সবুজ উইকেটে ১৫ উইকেটের দিনে হেডের পাল্টা আক্রমণ

দক্ষিণ আফ্রিকাকে অল আউট করে প্রথম দিনেই লিডের কাছাকাছি অস্ট্রেলিয়া, তবে হারাতে হয়েছে ইনিংসের অর্ধেক।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2022, 09:14 AM
Updated : 17 Dec 2022, 09:14 AM

উইকেট এতটাই সবুজ যে মাঠ থেকে আলাদা করা কঠিন। শুধু যে ঘাসে ভরা, তা-ই নয়। বাউন্সও একটু অসমান। দিনের খেলা শেষে ট্রাভিস হেড বললেন, “খুবই কঠিন উইকেট, ভীষণ কঠিন…।” যদিও তার নামের পাশে তখন জ্বলজ্বল করছে ৭৭ বলে অপরাজিত ৭৮। তবে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের কথায় যে ভুল নেই, তা স্বাক্ষ্য দেবে স্কোরকার্ডই। প্রথম দিনে দুই সেশনেই অল আউট দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়াও পরে হারাল ৫ উইকেট। হেডের ইনিংসটি তাই ব্যতিক্রম ও বিশেষ কিছু।

সিরিজ শুরুর আগে থেকেই আবহ ছিল, লড়াইটা দুই দলের পেস আক্রমণের। প্রথম দিনেই তা দৃশ্যমান সহায়ক উইকেটে। ব্রিজবেন টেস্টের প্রথম দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে গেল ১৫২ রানে। অস্ট্রেলিয়ার রান দিন শেষে ৫ উইকেটে ১৪৫।

অস্ট্রেলিয়ার তিন পেসার মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও স্কট বোল্যান্ড মিলে গুঁড়িয়ে দেন প্রোটিয়াদের টপ ও মিডল অর্ডার। তিন উইকেট নিয়ে স্টার্কের টেস্ট শিকার সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯৯। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ন্যাথান লায়নও। অভিজ্ঞ অফ স্পিনার এই উইকেটেও ঠিকই আদায় করে নেন তিন উইকেট। এর মধ্যে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্কোরার কাইল ভেরেইনার (৬৪) উইকেটও।

পরে প্রোটিয়া পেসাররাও পরীক্ষা নেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিংয়ের। কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থাকা হেড আরেকবার চিনিয়ে দন নিজের জাত। দুর্দান্ত প্রতিআক্রমণে তার ১৩ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যায় লিডের কাছে।

গ্যাবায় শনিবার টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। সাফল্যও ধরা দেয় দ্রুত। স্টার্কের লেগ স্টাম্পের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন প্রোটিয়া দলপতি ডিন এলগার (৩)। তিনে নামা রাসি ফন ডার ডাসেনকে ৫ রানে বিদায় করেন কামিন্স।

আরেক ওপেসার সরল এরভিয়া শুরু থেকেই ছিলেন নড়বড়ে। ১৯ বলে প্রথম রান করার পর শেষ পর্যন্ত তিনি স্কট বোল্যান্ডের শিকার হন ১০ রানে। গালিতে নিচু হয়ে দারুণ ক্যাচ নেন ক্যামেরন গ্রিন। এক বল পরই বোল্যান্ড শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন খায়া জন্ডোকে।

২৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে দক্ষিণ আফ্রিকা। টেম্বা বাভুমা ও কাইল ভেরেইনা মিলে সেখান থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করে দলকে। বাভুমা উইকেট আঁকড়ে রাখেন, ভেরেইনা খেলতে থাকেন শট। লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেট হারায়নি তারা।

লাঞ্চের পরও কিছু দূর এগিয়ে যান দুজন। জুটির শতরান যখন খুব কাছে, আবার ছোবল দেন আক্রমণে ফেরা স্টার্ক। একটু আড়াআড়ি ব্যাটে খেলে বল স্টাম্পে টেনে আনেন বাভুমা (৭০ বলে ৩৮)।

৯৮ রানের এই জুটি ভাঙার পর দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ভেঙে পড়ে হুড়মুড়িয়ে। পরের দিকের আর কোনো ব্যাটসম্যান দাঁড়াতে পারেননি। ৬৪ রান করা ভেরেইনাকে দারুণ এক স্লাইডারে থামান লায়ন।

দক্ষিণ আফ্রিকা শেষ ৬ উইকেট হারায় ২৭ রানের মধ্যে।

অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নেমে ধাক্কা খায় প্রথম বলেই। অনেক দিন থেকেই সাদা পোশাকে অনুজ্জ্বল হয়ে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার সামলাতে ব্যর্থ হন কাগিসো রাবাদার বাউন্সার। শর্ট লেগে চোখধাঁধানো ক্যাচ নেন জন্ডো।

আগের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২ টেস্টে ৫০২ রান করা মার্নাস লাবুশেন এবার ফেরেন ১১ রানে। নবম ওভারে বল হাতে নিয়েই তাকে ফেরান বাঁহাতি পেসার মার্কো ইয়ানসেন। ১১ রানেই বিদায় নেন ওপেনা উসমান খাওয়াজা।

এরপর অস্ট্রেলিয়া পায় দারুণ জুটি। ২৭ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলা দলকে এগিয়ে নেন স্টিভেন স্মিথ ও হেড। দুজনের শুরুটা ছিল সাবধানী। পরে হেড শুরু করেন শট খেলা, স্মিথ রয়ে যান আরেক প্রান্ত আগলে। শুরুতে ১৬ বলে হেডের রান ছিল ২। সেখান থেকে ফিফটি করে ফেলেন ৪৮ বলেই।

দুজনের জুটি ছাড়িয়ে যায় শতরান।

যখন মনে হচ্ছিল, এই জুটিতেই দিন পার করবে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ফিরে আসে আবার। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে স্মিথকে ৩৬ রানে বোল্ড করে দেন আনরিখ নরকিয়া। জুটি থামে ১১৭ রানে।

পরের ওভারে নাইটওয়াচম্যাচ বোল্যান্ডকে বিদায় করে দেন রাবাদা। লড়িয়ে ক্রিকেটের একটি দিনের খেলার সমাপ্তি সেখানেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪৮.২ ওভারে ১৫২ (এলগার ৩, এরভিয়া ১০, ফন ডার ডাসেন ৫, বাভুমা ৩৮, জন্ডো ০, ভেরেইনা ৬৪, ইয়ানসেন ২, মহারাজ ২, রাবাদা ১০*, নরকিয়া ০, এনগিডি ৩; স্টার্ক ১৪-১-৪১-৩, কামিন্স ১২.২-৩-৩৫-২, বোল্যান্ড ১১-২-২৮-২, গ্রিন ৩-০-২০-০, লায়ন ৮-২-১৪-৩)।

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৩.১ ওভারে ১৪৫/৫ (ওয়ার্নার ০, খাওয়াজা ১১, লাবুশেন ১১, স্মিথ ৩৮, হেড ৭৮*, বোল্যান্ড ১; রাবাদা ১১.১-১-৫০-২, এনগিডি ৭-১-২৪-০, ইয়ানসেন ৫-১-১৫-১, নরকিয়া ৮-১-৩৭-২, মহারাজ ২-০-১৭-০)।