উদ্বোধনী ম্যাচে হ্যাটট্রিকের পর ধারাবাহিকতা ধরে রেখে পুরো আসরজুড়েই অসাধারণ বোলিং করেছেন শরিফুল ইসলাম।
Published : 01 Mar 2024, 10:13 PM
গত বছর যেখানে শেষ করেছিলেন, ২০২৪ সালের শুরুটা যেন সেখান থেকেই করেন শরিফুল ইসলাম। দলের ভরাডুবির মাঝেও বিপিএলে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম দুর্দান্ত ঢাকার বাঁহাতি পেসার। সুইং বোলিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরেন টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেন তিনিই।
রানের মতো উইকেটের তালিকায়ও বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দাপট। সেরা পাঁচ বোলারের চারজন বাংলাদেশি। বিদেশিদের একমাত্র প্রতিনিধি চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ওমানি পেসার বিলাল খান।
শরিফুল ইসলাম
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেন শরিফুল। সেদিন ইনিংসের শেষ তিন বলে পান উইকেট। টুর্নামেন্টের বাকি অংশে তিনি দেখান নতুন বলের মুনশিয়ানা।
দারুণ রিস্ট পজিশন ও সিমের ওপর নিয়ন্ত্রণে প্রায় প্রতি ম্যাচে ইনিংসের শুরুতে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন শরিফুল। প্রায় ৬০ শতাংশ বোলিং পাওয়ার প্লেতে করেন তিনি। সব মিলিয়ে তার শিকার ১২ ম্যাচে ২২ উইকেট। এর মধ্যে ১৩টিই প্রথম ছয় ওভারে।
সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে নেওয়া ২৪ রানে ৪ উইকেট তার ক্যারিয়ারেরই সেরা বোলিং।
ঢাকা প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলে অন্য অনেকের আগেই থামে শরিফুলের যাত্রা। তবু তাকে টপকে যেতে পারেননি কেউ। বিপিএলের এক আসরে তার চেয়ে বেশি উইকেটের নজির আছে শুধু একজনের। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসানের, ২৩টি।
সাকিব আল হাসান
চোখের সমস্যার কারণে শুরুর দিকে কয়েক ম্যাচে স্রেফ বোলার হিসেবে খেলতে দেখা যায় সাকিব আল হাসানকে। বোলিংয়ে বরাবরই সেরাদের একজন তিনি। এবারও মেলে ধরেন নিজের সামর্থ্যের প্রদর্শনী।
ব্যাটিংয়ে অস্বস্তিতে ভোগা রংপুর রাইডার্সের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার এবার ১৩ ম্যাচে নেন ১৭ উইকেট। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে নেওয়া ১৬ রানে ৩ উইকেট তার এবারের সেরা।
এবার ওভারপ্রতি সাকিবের খরচ স্রেফ ৬.৩১ রান। অন্তত ১০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে তার চেয়ে কিপটে বোলিং করেছেন শুধু সামিত প্যাটেল; ওভারপ্রতি ৪.৬৮ রান খরচায় ১০ উইকেট।
প্রথম বোলার হিসেবে বিপিএলে দেড়শ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার খুব কাছে পৌঁছে গেছেন সাকিব। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ১১৩ ইনিংসে তার শিকার ১৪৯ উইকেট।
শেখ মেহেদি হাসান
পাওয়ার প্লের দায়িত্ব সামলানো শেখ মেহেদি হাসান এবার ১৪ ম্যাচে নেন ১৬ উইকেট। এর মধ্যে ৯টিই প্রথম ছয় ওভারে। পাওয়ার প্লেতে করা ২৪ ওভারে ওভারপ্রতি সাড়ে পাঁচের কম রান খরচ করেছেন ২৯ বছর বয়সী অফ স্পিনার।
রংপুর রাইডার্সের বোলিংয়ে অনেক বিকল্প থাকায় বেশিরভাগ ম্যাচেই পুরো ৪ ওভারের কোটা পূরণ করতে পারেননি মেহেদি। স্রেফ পাঁচ ম্যাচে তাকে পুরো স্পেল বোলিং করান নুরুল হাসান সোহান। কিছু ম্যাচে আবার খরুচে বোলিংও করেন মেহেদি।
দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ১১ রানে ৩ উইকেট তার এবারের সেরা বোলিং। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তিনি ১৩ রানে নেন ৩ উইকেট।
মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন
পিঠের পুরোনো চোটে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে খেলতে পারেননি মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। প্রথম পর্বের অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ার পর ফরচুন বরিশালে যোগ দেন তিনি। এরপর থেকে ফাইনালিস্ট দলটির বোলিংয়ের সার্বিক চিত্রই বদলে যায়।
নতুন বলে ব্রেক থ্রু দেওয়া কিংবা ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিং, যখনই প্রয়োজন পড়েছে অবদান রেখেছেন সাইফ উদ্দিন। ফাইনাল ম্যাচেই যেমন আন্দ্রে রাসেলের সামনে করেছেন দুর্দান্ত শেষ ওভার। তিনটি ওয়াইড ও একটি ‘নো’ বলের পরও স্রেফ ৭ রান দিয়েছেন তিনি।
সব মিলিয়ে ৯ ম্যাচে তার শিকার ১৫ উইকেট। ওভারপ্রতি খরচ করেছেন সাত রানের কম। পাওয়ার প্লেতে তার শিকার ৬ উইকেট আর ডেথে নিয়েছেন ৭টি। দুর্দান্ত ঢাকার বিপক্ষে ২১ রানে ৩ উইকেট সাইফ উদ্দিনের এবারের সেরা।
বিলাল খান
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের প্লে-অফ খেলার বড় কারিগর বিলাল খান। একাধারে পাওয়ার প্লে ও ডেথ বোলিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সব মিলিয়ে ১৩ ম্যাচে ১৫ উইকেট নেন ওমানের বাঁহাতি পেসার।
এর মধ্যে নতুন বলে প্রথম ছয় ওভারে তার শিকার ৬ উইকেট। শেষ চার ওভারেও তিনি নেন সমান ৬ উইকেট। সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে নেওয়া ২৪ রানে ৩ উইকেট ৩৫ বছর বয়সী পেসারের এবারের আসরে সেরা বোলিং।