পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে হারলেও লড়াইয়ের ছাপ রাখতে পারল সাকিব আল হাসানের দল।
Published : 13 Oct 2022, 12:57 PM
লিটন দাসের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস, সাকিব আল হাসানের টানা দ্বিতীয় ফিফটি আর হাসান মাহমুদের চমৎকার বোলিংয়ের পরও এড়ানো যায়নি হার। জয়শূন্য থেকেই ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ করেছে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে নিজেদের সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে লড়াইয়ের ছাপ রাখতে পেরেছে তারা।
ক্রাইস্টচার্চে বৃহস্পতিবার ৭ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের ১৭৩ রান পেরিয়ে গেছে ১ বল বাকি থাকতে।
৪২ বলে ছয় চার ও দুই ছক্কায় ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন লিটন। তার সমান বলে তিন ছক্কা ও সাত চারে ৬৮ রান করেন সাকিব।
৯ চারে ৪০ বলে ৫৫ রান করেন বাবর আজম। ৫৬ বলে চারটি চারে ৬৯ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে সবচেয়ে কার্যকর ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ২০ বলে তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে।
তাদের কেউ নন, ওয়াকার ইউনিসের চোখে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে এই পেসারই লক্ষ্যটা আরও বড় হতে দেননি।
এই পেসারের বিপরীত দিন কেটেছে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের। ছেড়েছেন রিজওয়ানের ক্যাচ। পরে ফ্রি হিট করে হাত খোলার সুযোগ করে দিয়েছেন। খরুচে ওভারে দিয়েছেন মোমেন্টাম। ৩.৫ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে উইকেটশূন্য এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
হ্যাগলি ওভালে ব্যবহৃত উইকেটে খেলা। পরে ব্যাটিং একটু কঠিন হবে, তাই টস জিতে সাকিব নেন ব্যাটিং। এই ম্যাচেই শেষবারের মতো ওপেনিং নিয়ে বাংলাদেশ পরীক্ষা করবে, তাই দুই ওপেনার নিয়ে ছিল কৌতুহল।
নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করেন সৌম্য সরকার। সিরিজে চার ম্যাচে বাংলাদেশের চতুর্থ উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তৃতীয় ওভারে। নাসিম শাহর লেগ স্টাম্পের বল জায়গা করে নিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ক্যাচ দেন সৌম্য।
প্রথম ৩ ওভারে আসে কেবল ১০ রান। লিটনের পাল্টা আক্রমণে বাড়ে রানের গতি। প্রথম ৯ বলে কেবল ১ রান করা শান্ত দুই চারে রানের গতিতে কিছুটা দম দেন। তবে ফিরে যান এর পরেই। ওয়াসিমের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে যায় কিপারের কাছে।
শুরুতেই টান লাগে লিটনের পায়ে। দৌঁড়ানোর সময় তাই খুড়াচ্ছিলেন। তবে হাল ছেড়ে দেননি। দাঁতে দাঁত কামড়ে ব্যাটিং করে গেছেন, সাকিবের সঙ্গে গড়েছেন দারুণ জুটি।
একদিকে দৃষ্টিনন্দন সব শট খেলেন লিটন। আরেক পাশে বোলারদের উপর চড়াও হন সাকিব। দুই জনের জুটিতে রান আসতে থাকে দ্রুত।
৩১ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন লিটন, সাকিব ৩৪ বলে। তাদের জুটির পঞ্চাশও হয় ৩৪ বলে।
নাওয়াজকে সুইপ করতে গিয়ে গড়বড় করে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় লিটনের চমৎকার ইনিংস। ভাঙে ৮৮ রানের জুটি। এরপর প্রায় একাই খেলেন সাকিব। নাসিম শাহকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় বিদায় নেন ক্যাচ দিয়ে।
১৯তম ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৭০। এখান থেকে ১৮০-১৮৫ অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু ইয়াসির আলি ক্যাচ দেওয়ার পর আফিফ হোসেন রান আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশ করতে পারে কেবল ৩ রান!
রান তাড়ায় রিজওয়ান ও বাবরের শতরানের জুটিতে দৃঢ় ভিত পেয়ে যায় পাকিস্তান। এই জুটি বিচ্ছিন্ন করা যেত আগেই। যদি শরিফুল ইসলামের বলে ফাইন লেগে রিজওয়ানের ক্যাচ ধরতে পারতেন সাইফ। ক্যাচ ছাড়ার পর বোলিংয়ে এসে ‘নো’ বল করেন এই অলরাউন্ডার। ওভারে দেন ১৯ রান।
তিন বলের মধ্যে বাবর ও হায়দার আলিকে বিদায় করে দলকে লড়াইয়ে ফেরান হাসান। তার স্লোয়ার বাউন্সার পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর ক্যাচ দিলে ভাঙে ১০১ রানের জুটি। এক বল পর দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে যান হায়দার।
সাকিবের তখনও দুটি ওভার বাকি দেখেই হয়তো নাওয়াজকে প্রমোশন দিয়ে চারে পাঠানো হয়। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশ অধিনায়কের তিন বলে চার-ছক্কা-চার হাঁকিয়ে দেন আস্থার প্রতিদান। পরে সাইফের আরেকটি খরুচে ওভারে সমীকরণ আরও সহজ হয়ে যায় পাকিস্তানের জন্য।
২ ওভারে যখন প্রয়োজন ১৪ রান, তখন আক্রমণে আসেন সৌম্য। দারুণ বোলিংয়ে ৬ রান নিয়ে বিদায় করে দেন রিজওয়ানকে। শেষ ওভারে একটি ডট বলও খেলাতে পারেননি সাইফ। আসিফ আলি সিঙ্গেল নেওয়ার পর তিনটি ডাবলস নিয়ে দুই দলের রান সমতায় নিয়ে আসেন নাওয়াজ। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে।
সব ম্যাচেই হার দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষ হলো বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়ায় দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর শুরু হবে তাদের বিশ্বকাপ অভিযান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭৩/৬ (শান্ত ১২, সৌম্য ৪, লিটন ৬৯, সাকিব ৬৮, আফিফ ১১, ইয়াসির ১, নুরুল ২*, সাইফ ১*; নাসিম ৪-০-২৭-২, হাসনাইন ৪-০-৩৮-০, ওয়াসিম ৪-০-৩৩-২, শাদাব ৪-০-৩১-০, নাওয়াজ ৩-০-৩৭-১, ইফতিখার ১-০-৭-০)
পাকিস্তান: ১৯.৫ ওভারে ১৭৭/৩ (রিজওয়ান ৬৯, বাবর ৫৫, হায়দার ০, নাওয়াজ ৪৫*, আসিফ ২*; হাসান ৪-০-২৭-২, তাসকিন ৪-০-৩২-০, শরিফুল ৪-০-৩০-০, সাইফ ৩.৫-০-৫৩-০, সাকিব ৩-০-২৮-০, সৌম্য ১-০-৬-১)
ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান