কিষানের বিস্ফোরক ডাবল সেঞ্চুরিতে রেকর্ড আর রেকর্ড

বাংলাদেশের বোলিং গুঁড়িয়ে ইশান কিষানের ডাবল সেঞ্চুরি ও বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বইয়ে তোলপাড়।

চট্টগ্রাম থেকে ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2022, 10:57 AM
Updated : 10 Dec 2022, 10:57 AM

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ইশান কিষান ছিলেন দর্শক। শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের তিনি বানিয়ে রাখলেন দর্শক। ভারতের এই তরুণ ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে বল ছুটতে থাকল মাঠের নানা প্রান্তে, উড়তে থাকল নানা সীমানায়। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামের ২২ গজে ব্যাটিং তাণ্ডবে ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে তিনি ঝড় তুললেন রেকর্ড বইয়েও।

বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে শনিবার চট্টগ্রামের ১৩১ বলে ২১০ রানের ইনিংস উপহার দেন কিষান। ওয়ানডেতে মাত্র নবমবার ব্যাট করতে নামা ব্যাটসম্যান প্রথম সেঞ্চুরিতে পৌঁছান ৮৫ বলে। এরপর যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ গুঁড়িয়ে পরের একশ করেন তিনি স্রেফ ৪১ বলেই। 

বিধ্বংসী এই ইনিংসের পথে ২৪ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান নাম লেখান একগাদা রেকর্ডে। পাশাপাশি বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি ও ভারতের চারশ ছাড়ানো ইনিংসেও জন্ম হয় কিছু রেকর্ডের।

ঝড়ের বেগে

ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি হলো মোট ৯টি। তাদের মধ্যে দ্রুততম ইশান কিষানই। ১২৬ বল খেলে দুইশ ছুঁয়ে তিনি অনেকটা ব্যবধানে পেছনে ফেলেন ক্রিস গেইলকে।

২০১৫ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গেইল ডাবল সেঞ্চুরি করেন ১৩৮ বলে।

সর্বকনিষ্ঠ

 

২৪ বছর ১৪৫ দিন বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন কিষান। তার চেয়ে কম বয়সে এই মাইলফলক ছুঁতে পারেননি আর কেউ।

কিষান পেছনে ফেলেন ওয়ানডে দলে তার নিয়মিত অধিনায়ককে। রোহিত শর্মা তার তিন ডাবল সেঞ্চুরির প্রথমটি করেন ২৬ বছর ১৮৬ দিন বয়সে।

শুরুতেই প্রস্ফুটিত

ক্যারিয়ারের মাত্র নবম ওয়ানডে ইনিংসেই ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে গেলেন ইশান কিষান। এত কম ইনিংসে এই উচ্চতা ছুঁতে পারেননি আর কেউ।

আগের রেকর্ডটি ছিল ফখর জামানের। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যখন ২১০ রানের ইনিংসটি খেললেন পাকিস্তানি ওপেনার, সেটি ছিল তার ১৭তম ইনিংস।

অনন্য

প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিকেই ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান ইশান কিষান।

নতুন কিছু

বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি হলো এবারই প্রথম। আগের সর্বোচ্চ ইনিংসটি ছিল চার্লস কভেন্ট্রির। ২০০৯ সালে বুলাওয়ায়োতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান করেছিলেন ১৫৬ বলে অপরাজিত ১৯৪।

প্রথম কিছু

ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো মাঠে ডাবল সেঞ্চুরি হলো এই প্রথমবার। আগের সর্বোচ্চ ছিল শেন ওয়াটসনের। ২০১১ সালের এপ্রিলে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ৯৬ বলে ১৮৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার।

মুখোমুখি লড়াইয়ের সেরা

বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের ৩৯তম ওয়ানডে এটি। তাদের হয়ে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রানের আগের রেকর্ড ছিল বিরেন্দর শেবাগের। ২০১১ বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মিরপুরে ভারতীয় ওপেনার করেছিলেন ১৪০ বলে ১৭৫।

মাঠের সেরা

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দেড়শ রানের ইনিংসও ছিল না আর কারও। আগের সর্বোচ্চ ছিল বাংলাদেশের লিটন দাসের ১৩৬, গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

বিদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই মাঠে সর্বোচ্চ ছিল ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামসের অপরাজিত ১২৯।

চারের চূড়ায়

বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারির রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন ইশান কিষান। তার ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল এ দিন ২৪টি। শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশান আগের রেকর্ডটি করেছিলেন ২২ বাউন্ডারিতে।

এছাড়া এই ইনিংসে ১০টি ছক্কাও মারেন কিষান। এটি অবশ্য রেকর্ড নয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছক্কা শেন ওয়াটসনের ১৫টি। ১১টি ছক্কা মেরে দুইয়ে দিনেশ রামদিন।

এক ধাপ এগিয়ে কোহলি

তিন সংস্করণ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি রেকর্ডে এতদিন বিরাট কোহলি যৌথভাবে ছিলেন রিকি পন্টিংয়ের পাশে। এবার ৯১ বলে ১১৩ রানের ইনিংস খেলে তিনি এগিয়ে গেলে এক ধাপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭২ সেঞ্চুরি নিয়ে কোহলি এখন শচিন টেন্ডুলকারের (১০০ সেঞ্চুরি) পর এককভাবে দুইয়ে।

যুগলবন্দি

ইশান কিষনের ডাবল সেঞ্চুরির পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেছেন বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন যোগ করেছেন ২৯০ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটি।

আগের রেকর্ড ছিল ২০১৭ সালে উদ্বোধনী জুটিতে হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি ককের অবিচ্ছিন্ন ২৮২ রান।

দ্বিতীয় উইকেটে আগের সেরা ছিল ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস ও জোনাথন ট্রটের ২৫০ রান।

কিষান ও কোহলির ২৯০ রানের জুটি অল্পের জন্য ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশের মাঠে সর্বোচ্চ জুটিকে। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে ২৯২ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাস।

সীমানা পেরিয়ে

৫০ ওভারে ৪০৯ রান করে থেমেছে ভারত। ওয়ানডেতে চারশ রানের ইনিংস এখন আর বিস্ময় নয় অনেক দিন ধরেই। সব মিলিয়ে ২২ বার এই স্কোর দেখল ওয়ানডে ক্রিকেট। তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো দল চারশ করতে পারল এই প্রথম।

বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের ৩৯১।

আধ ডজন চারশ

এই নিয়ে ৬ বার ওয়ানডেতে চারশ রান স্পর্শ করল ভারত। সবচেয়ে বেশি চারশর রেকর্ডে তারা ছুঁয়ে ফেলল দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

গত কয়েক বছরে ওয়ানডে ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলা ইংল্যান্ড এটি করতে পেরেছে ৫ বার।