হাবিবুর রহমানের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে সুপার লিগ নিশ্চিত করল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবকে নিরাপদ রাখলেন তানবীর হায়দার।
Published : 19 Apr 2024, 06:05 PM
সেরা ছয়ে থাকতে জয় ছাড়া পথ খোলা ছিল না গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের। অবনমন অঞ্চল এড়াতে জয় প্রয়োজন ছিল সিটি ক্লাবেরও। মুখোমুখি সেই লড়াইয়ে সিটি ক্লাবকে অল্প রানেই থামিয়ে গাজী গ্রুপকে এগিয়ে রাখলেন বোলাররা। এরপর ঝড়ো সেঞ্চুরিতে দলকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিলেন হাবিবুর রহমান।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাথমিক পর্বের শেষ দিনের আরেক ম্যাচে ছিল অবনমন অঞ্চল এড়ানোর লড়াই। পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে পরাজয় এড়ালেই হতো রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের। তারা পারেনি সেটি। তানবীর হায়দার ও আহরার আমিনের ফিফটিতে দারুণ জয়ে নিজেদের নিরাপদ অবস্থানে নিয়ে যায় পারটেক্স।
হাবিবুরের সেঞ্চুরিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
জয়ের জন্য যখন গাজী গ্রুপের প্রয়োজন ২৮ রান, তিন অঙ্ক থেকে তখন ২৬ রান দূরে হাবিবুর। এক প্রান্তে সাব্বির হোসেন কেবল আগলে রাখলেন উইকেট। সেই ২৮ রান একাই করে দলকে জেতানোর পাশাপাশি নিজের সেঞ্চুরিও পূর্ণ করলেন হাবিবুর।
স্রেফ ৮১ বলে ১০২ রানের ইনিংস খেলেন হাবিবুর। ২৬ ম্যাচের লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। এই সংস্করণে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরির (৪৯ বলে) রেকর্ডও তার।
বোলারদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সের পর হাবিবুরের সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটের সহজ জয় পায় গাজী গ্রুপ। ১৮১ রানের লক্ষ্য ২৪.১ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলে তারা। ৫০ বলে ৬১ রান করে দলের জয়ে অবদান রাখেন ওপেনার আনিসুল ইসলামও।
প্রাথমিক পর্বের ১১ ম্যাচে ৭ জয়ে শেষ দল হিসেবে সুপার লিগ নিশ্চিত করেছে গাজী গ্রুপ। শেষ ম্যাচটি হেরে অবনমন অঞ্চলে নেমে গেছে সিটি ক্লাব। অবনমন এড়াতে রেলিগেশন লিগ খেলতে হবে তাদের।
ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে সাদিকুর রহমানের উইকেট হারায় সিটি ক্লাব। তবে আরেক ওপেনার হাসানুজ্জামানের ব্যাটে দ্রুত রান করতে থাকে তারা। ৩টি করে চার-ছক্কায় ২৯ বলে ৩৮ রান করে ফেরেন হাসানুজ্জামান।
এরপর ক্রমেই পেছাতে থাকে সিটি ক্লাব। দলের আট ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁলেও কেউ ৪০ রান করতে পারেননি। রাফসান আল মাহমুদ ৩৭, রায়ান রাফসান রহমান ২৫ রান করলে কোনোমতে দুইশর কাছাকাছি যায় তারা।
দারুণ ছন্দে থাকা রুয়েল মিয়া ১৯ রানে নেন ৩ উইকেট। ২২ উইকেট নিয়ে লিগের উইকেট শিকারের তালিকায় সবার ওপরে এই বাঁহাতি পেসার। এছাড়া হুসনা হাবিব, আব্দুল গাফফার ও মইন খান নেন ২টি করে উইকেট।
রান তাড়ায় ১৩ রানে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন গাজী গ্রুপ অধিনায়ক মেহেদি মারুফ। তবে চাপ বাড়তে দেননি আনিসুল ও হাবিবুর। দ্বিতীয় উইকেটে স্রেফ ১১০ বলে ১৩১ রানের জুটি গড়ে তোলেন দুজন।
টানা দ্বিতীয় পঞ্চাশ পূর্ণ করতে ৪০ বল খেলেন আনিসুল। মইনুল ইসলামের বলে বড় শটের চেষ্টায় সমাপ্তি ঘটে তার ১০ চার ও ১ ছক্কার ইনিংসের। তার বিদায়ের পর বাকি রান একাই নেন হাবিবুর।
৫২ বলে ফিফটি করা হাবিবুর পরের পঞ্চাশ রান করেন স্রেফ ২৯ বলে। সব মিলিয়ে ১০ চারের সঙ্গে ৬ ছক্কায় সাজান তিনি নিজের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিটি ক্লাব: ৪৯.৩ ওভারে ১৮০ (সাদিকুর ২, হাসানুজ্জামান ৩৮, শাহরিয়ার ১১, আশিকুল ১৮, রায়ান ২৫, সাজ্জাদুল ১৫, রাফসান ৩৭, মইনুল ৩, ইফরান ১২, নাইমুর ১৪*, সোহেল ১; রুয়েল ৭.৩-০-১৯-৩, মাহফুজুর ৫-০-২০-১, হুসনা হাবিব ১০-১-২৩-২, পারভেজ ৮-১-৩৮-০, গাফফার ১০-১-৫১-২, মইন ৯-১-২৯-২)
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ২৪.১ ওভারে ১৮১/২ (মেহেদি ১৩, আনিসুল ৬১, হাবিবুর ১০২*, সাব্বির ০*; ইফরান ৪-০-২৫-০, মইনুল ১০-০-৮৬-২, নাইমুর ৫.১-০-৩৬-০, রায়ান ১-০-১৩-০, সোহেল ৩-০-১২-০, রাফসান ১-০-৭-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: হাবিবুর রহমান
তানবীর-আহরারের ফিফটিতে রেলিগেশন লিগ এড়াল পারটেক্স
প্রথম দশ রাউন্ডে স্রেফ এক জয়ে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে ছিল পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব। রেলিগেশন লিগ এড়াতে সবশেষ ম্যাচে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে ৩ উইকেটের জয়ে নিজেদের কাজ দারুণভাবেই করে মিজানুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দল। তানবীর হায়দার, আহরার আমিনের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ২৬০ রানের লক্ষ্যে ৭ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে তারা।
পারটেক্সের জয়ে প্রাথমিক পর্বে সমান ৪ পয়েন্ট হয়েছে ৪ দলের। অন্য তিন দল সিটি ক্লাব, গাজী টায়ার্স ক্রিকেট একাডেমি ও রূপগঞ্জ টাইগার্স। টুর্নামেন্টের বাইলজ অনুযায়ী, সমান পয়েন্টের ক্ষেত্রে প্রথম বিবেচনায় আসে সর্বোচ্চ জয়। সেখানেও ৪ দলের জয় সমান ২টি।
এরপর হিসেব করা হয় হেড টু হেড। চার দলের মধ্যে হেড টু হেডে সমান ২টি করে জয় পারটেক্স ও গাজী টায়ার্সের। এই দুই দলের মধ্যে নেট রান রেটের বিবেচনায় এগিয়ে থাকায় অবনমন অঞ্চল এড়িয়েছে পারটেক্স। রেলিগেশন লিগ খেলবে বাকি তিন দল।
শেষ ম্যাচে পারটেক্সের নায়ক তানবীর। পাঁচ নম্বরে নেমে শেষ পর্যন্ত খেলে ৭২ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জেতান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এছাড়া তরুণ আহরার আমিনের ব্যাট থেকে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৮ বলে ৫৮ রানের ইনিংস।
রান তাড়ায় শুরুতেই দুই ওপেনারের উইকেট হারায় পারটেক্স। তৃতীয় উইকেটে ৬৭ রানের জুটিতে চাপ সামাল দেন জাহিদুজ্জামান ও মোহাম্মদ রাকিব। জাহিদুজ্জামান ৩৩ ও রাকিব ৩৭ রান করে ফেরেন।
এরপর সুশান্ত দেবনাথও অল্পে আউট হলে ফের চাপে পড়ে যায় পারটেক্স। ষষ্ঠ উইকেটে ১০৪ রানের জুটিতে দলকে কক্ষে ফেরান তানবীর ও আহরার। জয় থেকে ৫০ রান দূরে থাকতে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন আহরার।
তবে দায়িত্ব নিয়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে বাকি কাজ সারেন তানবীর। ৮০ বলের ইনিংসে ৮ চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা মারেন তিনি। ৯ নম্বরে নেমে তোফায়েল আহমেদ খেলেন ১৭ বলে ২৪ রানের ক্যামিও ইনিংস।
এর আগে রূপগঞ্জ টাইগার্সের আড়াইশ ছোঁয়া পুঁজির কারিগর জসিম উদ্দিন ও সোহাগ গাজী। তরুণ কিপার-ব্যাটসম্যান জসিমের ব্যাট থেকে আসে ১১১ বলে ৮১ রানের ইনিংস। অভিজ্ঞ সোহাগ করেন ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৬ বলে ৬৭ রান।
এছাড়া সালমান হোসেন ৫ চার ও ১ ছক্কায় খেলেন ৩৭ বলে ৪২ রানের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৫৯/৮ (মাহফিজুল ২১, জসিম ৮১, মামুন ০, ফরহাদ ১০, শামসুর ১৬, সোহাগ ৬৭, সালমান ৪২, আরাফাত ১২*, অনিক ০, হাশিম ১*; মোহর ১০-১-৬০-৩, মুক্তার ১০-১-৫১-৩, তোফায়েল ১০-০-৬১-১, রাকিবুল ১০-০-৩৩-০, আহরার ১০-০-৪৭-০)
পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব: ৪৮.৫ ওভারে ২৬২/৭ (আজমির ২, মিজানুর ৯, রাকিব ৩৭, জাহিদুজ্জামান ৩৩, তানবীর ৭২*, সুশান্ত ৯, আহরার ৫৮, মুক্তার ৫, তোফায়েল ২৪*; নাবিল ৯.৫-০-৬৭-০, হাশিম ১০-১-৪৩-৪, মামুন ৪-০-৩৪-২, আরাফাত ৯-১-৪৩-০, অনিক ৬-০-৩২-০, সোহাগ ১০-০-৩৯-১)
ফল: পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তানবীর হায়দার