ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট টেস্টে দ. আফ্রিকাকে হারাল ভারত

কেপ টাউনে ৭ উইকেটের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল রোহিত শার্মার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Jan 2024, 11:54 AM
Updated : 4 Jan 2024, 11:54 AM

ভয়ঙ্কর উইকেটে আরও একবার মুখ থুবড়ে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং। সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে একাই লড়লেন এইডেন মারক্রাম। জাসপ্রিত বুমরাহর ছোবল সামলে পাল্টা আক্রমণে উপহার দিলেন আগ্রাসী সেঞ্চুরি। যদিও তার চমৎকার ইনিংসটি বিফলে গেল। ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট টেস্টে স্বাগতিকদের হারিয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত।

কেপ টাউন টেস্টে দুই দিনেই ৭ উইকেটে জিতেছে ভারত। দুই ম্যাচের সিরিজটি শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। নিউল্যান্ডসে ৭ ম্যাচ খেলে প্রথমবার জয়ের স্বাদ পেল এশিয়ার দলটি।

চার ইনিংস মিলিয়ে এই ম্যাচে খেলা হয়েছে ৬৪২ বল। এর চেয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ফল আসা ম্যাচ আগে কখনও দেখেনি টেস্ট ক্রিকেট। আগের রেকর্ডটিতেও জড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৩২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রোটিয়াদের মেলবোর্ন টেস্টটি শেষ হয়েছিল ৬৫৬ বলে। ইনিংস ও ৭২ রানে জিতেছিল স্বাগতিকরা।

ম্যাচ সেরা মোহাম্মদ সিরাজের আগুনে বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৫ রানে গুটিয়ে দেয় ভারত। জবাবে ব্যাট হাতে তারাও অবশ্য খুব ভালো কিছু করতে পারেনি। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবার শূন্য রানে ৬ উইকেট হারানোর বিব্রতকর রেকর্ড গড়ে অল আউট হয় ১৫৩ রানে।

দ্বিতীয়ভাগেও দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ ব্যাটসম্যানই ব্যর্থ। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়েন মারক্রাম, করেন ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি। তার ২ ছক্কা ও ১৭ চারে ১০৩ বলে ১০৬ রানের সৌজন্যে কোনোমতে ১৭৬ পর্যন্ত যেতে পারে তারা। তাতে ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা এড়ালেও প্রতিপক্ষকে রুখতে তারা পারেনি। ৭৯ রানের লক্ষ্যে ১২ ওভারেই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় ভারত।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে দ্বিতীয় ইনিংসে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করেন বুমরাহ। ৬১ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন এই পেসার। টেস্টে এটি তার নবম পাঁচ উইকেট।

ম্যাচ যে বেশি লম্বা হবে না, এর আভাস মিলেছিল আগের দিনই। অসমান বাউন্স ও গতিময় উইকেটে প্রথম দিন উইকেট পড়েছিল ২৩টি। দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও বদলায়নি পিচের আচরণ।

৬২ রানে ৩ উইকেট নিয়ে খেলতে নেমে দিনের প্রথম ওভারেই ডেভিড বেডিংহ্যামকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কাইল ভেরেইনা, মার্কো ইয়ানসেন ও কেশভ মহারাজও পারেননি টিকতে। দিনের প্রথম চারটি উইকেট নিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন বুমরাহ। ১১১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন কাঁপছে স্বাগতিকরা।

৩৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা মারক্রাম সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন ৬৮ বলে। এরপর আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন তিনি। তার ঝড়ের বড় ঝাপটা যায় প্রাসিধ কৃষ্ণার ওপর দিয়ে। এই পেসারের এক ওভারে দুটি করে ছক্কা-চারে নব্বইয়ের ঘরে পৌঁছে যায় তিনি। পরে বুমরাহকে দুই চার মেরে ৯৯ বলে পা রাখেন কাঙ্ক্ষিত তিন অংকে।

সিরাজকে ছক্কা মারার চেষ্টায় ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার তাণ্ডব। ব্যক্তিগত ৭৩ রানেই অবশ্য ফিরতে পারতেন মারক্রাম; বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি।

কাগিসো রাবাদার সঙ্গে মারক্রামের ৫১ রানের জুটিতে দেড়শ পার করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জুটিতে রাবাদার অবদান কেবল ২ রান। এরপর আর বেশিদূর এগোয়নি দলটির ইনিংস।

রাবাদার প্রথম বলে ইয়াশাসবি জয়সওয়ালের বাউন্ডারিতে শুরু হয় ভারতের রান তাড়া। ৬ চারে ২৮ রান করে এই ওপেনার ফিরলে ভাঙে ৪৪ রানের উদ্বোধনী জুটি। এরপর দ্রুত শুবমান গিল ও ভিরাট কোহলিকেও হারায় তারা। তবে রোহিত শার্মা ও শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটে অনায়াসে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সফরকারীরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৫

ভারত ১ম ইনিংস: ১৫৩

দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ৩৬.৫ ওভারে ১৭৬ (আগের দিন ৬২/৩) (মারক্রাম ১০৬, বেডিংহ্যাম ১১, ভেরেইনা ৯, ইয়ানসেন ১১, মহারাজ ৩, রাবাদা ২, বার্গার ৬*, এনগিডি ৮; বুমরাহ ১৩.৫-০-৬১-৬, সিরাজ ৯-৩-৩১-১, মুকেশ ১০-২-৫৬-২, কৃষ্ণা ৪-১-২৭-১)

ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৭৯) ১২ ওভারে ৮০/৩ (জয়সওয়াল ২৮, রোহিত ১৬*, গিল ১০, কোহলি ১২, শ্রেয়াস ৪*; রাবাদা ৬-০-৩৩-১, বার্গার ৪-০-২৯-১, ইয়ানসেন ২-০-১৫-১)

ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ সিরাজ

ম্যান অব দা সিরিজ: ডিন এলগার ও জাসপ্রিত বুমরাহ