ফিঞ্চের বিদায়ী ম্যাচে স্মিথের সেঞ্চুরি

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২৫ রানে জিতে নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল অস্ট্রেলিয়া।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Sept 2022, 12:51 PM
Updated : 11 Sept 2022, 12:51 PM

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষটা রাঙাতে পারলেন না অ্যারন ফিঞ্চ। তবে অধিনায়কের বিদায়ী ম্যাচ জয় দিয়ে স্মরণীয় করে রাখলেন সতীর্থরা। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে চমৎকার এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন স্টিভেন স্মিথ। কার্যকর ইনিংস খেললেন মার্নাস লাবুশেন ও অ্যালেক্স কেয়ারি। পরে বোলারদের নৈপুণ্যে নিউ জিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল অস্ট্রেলিয়া।

কেয়ার্নসে রোববার তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ২৫ রানে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ২৬৭ রানের পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে ২৪২ রানে থামিয়ে দিয়েছে তারা।

অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত একবারও ওয়ানডে সিরিজ জেতেনি নিউ জিল্যান্ড। গত এক যুগের বেশি সময় ধরে তো সেখানে স্বাগতিকদের বিপক্ষে কোনো ওয়ানডে ম্যাচই জিততে পারেনি তারা। এই নিয়ে হারল টানা ১০ ম্যাচ। সবশেষ ওয়ানডে জিতেছিল ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

এবার অবশ্য সুযোগ ছিল তাদের সেই খরা কাটানোর। কিন্তু বারবার ব্যাটিং ব্যর্থতায় তিন ম্যাচের সিরিজে একটিও জিততে পারল না তারা।

কিউইদের বিপক্ষে এবারের জয়ে নায়ক স্মিথ। ক্যারিয়ারের দ্বাদশ ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান খেলেন ১০৫ রানের ইনিংস। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১৩১ বলের ইনিংস সাজিয়ে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

এই শতকের সুবাদে একটি কীর্তিও গড়েন স্মিথ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির তালিকায় তিন নম্বরে ম্যাথু হেইডেনের সঙ্গী তিনি, দুজনেরই ৪০টি করে। তাদের ওপরে আছেন ডেভিড ওয়ার্নার (৪৩) ও রিকি পন্টিং (৭১)।

তিন ম্যাচে একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে সর্বোচ্চ ১৬৭ রান করে সিরিজ সেরাও স্মিথ।

স্মিথের সঙ্গে শতরানের জুটিতে ২ চারে ৫২ রান করেন লাবুশেন। ৩ চারে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন কেয়ারি। নিজের শেষ ওয়ানডেতে ফিঞ্চ করেন স্রেফ ৫ রান।

রান তাড়ায় নিউ জিল্যান্ডের ৮ ব্যাটসম্যানই যান দুই অঙ্কে। কিন্তু খেলতে পারেননি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন গ্লেন ফিলিপস।

খেলা শুরুর আগে প্রয়াত ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শ্রদ্ধায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

চতুর্থ ওভারেই উইকেট হারাতে পারত টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নারের বিশ্রামে সুযোগ পাওয়া জশ ইংলিসের ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি পয়েন্টে থাকা ফিলিপস, উল্টো হয় চার।

টিম সাউদির বলে শূন্য রানে জীবন পাওয়া ইংলিস অবশ্য সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। পরের ওভারে ট্রেন্ট বোল্ট তাকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান।

সতীর্থদের ‘গার্ড অব অনার’-এর মধ্য দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা ফিঞ্চ এদিনও হন ব্যর্থ। সাউদির ফুল লেংথ বলের লাইন মিস করেন তিনি। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে।

ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে ছন্দে না থাকা ফিঞ্চ শনিবার জানিয়ে দেন এই ম্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার কথা। চলতি বছর এই সংস্করণে ১৪ ম্যাচে মাত্র একটি ফিফটি করতে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়া ওপেনার। সবশেষ ৮ ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে পেরেছেন স্রেফ একবার।

১৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপদে পড়া অস্ট্রেলিয়াকে টানেন স্মিথ ও লাবুশেন। বেশ সাবধানী ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান দুইজন। প্রথম ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার করে ২ উইকেটে ১৯ রান।

স্মিথের রান একটা সময় ছিল ২৯ বলে ৬, লাবুশেনের ৩২ বলে ৭। এতোটাই মন্থর ছিল তাদের রান তোলার গতি। তাদের জুটিতে ৩০তম ওভারে একশ স্পর্শ করে অস্ট্রেলিয়ার রান।

৮১ বলে ফিফটিতে পা রাখেন স্মিথ। ৬২তম বলে প্রথম বাউন্ডারি মারা লাবুশেনের পঞ্চাশ আসে ৭৫ বলে। যখন আক্রমণ করার সময়, তখন ফিরে যান লাবুশেন। লকি ফার্গুসনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল পুল করে মিড-অনে ধরা পড়েন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ভাঙে ১৬৯ বল স্থায়ী ১১৮ রানের জুটি।

কেয়ারিকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন স্মিথ। দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন দুইজন। ১২৭ বলে তিন অঙ্কে পা রাখেন স্মিথ, ওয়ানডেতে যা তার মন্থরতম।

প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেলেন তিনি। সবশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০২০ সালের নভেম্বরে, ভারতের বিপক্ষে।

সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পরের ওভারেই স্মিথকে বোল্ড করে দেন মিচেল স্যান্টনার। কেন উইলিয়ামসনের হাতে ১১ রানে জীবন পেয়েও বেশিদূর যেতে পারেননি গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

শেষ দিকে দুটি করে ছক্কা চারে ১২ বলে ২৫ রান করেন ক্যামেরন গ্রিন।

জবাবে শুরুটা ভালোই করে ফিন অ্যালেন ও ডেভন কনওয়ে। তাদের ৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে নবম ওভারে। ৫ চারে ২১ রান করে কনওয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন শন অ্যাবটের বলে।

দুই ওভার পর বিদায় নেন ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৫ রান করা অ্যালেনও। টম ল্যাথাম, ড্যারিল মিচেল পারেননি টিকতে। অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে ২৭ রান করে রান আউট হন উইলিয়ামসন।

১১২ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ডকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নেন ফিলিপস ও জেমস নিশাম। দুইজনে গড়েন ৬১ রানের জুটি। ৫ চারে ৩৬ রান করা নিশাম বিদায় দেন গ্রিনের বলে লং-অনে ক্যাচ দিয়ে।

এরপর স্যান্টনারকে নিয়ে দলকে লড়াইয়ে রাখেন ফিলিপস। ২৭ বলে যখন ৪৪ রান চাই কিউইদের, ফাইন লেগে দারুণ ক্যাচে ফিলিপসকে থামান অ্যাবট।

পরের ওভারেই বিদায় নেন স্যান্টনার (৩০)। এরপর আর পেরে ওঠেনি নিউ জিল্যান্ড। ১৮ রানে শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৬৭/৫ (ইংলিস ১০, ফিঞ্চ ৫, স্মিথ ১০৫, লাবুশেন ৫২, কেয়ারি ৪২*, ম্যাক্সওয়েল ১৪, গ্রিন ২৫*; বোল্ট ১০-৪-২৫-২, সাউদি ১০-১-৫৭-১, ফার্গুসন ১০-০-৫৬-১, স্যান্টনার ১০-০-৫২-১, নিশাম ৮-০-৬৫-০, মিচেল ২-০-৭-০)

নিউ জিল্যান্ড: ৪৯.৫ ওভারে ২৪২ (অ্যালেন ৩৫, কনওয়ে ২১, উইলিয়ামসন ২৭, ল্যাথাম ১০, মিচেল ১৬, ফিলিপস ৪৭, নিশাম ৩৬, স্যান্টনার ৩০, সাউদি ৮*, ফার্গুসন ৪, বোল্ট ০; স্টার্ক ৯.৫-০-৬০-৩, হেইজেলউড ১০-০-৫১-১, গ্রিন ৬-০-২৫-২, অ্যাবট ১০-৩-৩১-২, জ্যাম্পা ১০-০-৫৩-১, ম্যাক্সওয়েল ৪-০-১৮-০)

ফল: অস্ট্রেলিয়া ২৫ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: স্টিভেন স্মিথ

সিরিজ: তিন ম্যাচের ৩-০ তে জয়ী অস্ট্রেলিয়া

ম্যান অব দা সিরিজ: স্টিভেন স্মিথ