ভারতকে সিরিজ জিততে হলে ভিরাট কোহলিকে জ্বলে উঠতে হবে, অভিমত দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিসের।
Published : 11 Dec 2023, 10:35 AM
দক্ষিণ আফ্রিকায় কখনও টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি ভারত। এবার পারবে কি না, সেই উত্তর লুকিয়ে ভিরাট কোহলির ব্যাটে। জ্যাক ক্যালিসের বিশ্বাস অন্তত এমনটিই। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এই অলরাউন্ডারের মতে, চ্যালেঞ্জিং এই কন্ডিশনে ভারতকে সিরিজ জিততে হলে নিজের সেরা চেহারায় থাকতে হবে কোহলিকে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখনও পর্যন্ত ৮টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে ভারত। সেরা সাফল্য ২০১০ -১১ মৌসুমের সফরে তিন ম্যাচের সিরিজ ড্র করা। এছাড়া বাকি ৭টি সিরিজেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
এবার আরেকটি সুযোগ রোহিত শার্মার দলের সামনে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে তারা দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হবে। সেঞ্চুরিয়নে বক্সিং ডে টেস্ট ২৬ ডিসেম্বর থেকে, কেপ টাউনে নিউ ইয়ার টেস্ট ৩ জানুয়ারি থেকে।
এই সিরিজ দিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করবে দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের এটি হবে দ্বিতীয় সিরিজ। নাম বা তারকার ধারে-ভারে ও অভিজ্ঞতায় এগিয়ে ভারত। কিন্তু কন্ডিশনের কারণে সিরিজে কিছুটা এগিয়ে থেকে শুরু করবে প্রোটিয়ারা।
তবে দুই দলের সেই ব্যবধান ব্যাট হাতে ঘুচিয়ে দিতে পারেন কোহলি, স্টার স্পোর্টসে আলোচনায় বলেছেন ক্যালিস।
“আমি নিশ্চিত, দক্ষিণ আফ্রিকায় দারুণ একটি সিরিজ কাটাতে চাইবে সে (কোহলি)। সে বেশ ভালো ফর্মে আছে। আমার ধারণা, ভারতের হয়ে বড় ভূমিকা রাখবে সে। তাদেরকে যদি জিততে হবে, অবশ্যই তাকে খুব ভালো একটি সিরিজ কাটাতে হবে।”
এমনিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোহলির রেকর্ড দারুণ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ১৪ টেস্ট খেলে ৩ সেঞ্চুরিতে তার ব্যাটিং গড় ৫৬.১৮। তবে শুধু এই কারণেই নয়, কোহলির ওপর দলের ভরসা দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে অসাধারণ রেকর্ডের কারণেও।
উপমহাদেশের বেশির ভাগ গ্রেট ব্যাটসম্যানের দক্ষিণ আফ্রিকায় রেকর্ড বেশ বিবর্ণ। সেখানে ১১ টেস্ট খেলে রাহুল দ্রাবিড়ের গড় ২৯.৭১, ৮ টেস্ট খেলে কুমার সাঙ্গাকারার গড় ৩৫.৭৫, সমান টেস্ট খেলে মাহেলা জায়াওয়ার্দেনের গড় ২৭.৮৭, একই সমান টেস্ট খেলে ইনজামাম-উল-হকের গড় ৩১.৭৮ ও ইউনিস খানের গড় ৩২.৬০, ৮ টেস্ট খেলেই ভিরেন্দার শেবাগের গড় ২৫.৪৬। ভিভিএস লাক্সমানের গড় তুলনায় একটু ভালো, ১০ টেস্টে ৪০.৪২। তবে ১০ টেস্ট খেলেই চেতেশ্বার পুজারার গড় ২৮.১৫।
এছাড়াও ৮ টেস্টে সৌরভ গাঙ্গুলির গড় ৩৬.১৪, ৭ টেস্টে মারভান আতাপাত্তু গড় ২১.৯২, ৭ টেস্টে মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের ২৩.৩৩, ৫ টেস্টে মোহাম্মদ ইউসুফের ২৬.১০, আরাভিন্দা ডি সিলভার ৩ টেস্টে ৩০.৫০, ৬ টেস্টে সানাৎ জায়াসুরিয়ার স্রেফ ১৫.১৬, ৪ টেস্ট রোহিত শার্মার গড় ১৫.৩৭।
এসব পরিসংখ্যানেই ফুটে উঠছে, উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য কতটা কঠিন দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা। গ্রেটদের মধ্যে ব্যতিক্রম বলা যায় কেবল সাচিন টেন্ডুলকারকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫ টেস্ট খেলে তার ৫টি সেঞ্চুরি। ব্যাটিং গড় ৪৬.৪৪। তবে এটিও তার ক্যারিয়ার গড়ের চেয়ে অনেক কম। এর চেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় আছে তার অস্ট্রেলিয়ায়, ইংল্যান্ডে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে, এমনকি আরেক প্রতিকূল কন্ডিশন নিউ জিল্যান্ডেও।
অথচ এখানেও উজ্জ্বল কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭ টেস্ট খেলে তার ব্যাটিং গড় ৫১.৩৫। সেখানে তার সেঞ্চুরি আছে ২টি, ফিফটি ৩টি। দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার পরই তার গড় সবচেয়ে ভালো দক্ষিণ আফ্রিকায়।
তবে কোহলির ব্যাটসম্যানশিপ এতটাই সমৃদ্ধ যে, কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ এমনিতেও তার জন্য বড় কোনো বাধা বলে মনে করেন না ক্যালিস।
“সে অসাধারণ এক ক্রিকেটার, সেটা যে কন্ডিশনেই হোক। এখানে তো সে কিছুটা খেলেছেই, বেশ কিছু সাফল্যও আছে। নিজের অভিজ্ঞতা সে অন্যদের সঙ্গেও ভাগাভাগি করতে পারবে, বিশেষ করে তরুণদের সঙ্গে এবং তাদেরকে ধারণা দিতে পারবে যে, এই কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ কীভাবে সামলাতে হয় এবং কী প্রত্যাশা করা যায় এখানে।”
দলীয় লড়াইয়ের দিক থেকেও এই সিরিজে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, ধারণা ক্যালিসের।
“ভারতের এই দলটি দারুণ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো ভীষণ কঠিন। সেঞ্চুরিয়নের কন্ডিশন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সম্ভবত বেশি সহায়ক হবে, নিউ ল্যান্ডসে (কেপ টাউন) কিছুটা সহায়তা পাবে ভারত।”
“দারুণ একটি সিরিজ হবে এবং শেষ পর্যন্ত এক-দুটি সেশনেই হয়তো ভাগ্য নির্ধারিত হবে, সেখানে কোনো দল হয়তো প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো খেলতে পারবে। খুবই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সিরিজ হবে।”
টেস্ট সিরিজের আগে সীমিত ওভারের সিরিজ খেলছে দুই দল। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটি রোববার ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। আরও দুটি টি-টোয়েন্টি আছে, এরপর আছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।