শেষ ওভারে ম্যাথু ফোর্ডের ছক্কা ও চারে ফরচুন বরিশালকে হারিয়ে প্রথম জয় পেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
Published : 23 Jan 2024, 09:32 PM
৪ বলে প্রয়োজন তখন ১১ রান। মাত্রই তখন ক্রিজে এসেছেন ম্যাথু ফোর্ড, যার মূল কাজ বোলিং। সেই তিনিই জ্বলে উঠলেন ব্যাট হাতে। সৈয়দ খালেদ আহমেদের পরপর দুই বলে ছক্কা-চার মেরে দিলেন তিনি দারুণ দুটি শটে। পরের বল কভারের দিকে মেরেই ছুট দিলেন তিনি। ড্রেসিং রুমের পথে অনেকটা ছুটে গিয়ে মেতে উঠলেন খ্যাপাটে উদযাপনে।
ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের শেষের ঝলকেই আসরের প্রথম জয় পেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষ ওভারের নাটকীয়তায় ফরচুন বরিশালকে হারাল তারা ৪ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার ১৬২ রানের লক্ষ্য এক বল বাকি থাকতে টপকে যায় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
দ্বিতীয় ম্যাচে এটি তাদের প্রথম জয়। জয়ে শুরুর পর বরিশাল হারল টানা দুই ম্যাচে।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাকি ছিল ১৩ রান। খালেদের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি জাকের আলি। বাই রান নেওয়ার চেষ্টায় মুশফিকুর রহিমের দারুণ থ্রোয়ে রান আউট হন খুশদিল শাহ।
বরিশালের শরিরী ভাষায় মনে হচ্ছিল, এতেই হয়তো জয়ের পথে এগিয়ে গেছে তারা।
তবে ফোর্ডের ভাবনা ছিল ভিন্ন। উইকেটে গিয়ে প্রথম বলে দুই রান নেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথে পাওয়া পরের বলটি লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারেন তিনি পেশির জোরে। পরের বলটি হাফ ভলি পেয়ে দারুণ টাইমিং আর প্লেসমেন্টে চার মেরে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন তিনি। পরের বলে আসে জয়সূচক রান।
কুমিল্লার এই জয়ে আবারও বৃথা গেল মুশফিকের ফিফটি। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে সোমবার ৬৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে তিনি থাকেন পরাজিত দলে। পরদিন তার ব্যাট থেকে এলো ৬২ রান। কিন্তু ইমরুল কায়েসের ফিফটির সঙ্গে বাকিদের ছোট ছোট অবদানে সেটি ছাপিয়ে গেল কুমিল্লা।
বল হাতে ২ উইকেটের পর ক্যামিওর সৌজন্যে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ফোর্ড।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি কুমিল্লার। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে স্রেফ ৩৮ রান করে তারা। একশ ছুঁতে লেগে যায় ১৪ ওভার। একপ্রান্তে ইমরুল রয়েসয়ে খেললেও বাকিরা তেমন সহায়তা করতে পারেনি তাকে।
শেষ দিকে জাকের আলি ও খুশদিল শাহর ছোট তবে কার্যকর দুটি ইনিংসে জাগে জয়ের সম্ভাবনা। পরে ফোর্ড শেষ করেন বাকি কাজ।
আগের রাতে ঢাকায় পৌঁছে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে বেশি দূর যেতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান। চতুর্থ ওভারে ফেরার আগে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৫ বলে ১৮ রান করেন তিনি। দুনিথ ওয়েলালাগের পরের বলে ইনসাইড আউট ধরনের শট খেলতে গিয়ে খালি হাতে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়।
নবম ওভারে আউট হন লিটন কুমার দাস। ১৮ বল খেলে ১৩ রান করে ফেরেন কুমিল্লা অধিনায়ক। স্কোরবোর্ডে স্রেফ তখন ৫৬ রান।
নিজের পছন্দের ওপেনিং ছেড়ে এদিন চার নম্বরে নামেন ইমরুল। শুরুতে কিছুটা ধুঁকতে দেখা যায় তাকে। প্রথম ২৫ বলে তিনি করেন স্রেফ ২৩ রান। অন্য প্রান্তে রোস্টন চেইস আউট হন ১৫ বলে ১৩ রান করে। কুমিল্লার রান রেট তখন ছয়ের আশপাশে।
এরপর হাত খোলেন ইমরুল। সেখান থেকে দুটি করে ছক্কা-চারে ৩৯ বলে তিনি পূর্ণ করেন নিজের ফিফটি। ইনিংস টেনে নিতে পারেননি। ৪১ বলে ৫২ রান করে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন কুমিল্লার সাবেক অধিনায়ক।
২১ বলে ৪৬ রানের সমীকরণে ক্রিজে যান খুশদিল। ওই ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা মেরে কুমিল্লা শিবিরে স্বস্তি আনেন জাকের।
পরের ওভারে পয়েন্টে খুশদিলের ক্যাচ ছেড়ে বাউন্ডারিতে যেতে দেন প্রিতম কুমার। ১ রানে জীবন পাওয়া পাকিস্তানি অলরাউন্ডার পরে মারেন আরও একটি চার। পরের ওভারে আব্বাস আফ্রিদির বলে আবারও তাকে জীবন দেন প্রিতম।
দুইবার বেঁচে যাওয়া খুশদিল রান আউট হওয়ার আগে ৭ বলে করেন ১৪ রান। তার বিদায়ের পর বাকি ছিল ৫ বলে ১৩ রান। যা দারুণ দক্ষতায় নেন ফোর্ড।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালের শুরুটা হয় হতাশার। ইব্রাহিম জাদরানকে বাইরে রাখায় এদিন ওপেনিংয়ে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম বলেই ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন তিনি।
অন্য প্রান্তে তামিম চেষ্টা করেন রানের চাকা সচল রাখতে। প্রথম ওভারে তানভির ইসলামকে বাউন্ডারির পর ফোর্ডকে মারেন একটি করে চার ও ছক্কা।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ সময় কাটানো প্রিতম কুমার কাজে লাগাতে পারেননি বিপিএলে প্রথম সুযোগ। রোস্টন চেইসের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে ওয়াইড লং অনে ধরা পড়েন ৮ রান করা ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মারেন সৌম্য সরকার। পরের ওভারে আলিস আল ইসলামের বলে রিভার্স সুইপে ছক্কার পর শেষ বলে মারেন চার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে চেইসের বলে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন তামিম। পঞ্চাশের আগে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন মুশফিক ও সৌম্য। চতুর্থ উইকেটে তারা গড়েন ৪৫ বলে ৬৬ রানের জুটি।
আগের ম্যাচে ঝকঝকে ইনিংস খেলা মুশফিক এদিন করেন আঁটসাঁট শুরু। ত্রয়োদশ বলে তিনি পান প্রথম বাউন্ডারি। আলিসের পরপর দুই বলে তিনি মারেন ছক্কা।
একাদশ ওভারে তানভিরের বলে লং অনে সৌম্যর সহজ ক্যাচ ছাড়েন ম্যাথু ফোর্ড। ওই ওভারেই ছক্কা মেরে কুমিল্লার আক্ষেপ বাড়ান সৌম্য। ২২ রানে বেঁচে যাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান যোগ করেন আরও ২০ রান।
দলকে একশ পার করিয়ে মুস্তাফিজের স্লোয়ার ইয়র্কারে বোকা বনে যান সৌম্য। বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ বলে ৪২ রান করেন তিনি।
সৌম্য ফেরার আগে বিপিএলে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিক। বরিশালের ইনিংসের বাকিটাও টানেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। মুস্তাফিজের বলে টানা তিন চার মেরে তিনি পঞ্চাশ পূর্ণ করেন ৩৫ বলে।
শেষ ওভারে মুস্তাফিজই ফেরান মুশফিককে। স্লোয়ার ডেলিভারি স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেট ক্যাচ দেন এই কিপার-ব্যাটসম্যান। ৪৪ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৪ চার ও ২ ছক্কায়।
অন্য কেউ তেমন সঙ্গ দিতে না পারায় শেষটা ভালো হয়নি বরিশালের। শেষ সাত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে স্রেফ ৫২ রান করে তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৬১/৯ (তামিম ১৯, মিরাজ ০, প্রিতম ৮, সৌম্য ৪২, মুশফিক ৬২, মালিক ৭, মাহমুদউল্লাহ ৪, ওয়েলালাগে ৪, আফ্রিদি ৭, ইমরান ১*; তানভির ৩-০-২৬-১, চেইস ৪-০-২৫-২, ফোর্ড ৪-০-৩৩-২, আলিস ৩-০-৩০-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩২-৩, খুশদিল ২-০-১৩-১)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৫ ওভারে ১৬৫/৬ (লিটন ১৪, রিজওয়ান ১৮, হৃদয় ০, ইমরুল ৫২, চেইস ১৩, জাকের ২৩*, খুশদিল ১৪, ফোর্ড ১৬*; ইমরান ৪-০-৩৬-০, আফ্রিদি ৪-০-৪০-১, ওয়েলালাগে ৪-০-২৬-৩, মিরাজ ৪-০-২৬-০, খালেদ ৩.৫-০-৩২-১)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ম্যাথু ওয়াল্টার ফোর্ড