল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। পরে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারলেন না দলটির বোলাররাও। রবি তেজার চমৎকার সেঞ্চুরিতে অনায়াসে জিতল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
ফতুল্লায় গাজী গ্রুপের জয় ৫ উইকেটে। প্রতিপক্ষকে ২০৪ রানে গুটিয়ে তারা লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ৬৪ বল বাকি থাকতে।
গাজী গ্রুপের জয়ের নায়ক রবি পাঁচটি করে ছক্কা-চারে খেলেন ১০১ রানের ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের ২৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এই প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান।
প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ৬ চারে ৭৪ রান করেন মুশফিক। ১ ছক্কা ও ৩ চারে ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা প্রাইম ব্যাংক নিয়মিত বিরতিতে হারায় উইকেট। দুই ওপেনার শাহাদাত দিপু (১৬) ও তামিমকে (১৫) বিদায় করেন এনামুল হক। মোহাম্মদ মিঠুন করেন কেবল ১ রান।
কিছুক্ষণ উইকেটে কাটিয়ে ২৫ রান করে বিদায় নেন নাসির হোসেন। দুই অঙ্কে যেতে পারেননি পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান আদিল আমিন।
১০০ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মুশফিক ও ইয়াসির। দুইজনে গড়েন ৯৫ রানের জুটি। তবে ৯ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় প্রাইম ব্যাংক।
জবাবে ইনিংসের প্রথম বলেই মেহেদি মারুফকে হারায় গাজী গ্রুপ। আরেক ওপেনার হাবিবুর রহমানও পারেননি বড় ইনিংস খেলতে। ২৬ রানে ২ হারানো দলকে পথে রাখেন মাহমুদুল হাসান ও রবি।
তাদের ১৪৪ রানের জুটিতে জয়ের ভিত পেয়ে যায় গাজী গ্রুপ। এরপর ৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় দলটি। ৫ চারে ৪৫ রান করে ফেরেন মাহমুদুল। ৮৯ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রেখে বিদায় নেন রবি।
তবে কোনো বিপদ হতে দেননি আকবর আলি ও এনামুল। বাকি পথ নিরাপদেই পাড়ি দেন তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.৪ ওভারে ২০৪ (শাহাদাত ১৬, তামিম ১৫, মিঠুন ১, নাসির ২৫, মুশফিক ৭৪, আদিল ৮, ইয়াসির ৪৮, কাপালী ০, তাইজুল ০, রাজা ৩*, রুবেল ২; এনামুল ১০-০-৩৪-২, সুমন ৬-০-৪৫-০, হুসনা হাবিব ১০-১-৩৫-২, নিহাদ ১০-০-৩৬-৩, অনিক ৭.৪-০-৩৭-২, মাহমুদুল ৩-০-১৪-০)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৩৯.২ ওভারে ২০৮/৫ (মারুফ ০, হাবিবুর ১৫, মাহমুদুল ৪৫, রবি ১০১, আকবর ৫*, মেহেরব ৬, এনামুল ২৫*; তাইজুল ১০-০-৩৬-৩, রুবেল ৮-০-৪৯-১, কাপালী ৬-০-৩৩-১, রাজা ৫-০-৩৬-০, নাসির ৫-০-২৬-০, আদিল ৫.২-০-২৩-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রবি তেজা
ফজলে মাহমুদের অপরাজিত ৯১
সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে একাই লড়লেন ফজলে মাহমুদ। তার অপরাজিত নব্বই ছাড়ানো ইনিংসে দুইশর কাছাকাছি গেল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সংগ্রহ। এই রানই অবশ্য জয়ের জন্য যথেষ্ট করে তুললেন দলটির বোলাররা। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে দেড়শর আগে গুঁড়িয়ে জয় তুলে নিল শিরোপাধারীরা।
বিকেএসপিতে শেখ জামালের জয় ৫৫ রানে। ১৯৬ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে তারা গুটিয়ে দেয় স্রেফ ১৪১ রানে।
টানা পাঁচ জয়ে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে নুরুল হাসানের দল।
শেখ জামালের জয়ে বড় অবদান রেখে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন ফজলে মাহমুদ। ৩ ছক্কা ও ৪টি চারে ১০৮ বলে ৯১ রান করেন তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা শেখ জামালকে শুরুতে চেপে ধরেন মেহেদি রানা ও ফরহাদ রেজা। তাদের ছোবলে ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কাঁপতে থাকে দলটি।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত ধরে রাখেন ফজলে মাহমুদ। ছোট ছোট ইনিংসে তাকে সঙ্গে দেন পারভেজ রাসুল, জিয়াউর রহমান, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরি। এতে ১৯৬ রান পর্যন্ত যেতে পারে দলটি।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম বলে খালিদ হাসানকে হারায় শাইনপুকুর। পরের চার ব্যাটসম্যানই করেন ভালো শুরু; কিন্তু কেউই খেলতে পারেননি বড় ইনিংস।
তাদের প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই যায় দুই অঙ্কে। ইনিংসে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন দুই জন, শামসুর রহমান ও ফরহাদ রেজা।
শেখ জামালের বোলারদের প্রায় প্রত্যেকেই রাখেন অবদান। ৮ ওভারে ২ মেডেনসহ স্রেফ ৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার রাসুল। দুটি করে প্রাপ্তি ইবাদত হোসেন, আরিফ আহমেদ ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ১৯৬/৯ (সাইফ ১, সৈকত ১১, রবিউল ৩, ফজলে ৯১*, সোহান ৫, তাইবুর ২, রাসুল ১৫, জিয়াউর ২৭, মৃত্যুঞ্জয় ১৯, আরিফ ৯, ইবাদত ১*; মেহেদি রানা ১০-২-৩১-৩, রেজা ১০-১-২৮-২, মাসুম ৮-০-৩৯-১, মুরাদ ৯-১-৪৬-২, নাবিল ৮-০-২৯-১, শামসুর ৫-০-২০-০)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪১.৫ ওভারে ১৪১ (খালিদ ০, শামসুর ২৯, প্রিয়াঙ্ক ১৪, অমিত ২১, আমিনুল ২২, সাজ্জাদুল ৮, রেজা ২৯, মাসুম ০, মেহেদি রানা ১, মুরাদ ৬*, নাবিল ০; ইবাদত ৬-০-৩১-২, জিয়াউর ২-০-৯-০, আরিফ ১০-২-২০-২, তাইবুর ৪.৫-০-৩০-১, রাসুল ৮-২-৯-২, মৃত্যুঞ্জয় ৮-০-৩১-২, সাইফ ৩-০-১০-১)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৫৫ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফজলে মাহমুদ