বিশ্বকাপে খেলার দাবি কতটা জানাতে পারলেন মাহমুদউল্লাহ-আফিফ-এনামুল-নাঈম

দলে জায়গা হারানো এই চারজনের সঙ্গে জাকির হাসান, নুরুল হাসান সোহানও বিশ্বকাপের জন্য বিবেচনায় থাকতে পারেন বলে মনে করেন আবাহনীর কোচ ও বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 05:39 AM
Updated : 14 May 2023, 05:39 AM

ফাইনালে রূপ নেওয়া ম্যাচে মিরপুরে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে যখন আবাহনীকে শিরোপার ঠিকানায় নিয়ে গেলেন আফিফ হোসেন, বিকেএসপিতে তখন শেষের ঝড়ে মোহামেডানকে রোমাঞ্চকর জয় এনে দিলেন মাহমুদউল্লাহ। প্রায় কাছাকাছি সময়েই দারুণ দুটি ইনিংস খেলে শনিবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ অভিযানের ইতি টানলেন দুজন। এই ইনিংস ও এবারের লিগের পারফর‌ম্যান্স কি দুজনকে বয়ে নিতে পারবে বিশ্বকাপের মোহনায়?

চ্যাম্পিয়ন দল আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদের মতে, বিশ্বকাপ দলে থাকার জন্য নিজেদের কাজটা অন্তত করে রাখতে পারলেন মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ। তবে শুধু এই দুজনই নন, দাবি জানানোদের তালিকায় বিসিবি এই পরিচালক রাখছেন এনামুল হক, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নুরুল হাসান সোহান ও জাকির হাসানকেও। তবে তিনি এটিও যোগ করছেন, বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে এখন ফাঁকা জায়গা খুব একটা নেই।

বিশ্বকাপ যদিও এখনও প্রায় ৫ মাস দূরে, তবে সম্ভাব্য স্কোয়াড নিয়ে নানা জল্পনা চলছে আরও বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। সেই আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফের নাম। খুব বেশি দিন হয়নি, দুজনই ছিলেন ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্য। এখন দুজনই বাইরে।

দুজনের ক্ষেত্রেই বাইরে রাখার সময় বলা হয়েছিল ‘বিশ্রাম’ কিংবা ‘বিরতির’ কথা। কিন্তু পরে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়ে গেছে ‘বাদ।’ এবারের লিগ তাই দুজনের জন্যই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। বিশ্বকাপ দলে থাকার দাবি জানানোর বড় সুযোগ।

আফিফ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন নিশ্চিতভাবেই। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে তিনি ব্যাটিং অর্ডারে ৬ নম্বরের ওপরে খেলতে পেরেছেন ক্যারিয়ারের ২২ ইনিংসের মধ্যে স্রেফ ৩টিতে। তবে বরাবরই তার পছন্দ ওপরের দিকে ব্যাটিং। এবারের লিগে আবাহনীর হয়ে তিনি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিন-চার-পাঁচ নম্বরে। ১৩ ইনিংস খেলে রান করেছেন ৫৫০। ব্যাটিং গড় ৫৫, স্ট্রাইক রেট ১১০.৬৬। 

লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা এবারের লিগেই পেয়েছেন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। এছাড়াও দলের চাপের মধ্যে খেলেছেন বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত ইনিংস। আবাহনীকে যা বিপদ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে জয়ের দিকে। বোলিং খুব একটা করেননি।

মাহমুদউল্লাহর চ্যালেঞ্জটা ছিল আরও বড়। এই ৩৭ বছর বয়সে দলে ফেরা এবং বিশ্বকাপের মতো জায়গায় স্কোয়াডে থাকার দাবি জানাতে প্রয়োজন ছিল এবারের লিগে বিশেষ কিছু করা। সেই জায়গায় প্রাথমিক পর্বে তার ঘাটতি ছিল যথেষ্টই। তবে সুপার লিগে তার ধারাবাহিকতা ছিল ভালো। ৫ ইনিংসের ৩টিতে ফিফটি করেন, আরেকটিতে ছিল ৪০।

লিগের ১৫ ইনিংসে তার রান ৩৬.৪২ গড়ে ৫১০। স্ট্রাইক রেট লিগের বেশির ভাগ সময় খুব ভালো না রাখতে পারলেও তবে শেষ দিকে পারফর্ম করে শেষ পর্যন্ত তার স্ট্রাইক রেট ৮৭.১৭। বোলিংয়ে খুব বেশি তাকে দরকার হয়নি মোহামেডানের। উইকেট নিয়েছেন ৩টি।

এই পারফরম্যান্স জাতীয় দলে ফেরার জন্য যথেষ্ট কি না, সেই সংশয় থাকছেই। তবে লিগ শেষে খালেদ মাহমুদ বললেন, বিবেচনায় থাকার মতো পারফরম্যান্স অন্তত করেছেন মাহমুদউল্লাহ।

“দাবি তো অনেকেই জানাতে পারে। একটা ব্যাপার হলো, আমাদের দলটা কিন্তু থিতু একটা দল। যারা যাচ্ছে, সবাই ভালো করছে। (তাওহিদ) হৃদয় গিয়ে এত ভালো খেলল, ভালো করছে দলটা। খুব একটা রদবদলের জায়গা যে আছে, তা নয়।”

“তারপরও আপনি হয়তো রিয়াদকে (মাহমুদউল্লাহ) দেখতে পারেন, তার অভিজ্ঞতার জায়গা আছে। আফিফ যে রকম খেলেছে এবারের লিগে, দারুণ কিছু ম্যাচ জিতিয়েছে আমাদেরকে। সোহানের কথা বলতে পারেন। ওপরের দিকে নাঈম, বিজয়, জাকির… অনেক ক্রিকেটার ভালো ফর্মে ছিল এবারের লিগে।”

স্রেফ দুটি ওয়ানডে ও একটি ইনিংস খেলেই বাংলাদেশ ওয়ানডে দল থেকে জায়গা হারানো মোহাম্মদ নাঈম শেখ এবারের লিগের সর্বোচ্চ রান স্কোরার। ৭১.৬৯ গড় ও ৯১.৬৪ স্ট্রাইক রেটে তার রান ৯৩২। ২৩ বছর বয়সী ওপেনারের ধারাবাহিকতা ছিল নজরকাড়া। ১৬ ইনিংসের ১১টিতেই পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন, শতরান যদিও কেবল একটিই।

গত মৌসুমের ঢাকা লিগে ১ হাজার ১৩৮ রানের রেকর্ড গড়ে জাতীয় দলে জায়গা আদায় করে নিয়েছিলেন এনামুল হক। পরে সেই জায়গা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞ এই ৩০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান গতবারের মতো না হলেও সফল লিগ কাটিয়েছেন এবারও। লিগের সর্বোচ্চ ৩ সেঞ্চুরি এসেছে তার ব্যাট থেকেই।

প্রাথমিক পর্বে দারুণ খেলে সুপার লিগে এসে অবশ্য কিছুটা ছন্দ হারান তিনি। এখানে ৫ ম্যাচের মধ্যে কেবল পঞ্চাশ ছাড়াতে পারেন শেষ ম্যাচটিতেই। শেষ পর্যন্ত ১৬ ইনিংসে ৩টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৫৯.৫৭ গড় তার রান ৮৩৪। স্ট্রাইক রেট ৯৭.৩১।

সোহানের জন্য লিগের প্রাথমিক পর্ব ছিল হতাশামায়। ৯ ইনিংস খেলে তার ফিফটি ছিল মোটে ১টি। সুপার লিগের প্রথম ম্যাচেও তিনি ব্যর্থ হন। তবে এরপর শেষ ৪ ম্যাচে দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলে শেষটা রাঙিয়ে রাখেন তিনি। এই ৪ ইনিংসে তার রান ৬০ বলে ৭০, ৪৫ বলে ৫৩, ৭৭ বলে ৬২ ও ৭০ বলে ৮৯। সব মিলিয়ে ১৪ ইনিংসে ৪৬.৪৫ গড়ে তার রান ৫১১, স্ট্রাইক রেট ৯৪.৬২।

বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে ডাক পাওয়ার পর ম্যাচ না খেলেই চোটের কারণে ছিটকে পড়া জাকির হাসান ওই চোটের কারণে খেলতে পারেনি প্রিমিয়ার লিগের প্রাথমিক পর্বেও। সুপার লিগে ফিরেই প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি উপহার দেন তিনি। পরের ম্যাচে করেন ফিফটি। শেষ তিন ম্যাচে অবশ্য আর পঞ্চাশের দেখা পাননি।

তবে লিগে তারা পারফর্ম করলেও বাস্তবতা আগেই বলে দিয়েছেন খালেদ মাহমুদ, বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে জায়গা খুব একটা ফাঁকা নেই। এখনকার দল থেকে বিশ্বকাপের দলেও তাই পরিবর্তন হয়তো খুব একটা হবে না। তবে প্রিমিয়ার লিগে সবার এমন পারফরম্যান্স ও প্রতিযোগিতায় বিশ্বকাপের সীমানা ছাপিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য দারুণ সুখবর বলে মনে করেন নানা ভূমিকায় জাতীয় দলে কাজ করা খালেদ মাহমুদ।

“বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এই খুবই ভালো দিক যে আমাদের এখানে এতটা স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এখানে জায়গা একটা, দাবিদার হয়তো অনেক জন। এখন টিম ম্যানেজমেন্টকে বেছে নিতে হবে বিশ্বকাপের ওই কন্ডিশনের জন্য কে ভালো হতে পারে আমাদের জন্য। তবে সব মিলিয়ে এমন প্রতিযোগিতা আমাদের ক্রিকেটের জন্য ভালো।”

“এই প্রতিযোগিতা থাকলে আমাদের ক্রিকেট আরও উন্নতি করবে। সবাই চাইবে যে জাতীয় দলের দরজা কখন খুলবে আমার জন্য। আফিফ এখন হয়তো বাইরে আছে, সে চেষ্টা করছে ফেরার। এই প্রতিযোগিতা আমাদের জন্য খুব ভালো। আমাদের দল আরও ভালো হবে।”