ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকাতে টার্নিং উইকেট তৈরি করে বিধ্বস্ত হলো পাকিস্তানের ব্যাটিং, ম্যাচে ৯ উইকেট আর সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের নায়ক জোমেল ওয়ারিক্যান।
Published : 27 Jan 2025, 12:55 PM
যে কৌশলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান, সেটিতে সর্বনাশ হলো তাদেরই। টার্নিং উইকেটে টপাটপ পতন হলো তাদের একেকটি উইকেটের। জোমেল ওয়ারিক্যান ও অন্য দুই স্পিনারের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে স্মরণীয় এক জয় দিয়ে প্রায় তিন যুগের খরা কাটাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ম্যাচের প্রথম দুই দিন শেষেই পরাজয়ের খড়গ ঝুলছিল পাকিস্তানের সামনে। তৃতীয় দিনে সোমবার খেলা শেষ করতে এক সেশনও লাগেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মুলতান টেস্টে ১২০ রানে জিতে দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র করল ক্যারিবিয়ানরা।
৩৪ বছরের বেশি সময় পর পাকিস্তানে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সবশেষ ১৯৯০ সালে ফায়সালাবাদে ৭ উইকেটে জিতেছিল তারা। ডেসমন্ড হেইন্সের নেতৃত্বে সেই জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল ক্যারিবিয়ানদের পেস ব্যাটারি- ম্যালকম মার্শাল, কোর্টনি ওয়ালশ, কার্টলি অ্যামব্রোস ও ইয়ান বিশপ। এবার টার্নিং উইকেটে দলকে জেতাল ক্যারিবিয়ান স্পিনত্রয়ী।
সেই তিনজনের মধ্যেও উজ্জ্বলতম জোমেল ওয়ারিক্যান। আগের টেস্টে ১০ উইকেট নিয়েও পরাজয়ের বেদনায় পুড়তে হয়েছিল তাকে। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৫টি ও ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে এই বাঁহাতি স্পিনারই নায়ক।
এই সফরের আগে ১৭ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ওয়ারিক্যানের উইকেট ছিল মোট ৫৪টি। ম্যাচে ১০ উইকেট তো বহুদূর, ইনিংসে ৫ উইকেটও ছিল না একটিও। এই সিরিজে তিনি প্রথম টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৩২ রানে ৭ উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচে প্রথমবার ১০ উইকেটের স্বাদ পেয়েছেন। এবার আরও এক দফায় ৫ উইকেট নিয়ে জেতালেন দলকে।
ওয়ারিক্যানের ৫ উইকেটের সঙ্গে ৩ উইকেট নিয়েছেন অফ স্পিনার কেভিন সিনক্লেয়ার, ২টি বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চমবার প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট ধরা দিল শুধুই স্পিন বোলিংয়ে।
৪ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা পাকিস্তান টালমাটাল হয়ে পড়ে দিনের প্রথম ওভারেই। তৃতীয় বলেই সিনক্লেয়ার ফেরান সাউদ সাকিলকে। নাইটওয়াচম্যান কাশিফ আলিকে পরের ওভারে বিদায় করেন ওয়ারিক্যান।
এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সালমান আলি আগা কিছুটা লড়াই করেন। সালমানকে ১৫ রানে ফিরিয়ে এই জুটি ৩৯ রানে থামান ওয়ারিক্যান। এরপর আর ম্যাচ শেষ হতে সময় লাগেনি খুব একটা।
দারুণ এক আর্ম বলে রিজওয়ানকে (২৫) বোল্ড করেন ওয়ারিক্যান। পরে সাজিদ খানকে বোল্ড করে ৫ উইকেট পূরণ করার পাশাপামি ম্যাচও শেষ করে দেন তিনি।
ম্যাচের প্রথম দিনে নোমান আলির হ্যাটট্রিকে এক পর্যায়ে ৩৮ রানে ৭ উইকেট ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পরে নবম উইকেটের পতন হয়েছিল ৯৫ রানে। এরপর শেষ উইকেটে ৬৮ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়েন দুই স্পিনার মোটি ও ওয়ারিক্যান। সেটিই পরে হয়ে রইল মহামূল্য। ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ নজির গড়ে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সিরিজে ১৯ উইকেট আর মূল্যবান ৮৫ রান করে ম্যান অব দা সিরিজ ওয়ারিক্যান। হ্যাটট্রিকসহ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েও এবার পরাজিত দলে নোমান আলি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৬৩
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১৫৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ২৪৪
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৪৪ ওভারে ১৩৩ (আগের দিন ৭৬/৪) (সাকিল ১৩, কাশিফ ১, রিজওয়ান ২৫, সালমান ১৫, সাজিদ ৭, নোমান ৬, আবরার ০*; মোটি ১১-৩-৩৫-২, সিনক্লেয়ার ১৭-১-৬১-৩, ওয়ারিক্যান ১৬-৬-২৭-৫)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১২০ রানে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজ ১-১ ড্র।
ম্যান অব দা ম্যাচ ও সিরিজ: জোমেল ওয়ারিক্যান।