কোহলির সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়

রান তাড়ায় দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেও দলের বড় হার এড়াতে পারলেন না শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2023, 04:20 PM
Updated : 10 Jan 2023, 04:20 PM

টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাইরে থাকা সিনিয়র ক্রিকেটাররা ওয়ানডেতে ফেরায় আরও দুর্বার হয়ে উঠল ভারত। প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই ছাড়ালেন পঞ্চাশ, দুই ওপেনারের ফিফটির পর বিরাট কোহলি উপহার দিলেন রেকর্ড ছোঁয়া সেঞ্চুরি। তাতে রানের যে চূড়ায় তারা উঠল, তার ধারেকাছে যেতে পারল না শ্রীলঙ্কা। দাসুন শানাকার সেঞ্চুরিতে কমল শুধু ব্যবধান। অনায়াস জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল।

তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ভারতের জয় ৬৭ রানে। গুয়াহাটিতে মঙ্গলবার তারা ৩৭৩ রানের পুঁজি গড়ে ৩০৬ রানে আটকে দেয় লঙ্কানদের।

দুই দফা জীবন পেয়ে এই সংস্করণে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ৮৭ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা কোহলি। রোহিত ৬৭ বলে ৮৩ ও শুবমান গিল ৬০ বলে করেন ৭০ রান।

জবাবে শ্রীলঙ্কা সেভাবে জয়ের আশা জাগাতে পারেননি কখনও। ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় কেটে যায় অনেক আগেই। শানাকা সেঞ্চুরি করতে পারেন কি-না, সেটিই ছিল দেখার। নবম উইকেটে কাসুন রাজিথার সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ১০০ রানের জুটির পথে শেষ ওভারের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ শামিকে চার মেরে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন লঙ্কান অধিনায়ক।

৮৮ বলে ১২ চার ও ৩ ছক্কায় তিনি করেন অপরাজিত ১০৮ রান। পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেন আর কেবল একজন। ৮০ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার পাথুম নিসানকা।

রোহিত, কোহলি, লোকেশ রাহুল, শামি, শ্রেয়াস আইয়ারদের ছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় ভারত। তারা সবাই ফেরেন ৫০ ওভারের সিরিজে।

ভারত ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। সবশেষ ওয়ানডের সিরিজের শেষ ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেও এই ম্যাচে একাদশে জায়গা ধরে রাখতে পারেননি ইশান কিষান। রোহিত ও গিলের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় দল। প্রথম ১০ ওভারে আসে ৭৫ রান।

ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে চার মেরে রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেন ৪১ বলে। পঞ্চাশ ছুঁতে গিলের লাগে ৫১ বল।

গিলের বিদায়ে ২০তম ওভারে ভাঙে ১৪৩ রানের শুরুর জুটি। তরুণ ওপেনারের ৭০ রানের ইনিংস গয়া ১১ চারে। কোহলি ক্রিজে আসেন এরপরই।

সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে খানিক পর রোহিত বোল্ড হন দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ভারত অধিনায়কের ৬৭ বলে ৮৩ রানের ইনিংস।

শ্রেয়াস দারুণ শুরু করলেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি (২৪ বলে ২৮)। কোহলি এরপর ৭০ বলে ৯০ রানের জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন রাহুলকে সঙ্গী করে।

ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ছক্কা মেরে কোহলি ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৭ বলে। ৫২ রানে তার ক্যাচ হাতছাড়া করেন কিপার কুসল মেন্ডিস। এরপর ৮১ রানে সহজ ক্যাচ ফেলেন দাসুন শানাকা। মাঝে রাহুল বিদায় নেন ২৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৯ রান করে।

শেষের দাবি মেটাতে পারেননি হার্দিক পান্ডিয়া। কোহলি ৪৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৮০ বলে। এই সংস্করণে ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে শচিন টেন্ডুলকারের পাশে বসলেন তিনি, দুজনেরই ২০টি করে।

শেষের আগের ওভারে শেষ হয় কোহলি ১২ চার ও এক ছক্কায় গড়া ১১৩ রানের ইনিংস। গত মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষেও ১১৩ রানই করেছিলেন তিনি।

বিশাল রান তাড়ায় শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় শ্রীলঙ্কা। নিজের পরপর দুই ওভারে আভিশকা ফার্নান্দো ও মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ সিরাজ।

বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি চারিথ আসালাঙ্কাও। ৬৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর নিসানকা ও ধনাঞ্জয়ার জুটিতে কিছুটা আশার সঞ্চার হয় শ্রীলঙ্কা শিবিরে। কিন্তু ৪০ বলে ৪৭ রান করে ধনাঞ্জয়ার বিদায়ে ৭২ রানের জুটি ভাঙার পর আবার শুরু হয় নিয়মিত উইকেট পতন।

নিসানকার ১১ চারে ৭২ রানের ইনিংস থামান উমরান মালিক। ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দুনিথ ভেল্লালাগে ফেরেন দ্রুতই। চামিকা করুনারত্নে ৩৮তম ওভারে অষ্টম হিসেবে আউট হন যখন, শ্রীলঙ্কা অলআউট হওয়ার শঙ্কায়। শানাকার রান তখন কেবল ২০।

সেখান থেকেই রাজিথার সঙ্গে তার ওই জুটি। অধিনায়কের ব্যাটে বাউন্ডারি আসতে থাকে প্রায় প্রতি ওভারে। সেঞ্চুরির জন্য শেষ দুই ওভারে তার দরকার ছিল ১২, শেষ ওভারে ৫।

শামির প্রথম বলে ডাবল নিয়ে শতকের পথে এগিয়ে যান শানাকা। দ্বিতীয় বল ‘ডট’ খেলে পরের বলে নেন সিঙ্গেল। এরপর বল ছাড়ার আগে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে রান আউটের আবেদন করেন শামি, শানাকা ছিলেন দাগের বাইরে। তবে শামির সঙ্গে আলোচনা করে আবেদন প্রত্যাহার করে নেন অধিনায়ক রোহিত।

পরের বলে শানাকাকে রান আউটের সুযোগ হারান রোহিত। এরপরই কাভার দিয়ে চার মেরে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক, শেষ বলে মারেন ছক্কা। নবম উইকেটে ১০০ রানের জুটিতে তার অবদানই ৮৮!

৫৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ভারতের সফলতম বোলার তরুণ পেসার উমরান।

আগামী বৃহস্পতিবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে হবে দ্বিতীয় ওয়ানডে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩৭৩/৭ (রোহিত ৮৩, গিল ৭০, কোহলি ১১৩, শ্রেয়াস ২৮, রাহুল ৩৯, পান্ডিয়া ১৪, আকসার ৯, শামি ৪*, সিরাজ ৭*; রাজিথা ১০-০-৮৮-৩, মাদুশাঙ্কা ৬-০-৪৩-১, হাসারাঙ্গা ১০-০-৬৭-০, করুনারত্নে ৮-০-৫৪-১, ভেল্লালাগে ৮-০-৬৫-০, শানাকা ৩-০-২২-১, ধনাঞ্জয়া ৫-০-৩৩-১)

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ৩০৬/৮ (নিসানকা ৭২, আভিশকা ৫, মেন্ডিস ০, আসালাঙ্কা ২৩, ধনাঞ্জয়া ৪৭, শানাকা ১০৮*, হাসারাঙ্গা ১৬, ভেল্লালাগে ০, করুনারত্নে ১৪, রাজিথা ৯*; শামি ৯-০-৬৭-১, সিরাজ ৭-১-৩০-২, পান্ডিয়া ৬-০-৩৩-১, উমরান ৮-০-৫৭-৩, চেহেল ১০-০-৫৮-১, আকসার ১০-০-৫৮-০)

ফল: ভারত রানে ৬৭ জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে ভারত

ম্যান অব দা ম্যাচ: বিরাট কোহলি