প্রিমিয়ার লিগে তামিমের হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরি

আগের দিন সিলেটে জাতীয় দলের ওয়ানডে খেলে পরদিন ফতুল্লায় ঢাকা লিগের ম্যাচে দলকে জেতালেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 March 2023, 12:14 PM
Updated : 24 March 2023, 12:14 PM

বাংলাদেশ দলের হয়ে সেঞ্চুরির দেখা নেই লম্বা একটা সময় ধরে। কিন্তু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পুরোই ব্যতিক্রম তামিম ইকবাল। গত আসর যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই যেন এবার শুরু করলেন তিনি। বাঁহাতি এই ওপেনার উপহার দিলেন টানা তিনটি শতক!

চলতি আসরে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা তামিমের সেঞ্চুরিতে শুক্রবার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৭ উইকেটে হারায় প্রাইম ব্যাংক। প্রতিপক্ষকে ১৯৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৪৭ বল বাকি থাকতে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় তারা।

অনেকে অবশ্য এটুকু দেখেই ধন্দে পড়ে যেতে পারেন। আগের রাতেই তো সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিলেন তামিম! ব্যাপার হলো, জাতীয় দলের দায়িত্ব শেষে রাতেই ঢাকায় ফিরে শুক্রবার সকালে ফতুল্লায় চলে যান তিনি ঢাকা লিগের ম্যাচ খেলতে।

এই অভিযানে তার সঙ্গী মুশফিকুর রহিমও। প্রাইম ব্যাংকের জয়ে অবদান রাখেন তিনিও।

ইনিংস শুরু করতে নেমে দলকে জিতিয়ে ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ১২ চারে সাজানো ১৫৬ বলের ইনিংসে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। গত মৌসুমে লিগের শেষ দুই ম্যাচেও তিন অঙ্কের উষ্ণ স্বাদ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক।

এই ইনিংস খেলার পথে অবশ্য কয়েকবার জীবন পান তামিম। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কামরুল ইসলামের বলে ৫৬ রানে পয়েন্টে তার সহজ ক্যাচ ফেলা।

জাতীয় দলের হয়ে তামিমের সবশেষ সেঞ্চুরি গত বছরের মে মাসে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে। এরপর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ ইনিংস ব্যাটিং করে এখনও শতকের দেখা পাননি তিনি।

নারায়নগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডানের ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহরা ভালো শুরু পেলেও খেলতে পারেননি বড় ইনিংস।

২২ রান করে ফেরেন অধিনায়ক ইমরুল। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি সৌম্য করেন ১৭ রান। আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ১৮ রান।

দলটির প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের সবাই যান দুই অঙ্কে। কিন্তু কেউই করতে পারেননি পঞ্চাশ। সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন ওপেনার মাহিদুল ইসলাম।

প্রাইম ব্যাংকের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন নাসির হোসেন। দুটি করে প্রাপ্তি রুবেল হোসেন ও রেজাউর রহমান রাজা।

তামিম ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে শুরুটা ভালোই হয় জবাব দিতে নামা প্রাইম ব্যাংকের। তাদের ৭৩ রানের জুটি ভাঙে মিঠুনের বিদায়ে। এরপর দ্রুত বিদায় নেন নাসির ও ইয়াসির আলি চৌধুরি।।

৮৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে টানেন তামিম ও মুশফিকুর রহিম। দুইজনের অবিচ্ছিন্ন ১১৯ রানের জুটিতে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে যায় তারা।

১৪৫ বলে ক্যারিয়ারের ২২তম লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তামিম। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ২ চারে ৩৯ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৪২ ওভারে ১৯৯ (ইমরুল ২২, মাহিদুল ৪১, সৌম্য ১৭, অনুষ্টুপ ২৫, মাহমুদউল্লাহ ১৮, আরিফুল ২২, শুভাগত ২৬, এনামুল জুনি. ৯, কামরুল ১, রুয়েল ১, খালেদ ০*; রুবেল ৮-০-৫৪-২, শরিফুল ৬-০-২৬-১, নাসির ৬-২-২৯-৩, রাজা ৮-০-৩১-২, তাইজুল ১০-০-৪১-১, কাপালী ৪-০-৯-০)

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪২.১ ওভারে ২০২/৩ (তামিম ১০৯*, মিঠুন ৩১, নাসির ১, ইয়াসির ১, মুশফিক ৩৯*; খালেদ ৯-০-৪৬-২, রুয়েল ৮-০-৪৯-০, শুভাগত ১০-১-৩৪-১, আরিফুল ১-০-৩-০, কামরুল ৬-০-২২-০, এনামুল জুনি. ৬-০-৩২-০, সৌম্য ১-০-৬-০, ইমরুল ১.১-০-৫-০)

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল

সেঞ্চুরিতেও জেতাতে পারলেন না অমিত

চমৎকার এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন অমিত হাসান। ফিফটি করলেন সাজ্জাদুল হক। এরপর চিরাগ জানি ও মাশরাফি বিন মুর্তজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে ব্যাটিং ধসে অল্পতে গুটিয়ে গেল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে অনায়াস জয় তুলে নিল লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে রূপগঞ্জের জয় ৩ উইকেটে।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০৭ রান করে শাইনপুকুর। রূপগঞ্জের ইনিংসের মাঝে বৃষ্টি নামলে তাদের সামনে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৬ বলে ১৬৮ রানের। ৭ বল বাকি থাকতে যা পেরিয়ে যায় তারা।

লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তৃতীয় সেঞ্চুরিতে ৯ চারে ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন অমিত। ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৫৭ রান করেন সাজ্জাদ।

শাইনপুকুর শিবিরে প্রথম দুই ওভারে আঘাত হানেন চিরাগ ও আল আমিন হোসেন। ৪ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন ভারতের প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল ও অমিত। গড়েন ৫৩ রানের জুটি।

প্রিয়াঙ্কের পর আমিনুল ইসলামও দ্রুত বিদায় নিলে সাজ্জাদকে নিয়ে দলকে টানেন অমিত। সাজ্জাদকে ফিরিয়ে ১০৭ রানের জুটি ভাঙেন চিরাগ। ভারতীয় অলরাউন্ডার পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন ১৩৯ বলে সেঞ্চুরি করা অমিতকে।

মাঝের ওভারে ফরহাদ রেজাকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম শিকার ধরেন মাশরাফি। পরে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেন তিনি। ১৮ বলে শেষ ৬ উইকেট হারায় শাইনপুকুর।

সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন চিরাগ। মাশরাফির শিকার ৩টি।

রান তাড়ায় রূপগঞ্জের দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ও মুনিম শাহরিয়ার খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। দলকে পরে টানেন সাব্বির রহমান ও ইরফান শুক্কুর।

বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে তিন বলের মধ্যে সাব্বির (৩৬) ও মাশরাফিকে ফিরিয়ে রূপগঞ্জকে চেপে ধরেন শামসুর। দলকে টানেন চিরাগ ও ইরফান শুক্কুর।

১ ছক্কা ও ৪টি চারে ৪২ রান করা চিরাগকে বোল্ড করে দেন মেহেদি হাসান রানা। কিছুক্ষণ পর হাসান মুরাদ এক ওভারে বিদায় করেন ইরফান (৩ চারে ৪৩) ও সোহাগ গাজীকে।

ততক্ষণে জয়ের কাছে পৌঁছে গেছে রূপগঞ্জ। তাদেরকে নিরাপদেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন তানবির হায়দার ও মুক্তার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৭.৩ ওভারে ২০৭ (শামসুর ৪, খালিদ ০, প্রিয়াঙ্ক ২৩, অমিত ১০৪, আমিনুল ১৩, সাজ্জাদুল ৫৭, রেজা ১, মেহেদি রানা ১, মুরাদ ১, নাবিল ০*, নাহিদ ০; চিরাগ ৯-১-৩৭-৪, আল আমিন ৮-২-৪০-১, মুক্তার ২-০-১১-০, নাঈম জুনি. ৬-০-২০-১, তানবির ৫-০-২৭-০, সোহাগ ৯-০-৩২-০, মাশরাফি ৮.৩-০-৪০-৩)

লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: (লক্ষ্য ৩৬ ওভারে ১৬৮) ৩৪.৫ ওভারে ১৭০/৭ (মুনিম ১৭, পারভেজ ৫, সাব্বির ৩৬, ইরফান ৪৩, মাশরাফি ০, চিরাগ ৪২, তানবির ১০*, সোহাগ ২, মুক্তার ১*; নাহিদ ১.৩-০-৪-১, নাবিল ৬.৫-১-৩৭-০, মেহেদি রানা ৭.৩-০-৩৫-১, মুরাদ ৭-০-২৯-৩, রেজা ৩-০-২০-০, শামসুর ৭-০-২৫-২, আমিনুল ২-০-১৫-০)

ফল: ডিএলএস পদ্ধতিতে লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৩ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: চিরাগ জানি

ফজলে মাহমুদের সেঞ্চুরি

চারে নেমে দারুণ এক সেঞ্চুরি করলেন ফজলে মাহমুদ। সঙ্গে নুরুল হাসান সোহানের ফিফটিতে আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে নতুন লক্ষ্যে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না ব্রাদার্স ইউনিয়ন।

বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে শিরোপাধারী শেখ জামালের জয় ১১ রানে।

টস হেরে আগে ব্যাটিং করে ২৮৭ রানের পুঁজি গড়ে তারা। ব্রাদার্সের ইনিংসের মাঝে বৃষ্টি হানা দিলে তাদের সামনে নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৯ ওভারে ২০৭ রানের। ১৯৫ রানে অলআউট হয়ে যায় দলটি।

৩ ছক্কা ও ৬ চারে ১১৬ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন ফজলে মাহমুদ। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে যা তার দশম সেঞ্চুরি।

১ ছক্কা ও ৫ চারে ৬৪ বলে ৬৬ রান করেন সোহান। ৪২ রানের কার্যকর ইনিংস খেলেন রবিউল ইসলাম।

ব্রাদার্সের হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি করে উইকেট নেন মেহেদি হাসান ও সাকলাইন সজিব।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো বাদার্সের হয়ে ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন সাব্বির হোসেন। ১ ছক্কা ও ৮ চারে ৫৩ রান করেন জাহিদুজ্জামান।

দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শেখ জামালের জয়ের কারিগরদের একজন জিয়াউর রহমান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৮৭/৬ (সাইফ ২৪, সৈকত ৫, রবিউল ৪২, ফজলে মাহমুদ ১০১, সোহান ৬৬, জিয়াউর ৬, পারভেজ ৬*, তাইবুর ১৭*; মেহেদি ১০-০-৬০-৩, মানিক ৯-০-৫০-০, সাব্বির ৭-০-৪২-০, মাইশুকুর ১-০-২-০, সজিব ১০-০-৫৫-৩, রাহাতুল ১০-০-৫৫-০, আনিসুল ২-০-২০-০)

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: (লক্ষ্য ২৯ ওভারে ২০৭) ২৭.৪ ওভারে ১৯৫ (মিজানুর ২১, তানজিদ ১০, সাব্বির ৫৪, আনিসুল ৯, মাইশুকুর ১১, জাহিদুজ্জামান ৫৩, নাদিফ ৮, রাহাতুল ০, মানিক ২, সজিব ৮, মেহেদি ৭*; শফিকুল ৪.৪-০-৩১-২, পারভেজ ৬-০-৫২-১, মৃত্যুঞ্জয় ৪-০-৪৪-০, আরিফ ৫-০-২৫-১, তাইবুর ৪-০-১১-২, জিয়াউর ৪-০-২৯-৪)

ফল: শেখ জামাল ডিএলএস পদ্ধতিতে ১১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: ফজলে মাহমুদ