শান্ত-হৃদয়ের বোলিংয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন হেরাথ

বাংলাদেশের স্পিন কোচের মতে, ব্যাটসম্যানরাও কিছু ওভার বোলিং করতে পারলে দলের কম্বিনেশন ঠিক করা সহজ হয়ে যায়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2023, 10:47 AM
Updated : 30 May 2023, 10:47 AM

‘আশা করি তামিম ভাই এখন বুঝবেন, আমিও বোলিং করতে পারি’- হাসতে হাসতে বলছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের সবশেষ ওয়ানডেতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দারুণ ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে এভাবেই অধিনায়কের কাছে আরও বেশি বোলিংয়ের দাবি জানিয়েছিলেন শান্ত। তার এই চাওয়া রঙ্গনা হেরাথেরও। দলের প্রয়োজনে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকেও বোলিং দেখতে চান বাংলাদেশের স্পিন কোচ।

চেমসফোর্ডে গত ১৪ মে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪২তম ওভারে শান্তকে বোলিংয়ে আনেন তামিম। প্রথম ওভারেই দারুণ খেলতে থাকা হ্যারি টেক্টরের উইকেট নেন শান্ত। সব মিলিয়ে ৩ ওভারে স্রেফ ১০ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। 

২৭৫ রানের লক্ষ্যে ৪১ ওভারে ৩ উইকেটে ২২৩ রান করে ফেলে আইরিশরা। শেষ ৫৪ বলে ৭ উইকেট হাতে রেখে ৫২ রান করতে হতো তাদের। শান্তর বোলিংয়ে টেক্টর ও লরকান টাকারের জুটি ভেঙে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। পরে হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের অসাধারণ ডেথ বোলিংয়ে তারা পায় ৫ রানের জয়। 

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা শান্ত সেদিন অফ স্পিনে নিজের সামর্থ্যের ছাপ রাখেন। ওই ম্যাচের আগে ওয়ানডেতে স্রেফ ২.৪ ওভার বোলিং করেন তিনি। এর বাইরে টেস্টে ১০ ইনিংসে ও টি-টোয়েন্টিতে দুই ম্যাচে ১ ওভার করে হাত ঘোরান তিনি। 

খুব বেশি বোলিং না করলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ায় শান্তর বোলিংয়ে খুশি হেরাথ। শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্লাজায় মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অন্য ব্যাটসম্যানদেরও প্রয়োজনের সময় বোলিংয়ে অবদান রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেন এই শ্রীলঙ্কান।

“এটি (ব্যাটসম্যানদের বোলিং করা) খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ব্যাটসম্যানরা যদি ৩-৪ ওভার বোলিং করে দিতে পারে, যেমন শান্ত করেছে, বোলিং দলকে এটি বাড়তি কিছু বিকল্প দেয়। দলের কম্বিনেশন ঠিক করার সময় বিকল্প বেশি থাকলে ঠিক কম্বিনেশন পাওয়া সহজ হয়। শান্ত, হৃদয়কে বোলিং করতে দেখা সবসময়ই ভালো লাগে আমার।”

হৃদয় তার ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখনও বোলিং করেননি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে টুকটাক বোলিং করেন। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে মোটামুটি নিয়মিত বোলিং করতেন।

প্রয়োজনে কয়েক ওভারের বোলিংয়ে শান্ত-হৃদয়দের হাত পাকিয়ে নেওয়া দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আগামী বিশ্বকাপে তাকিয়েও।

ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাকি ৪ মাসের কিছু বেশি সময়। ভারতের মাটিতে বেশিরভাগ উইকেটই ব্যাটিংবান্ধব। বেশ কিছু মাঠের আকৃতিও মাঝেমধ্যে স্পিনারদের জন্য বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি আইসিসি ইভেন্টের উইকেটে সাধারণত স্পিনার তথা বোলারদের জন্যই তেমন সাহায্য থাকে না। 

সম্ভাব্য এই চ্যালেঞ্জগুলো ভাবনায় আছেন হেরাথের। বাংলাদেশের স্পিনারদের সেভাবেই তৈরি করে রাখতে চান স্পিন কোচ।

“আমি সবসময়ই মনে করি, স্পিনারদের জন্য কন্ডিশন কঠিন হলে সেখানে চ্যালেঞ্জ থাকবে। এ কারণে বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে আমরা প্রস্তুত হয়ে যাব। এটি প্রস্তুতির অংশ। আমরা বৈচিত্র্য ও কৌশল নিয়ে কাজ করেছি। পিচ থেকে সহায়তা না পেলে এসব বিষয় কাজে লাগাতে হবে।”

স্পিনে বৈচিত্র ও কৌশল যখন আলোচনায়, ভালো মানের লেগ স্পিনারের ঘাটতির পুরোনো আক্ষেপ জেগে ওঠে নতুন করে। হেরাথ অবশ্য লেগ স্পিনারদের দিকেও খেয়াল রাখছেন বলে জানালেন।

হেরাথের আপাতত ব্যস্ততা হাই-পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের স্পিনারদের দিয়ে। জাতীয় দলের মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, রিশাদ হোসেনদের পাশাপাশি এইচপি ক্যাম্পে ডাক পাওয়া হাসান মুরাদ, রকিবুল হাসান, টিপু সুলতানদের নিয়ে সোমবার থেকে একাডেমি মাঠে কাজ করছেন লঙ্কান স্পিন গ্রেট।  

মঙ্গলবার এইচপির স্পিনারদের নিয়ে লম্বা সময় কাজ করতে দেখা গেছে হেরাথকে। প্রথমবার ক্যাম্পে ডাক পাওয়া বাঁহাতি স্পিনার আরিদুল ইসলাম, লেগ স্পিনার নাঈম হোসেন সাকিবকে আলাদা করে বোলিংয়ের খুঁটিনাটি বিষয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। 

নাঈম, রিশাদ ছাড়াও হেরাথের এই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন জাতীয় দলে জায়গা হারানো লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলামও। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে রিশাদের। অন্য লেগ স্পিনারদের নিয়েও আশাবাদী হেরাথ।


“এখন রিশাদ আছে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ও শেষ ম্যাচ খেলেছে। এছাড়া নাঈম (হোসেন) সাকিব নামে আরও একজন রিস্ট স্পিনার আছে, (আমিনুল ইসলাম) বিপ্লবও আছে৷ এই মুহূর্তে আমাদের হাতে তারাই আছে৷ আমরা তাদের কাছ থেকে সেরাটা বের করার চেষ্টা করছি। (খেলার) সুযোগ পেলে তারা আরও আত্মবিশ্বাসী ও অভিজ্ঞ হবে।”

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২৫ জন স্পিনারকে নিয়ে বিশেষ ক্যাম্প করেছিলেন হেরাথ। ওই ক্যাম্প শেষে নিয়মিত এমন আয়োজনের দাবির কথা বলেছিলেন তিনি। এবারও সেই কথা শোনা গেল তার কণ্ঠে।  

“অ্যাঙ্গেল তৈরি করা, ওভার দা উইকেট, রাউন্ড দা উইকেট, গতির তারতম্য- এমন অনেক বৈচিত্র‍্যই আছে কাজ করার জন্য। ক্রস সিম, ক্যারম বল- আমরা এসব নিয়ে কাজ করছি। এটি (স্পিন ক্যাম্প) আমাদের নিয়মিত করা প্রয়োজন। এই ছেলেরা শিখতে খুব আগ্রহী৷ আমি খুব খুশি৷”