পাথিরানাকে লাল বলের ক্রিকেটের ধারেকাছে দেখতে চান না ধোনি

মালিঙ্গার উত্তরসূরী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই তরুণ ফাস্ট বোলারকে সতর্কভাবে সামলাতে পারলে শ্রীলঙ্কার জন্য বড় সম্পদ হতে পারেন বলে মনে করেন ভারতীয় কিংবদন্তি মহেন্দ্র সিং ধোনি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 May 2023, 07:06 AM
Updated : 7 May 2023, 07:06 AM

দর্শনদারিতে মিল খুব একটা নেই। লাসিথ মালিঙ্গার মতো বাহারি চুল নেই মাথিশা পাথিরানার, শরীরও এখনও শক্তপোক্ত নয়। তবে মিল আছে বোলিং অ্যাকশন, ধরন আর কার্যকারিতায়। মালিঙ্গার উত্তরসূরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি তো বেশ আগেই। এবার মালিঙ্গার সঙ্গে আরেকটি জায়গায়ও পাথিরানার মিল দেখতে চান মহেন্দ্র সিং ধোনি। চেন্নাই সুপার কিংস অধিনায়ক ও ভারতীয় এই কিংবদিন্তর পরামর্শ, পাথিরানাকে যেন লাল বলের ক্রিকেটে খেলানোর চিন্তাও না করা হয়। 

স্বীকৃত ক্রিকেট মালিঙ্গার শুরুটা যদিও ছিল প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট দিয়ে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুও হয়েছিল তার টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে। পরে চোট জর্জর ক্যারিয়ারে একসময় টেস্ট ছেড়ে শুধু সীমিত ওভারের স্পেশালিস্ট হয়ে ওঠেন তিনি। ক্যারিয়ারের শেষ ১০ বছরে টেস্ট খেলেননি। চোটাঘাত থেকে বাঁচাতেই পাথিরানাকে লাল বলের ক্রিকেট থেকে দূরে রাখতে বললেন লঙ্কান এই পেসারের আইপিএল অধিনায়ক ধোনি। 

মালিঙ্গার মতো ‘স্লিঙ্গিং’ অ্যাকশন দিয়েই শুরুতে শ্রীলঙ্কার স্কুল ক্রিকেট নজর কাড়েন পাথিরানা। পরে নানা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। পরে নানা ধাপ পেরিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটেও এগিয়ে চলেন। গত বছর আইপিএলের নিলামে যদিও অবিক্রিত রয়ে যান তিনি। তবে চোট নিয়ে অ্যডাম মিল্ন ছিটকে যাওয়ার পর বদলি হিসেবে তাকে দলে নেয় চেন্নাই সুপার কিংস। 

আইপিএলের গত মৌসুমে চেন্নাইয়ের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলে দুটি উইকেট পান। গত অগাস্টে শ্রীলঙ্কার হয়ে তার অভিষেক হয় টি-টোয়েন্টিতে। এবার আইপিএলে তিনি খেলছেন চেন্নাইয়ের হয়ে। ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে ২০ বছর বয়সী পেসার দারুণভাবে নজর কেড়েছেন চলতি আসরে। 

চেন্নাইয়ের হয়ে এবার এখনও পর্যন্ত ৭ ম্যাচ খেলে তার শিকার ১০ উইকেট। এই সবকটি উইকেটই নিয়েছেন তিনি শেষের ওভারগুলোয় (১৭-২০ ওভার)। চার ম্যাচ না খেলেও ডেথ ওভারে আসরের সফলতম বোলার এখন তিনিই। টুর্নামেন্টে নিজের ২৭.২ ওভারের মধ্যে স্রেফ চারটি তিনি করেছেন ১২ ওভারের আগে। শেষ দিকে নিয়মিত বোলিংয়ের পরও ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন স্রেফ ৭.৬০। 

নিজের সেরাটা তিনি দেখিয়েছেন শনিবার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ম্যাচে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছে ম্যাচ সেরা। 

মালিঙ্গার মতো স্লিঙ্গিং অ্যাকশনের বোলার হলেও পাথিরানা বল ছাড়েন মালিঙ্গার চেয়েও আর নিচ থেকে। এমনকি আরেক লঙ্কান স্লিঙ্গিং পেসার নুয়ান তুষারার চেয়েও নিচে থেকে বল ছাড়েন। গতিও তার শুরুর সময়ের মালিঙ্গার মতোই। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচে ১৪৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটারও স্পর্শ করেছে তার গতি। এত নিচু রিলিজ পয়েন্টের সঙ্গে এতটা গতি মিলিয়ে পাথিরানাকে খেলা খুবই কঠিন। 

অ্যাকশন আর গতি মিলিয়ে চেন্নাইয়েও তিনি হয়ে উঠেছেন সতীর্থদের জন্য আতঙ্ক। চেন্নাইয়ের নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে তো সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, নেটে পাথিরানার বল তিনি খেলেন না। আরেক ব্যাটসম্যান রুতুরাজ গায়কোয়াড় বলেছেন, দুই মৌসুম মিলিয়ে নেটে পাথিরানার স্রেফ ১০-১২টি বল খেলেছেন তিনি। 

শুধু অ্যাকশন আর গতিই নয়, তার স্কিলও আছে যথেষ্ঠ। ইয়র্কার করেন দুর্দান্ত, স্লোয়ার ডেলিভারি দারুণ। সুইং করাতে পারেন। সব মিলিয়ে বৈচিত্র কম নেই। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে পাথিরানার এই সব বিশেষত্বই তুলে ধরলেন চেন্নাই অধিনায়ক ধোনি। 

“যাদের বোলিং অ্যাকশন খুব প্রথাগত নয়, তাদেরকে পড়তে পারা ব্যাটসম্যানদের জন্য সবসময়ই কঠিন। এই সংস্করণে, যেখানে বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে হয়, সেখানে ব্যাটসম্যানদের কাজটা আরও কঠিন হয়ে ওঠে।” 

“এটা তো স্রেফ অ্যাকশনের কথা। তার গতির কথা তো বলছিই না, সঙ্গে বৈচিত্র ও ধারাবাহিকতা তো আছেই। সব কিছু মিলিয়েই সে স্পেশাল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এটা খেয়াল রাখা যে, কী পরিমাণ ক্রিকেট সে খেলছে।” 

ম্যাচ খেলানোর ক্ষেত্রেই ধোনি বললেন বড় দৈর্ঘের ক্রিকেট থেকে তাকে দূরে রাখার কথা। এমনকি ৫০ ওভারের ক্রিকেটেও এই পেসারকে স্রেফ আইসিসি টুর্নামেন্টে দেখতে চান তিনটি আইসিসি ট্রফিজয়ী ভারতীয় অধিনায়ক। 

“ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সে এমন একজন নয়, যার লাল বলের ক্রিকেটে অনেক খেলা উচিত। আমার মনে হয়, তার লাল বলের ক্রিকেটের ধারেকাছে যাওয়া উচিত নয়। এমনকি সাদা বলের ক্রিকেটেও, ৫০ ওভারের ক্রিকেটে, যতটা কম সম্ভব খেলা উচিত তার।” 

“তার উচিত শুধু বড় বড় আইসিসি টুর্নামেন্টেই (৫০ ওভারের ক্রিকেটে) খেলা। কারণ সে এমন একজন, যে খুব একটা বদলাবে না। এই ম্যাচে যা করেছে (কয়েক ওভার বোলিংয়ে প্রভাব রাখা), সেটিই সে করবে। কাজেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাকে কাজে লাগাতে হবে।” 

এভাবে সামলে রাখতে পারলে এবং দেখভাল ঠিকমতো করতে পারলে শ্রীলঙ্কার হয়ে পাথিরানা দীর্ঘদিন খেলতে পারবেন বলে মনে করেন ক্রিকেটের সেরা মস্তিষ্কগুলোর একটি বলে বিবেচিত ধোনি। 

“এটা যদি নিশ্চিত করা যায় যে সে ফিট থাকবে এবং আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোয় তাকে পাওয়া যাবে, তাকে শ্রীলঙ্কার জন্য দারুণ সম্পদ হতে পারে। ভুলে যাবেন না, তার বয়স এখনও অনেক কম।” 

“গত বছর সে যখন এসেছিল, এখনকার চেয়ে আরও পাতলা ছিল। এবার পেশি কিছুটা বাড়িয়েছে, যার মানে কিছুটা শক্তিশালী সে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, শ্রীলঙ্কার হয়ে সে দীর্ঘদিন খেলতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কতটা বোলিং সে করছে।”