আফিফ-রাসুলির বিধ্বংসী জুটিতে চট্টগ্রামের বড় জয়

ঢাকা ডমিনেটর্সকে হারিয়ে চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম জয় পেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2023, 05:09 PM
Updated : 14 Jan 2023, 05:09 PM

নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ঢাকা ডমিনেটর্সকে বেশি দূর যেতে দিলেন না মেহেদি হাসান রানা, নিহাদুজ্জামানরা। রান তাড়ায় জয়ের পথে বাকি কাজটা সারলেন আফিফ হোসেন ও দারভিশ রাসুলি। বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের দুই তরুণের দারুণ ব্যাটিংয়ে বড় জয়ে মাঠ ছাড়ল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। 

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শনিবার ঢাকাকে ৮ উইকেটে হারায় চট্টগ্রাম। ঢাকার ১৫৮ রানের জবাবে ১৪ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেন আফিফ-রাসুলিরা।

চতুর্থ ম্যাচে চট্টগ্রামের এটি দ্বিতীয় জয়। জয় দিয়ে আসর শুরুর পর টানা দুই ম্যাচ হারল ঢাকা। 

চট্টগ্রামকে জেতানোর পথে বিপিএলে লম্বা বিরতির পর ফিফটির স্বাদ পান আফিফ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী কিংসের হয়ে খেলেছিলেন ৭৬ রানের ইনিংস। মাঝে ২৫ ম্যাচে আর পঞ্চাশ ছোঁয়া হয়নি তার। অপেক্ষার প্রহর শেষে এই ম্যাচে ৫২ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন আফিফ।

৭ চার ও ১ ছক্কায় বিপিএল ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

আফিফ যখন ফিফটি পেরিয়ে যান, রাসুলি তখনও কেবল দর্শক। জুটিতে স্রেফ এক প্রান্ত আগলে রেখে সঙ্গ দিয়ে যান তিনি। ১৬ ওভার শেষে আফিফের রান যখন ৫০ বলে ৬৭, রাসুলি তখন খেলছেন ২৫ বলে ১৯ রান নিয়ে। পরের দুই ওভারে নিজের স্কিল আর হাতের জোর দেখান আফগানিস্তানের এই ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। পরের ৮  বলের টর্নেডোতে করেন তিনি ৩৭ রান!

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট হারায়নি ঢাকা। উইকেট বাঁচিয়ে রাখলেও দ্রুত রান তোলার চাহিদা মেটাতে পারেননি দুই ওপেনার মিজানুর রহমান ও উসমান ঘানি। বিশেষ করে বেশিই মিইয়ে ছিলেন এবারের আসরে প্রথম খেলতে নামা মিজানুর।

প্রথম ৬ ওভারে আসে ৩৬ রান। পাওয়ার প্লে শেষেও রানের গতি খুব একটা বাড়েনি।

৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি দশম ওভারে ভাঙেন নিহাদউজ্জামান। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে সহজ ক্যাচ দেন মিজান। ২৮ রান করতে ৩৩ বল খেলেন তিনি।

পাঁচ ম্যাচ খেলে বিপিএল ক্যারিয়ারে নিহাদের প্রথম উইকেট এটি। প্রথম উইকেটের হাত ধরে আরেকটি ধরা দেয় দ্রুতই। ঢাকার আরেক ওপেনার ঘানিকেও ফেরান তিনি দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে। ৩৩ বলে আফগান ব্যাটসম্যান করেন ৪৭ রান।

আগের ম্যাচগুলির মতোই এরপর হতাশ করেন সৌম্য সরকার (৫ বলে ৪) ও মোহাম্মদ মিঠুন (৫ বলে ৪)। 

ফর্মে থাকা নাসির হোসেন এই ম্যাচেও দারুণ শুরু করেন। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি ঢাকার অধিনায়ক। মেহেদি হাসান রানার বলে ক্যাচ আউট হন ৪ চারে ৩০ রানের ইনিংস খেলে। 

শেষ দিকে ১৮ বলে ২৯ রানের ক্যামিও খেলে ঢাকাকে দেড়শ পার করান আরিফুল হক।

নতুন উদ্বোধনী জুটি নিয়ে নামা চট্টগ্রাম রান তাড়ায় ধাক্কা খায় শুরুতেই। প্রথম ম্যাচে তিন নম্বরে খেলা আল আমিন এবার ওপেনিংয় উঠে এসে আউট হন দ্বিতীয় বলেই। তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত ডেলিভারি উড়িয়ে দেয় তার বেলস।

শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়েন উসমান খান ও আফিফ। জুটিতে অগ্রণী ছিলেন আফিফ। টিকে থাকলেও উসমান ভুগছিলেন টাইমিং পেতে। শেষ পর্যন্ত আউট হন আরাফাত সানির একটি শর্ট বলে পুল বলে। ২২ রান করেন তিনি ২১ বলে।

সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নেন আফিফ ও রাসুলি। রান বাড়ানোর কাজটা করছিলেন আফিফ। উইকেট আগলে রাখেন রাসুলি।

একাদশ ওভারে ফিফটিতে পা রাখেন আফিফ। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ১১তম পঞ্চাশ ছুঁতে তার লাগে ৩৪ বল।

রাসুলির প্রথম ২৫ বলে মারেননি কোনো বাউন্ডারি। সপ্তদশ ওভারে হঠাৎই যেন তার মনে হয়, তিনিও শট খেলতে পারেন! আল-আমিন হোসেনতে তুলাধুনা করে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ওভার থেকে নেন ২৪ রান। এবারের বিপিএলের যা সবচেয়ে রান প্রসবা ওভার।

পরের ওভারে তাসকিনের তিন বলে ৪, ৬ ও ৪ মেরে ম্যাচ শেষ করে দেন তিনি। আফগান তরুণ সব মিলিয়ে ৩৩ বলে করেন ৫৬ রান।

দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১০৩ রান আসে স্রেফ ৬৩ বলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ঢাকা ডমিনেটর্স: ২০ ওভারে ১৫৮/৬ (মিজানুর ২৮, উসমান ৪৭, সৌম্য ৪, মিঠুন ৯, নাসির ৩০, আরিফুল ২৯*, ইমরান ৫, হামজা ০*; মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৩০-০, জিয়াউর ৪-০-২৬-০, পুস্পাকুমারা ৪-০-২৮-১, মেহেদি ৩-০-২৫-২, নিহাদউজ্জামান ৩-০-২৩-২, আল-আমিন ১-০-১৬-০, শুভাগত ১-০-৯-১)

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ১৭.৪ ওভারে ১৫৯/২ (উসমান ২২, আল-আমিন ০, আফিফ ৬৯*, রাসুলি ৫৬*; তাসকিন ৩.৪-০-২৪-১, হামজা ৪-০-৩০-০, আল-আমিন ৩-০-৪২-০, ইমরান ২-০-২০-০, আরাফাত ৪-০-২১-১, আরিফুল ১-০-১৪-০)

ফল: চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ৮ উইকেটে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ: আফিফ হোসেন