জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তান সিরিজ
শেষ দিনে কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ড্র হলো জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের প্রথম টেস্ট।
Published : 30 Dec 2024, 09:42 PM
আগের দিনের দেড়শকে আরেকটি ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপান্তর করলেন হাশমাতউল্লাহ শাহিদি। দুই দিন আগে হারানো নিজের রেকর্ড করলেন পুনরুদ্ধার। প্রথমবার পঞ্চাশ ছুঁয়ে সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন আফসার জাজাই। সেঞ্চুরির পর এবার বল হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে দারুণ কীর্তি গড়লেন ব্রায়ান বেনেট। ব্যাটসম্যানদের আধিপত্যের টেস্টে শেষ বেলায় কিছুটা রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ড্র হলো ম্যাচ।
বুলাওয়ায়োতে জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের প্রথম টেস্টের শুরু থেকে শেষ দিনের প্রথম সেশন পর্যন্ত দুই দল মিলিয়ে যেখানে উইকেট পড়ে মোটে ১৪টি, সেখানে শেষ দুই সেশনেই পড়ে ১০ উইকেট!
২০ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংস থামে ৬৯৯ রানে। নিজেদের দশম টেস্টে ছয়শ রানের ঠিকানায় পা রাখল আফগানরা। এত কম টেস্টে প্রথমবার ছয়শ রান করতে পারেনি আর কোনো দল। আগের সর্বনিম্ন ১৯ ম্যাচ লেগেছিল পাকিস্তানের।
আফগানিস্তানের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন শাহিদি। ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে স্রেফ পঞ্চম ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই সেঞ্চুরিকে ডাবলে রূপান্তর করলেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ২০২১ সালে আবু ধাবিতে করেছিলেন অপরাজিত ২০০।
আফগানিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের সেই রেকর্ড এই ম্যাচের তৃতীয় দিন নিজের করে নেন রেহমাত শাহ। শেষ দিনে তা ফিরে পেলেন শাহিদি। রেহমাতের ২৩৪ ছাড়িয়ে তিনি করলেন ২৪৬। তার ৪৭৪ বলের ইনিংসটি গড়া ২১ চারে।
পাঁচ নম্বরে নেমে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৬৯ বলে ১১৩ রান করেন আফসার জাজাই।
প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান বেনেট এবার চমক জাগিয়ে অফ স্পিনে ৯৫ রানে নেন ৫ উইকেট। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন তিনি। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এই স্বাদ পেয়েছিলেন পল স্ট্রাং।
১১৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে জিম্বাবুয়ে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে ৮৮ রানে। সেখান থেকে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভিনের পঞ্চাশোর্ধ জুটিতে তারা ৪ উইকেটে ১৪২ রান করার পর ড্র মেনে নেয় দুই দল। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে করেছিল নিজেদের সর্বোচ্চ ৫৮৬।
শাহিদি ১৭৯ ও জাজাই ৪৬ রান নিয়ে শেষ দিনের ব্যাটিং শুরু করেন। শাহিদি ডাবলে পা রাখেন ৪১৪ বলে। ছক্কায় ১৫২ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন জাজাই।
তাদের ২১১ রানের জুটি ভাঙেন উইলিয়ামস। জাজাইকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
পঞ্চম উইকেটে শাহিদউল্লাহকে নিয়ে দলের স্কোর সাড়ে ছয়শ পার করেন শাহিদি। কিন্তু ৪০ রানের এই জুটির পর দ্রুতই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান।
দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা বেনেট ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেটের দেখা পান শাহিদিকে ফিরিয়ে। পরের বলেই পেয়ে যান আরেকটি উইকেট, ফিরিয়ে দেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে।
জিয়া উর রাহমানকে ফেরান উইলিয়ামস। বেনেট একই ওভারে তিন উইকেট নিয়ে গুটিয়ে দেন আফগানিস্তানের ইনিংস। এই ওভারেও হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান তিনি। সেটা না হলেও পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেয়ে যান ঠিকই।
দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ে শুরুটা ভালোই করে। উদ্বোধনী জুটিতে ৭৩ রান যোগ করেন জয়লর্ড গাম্বি ও বেন কারান। গাম্বি ফেরেন ৫৮ বলে ২৪ রান করে।
এরপর বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকে বেশ কিছুক্ষণ। আবার খেলা শুরু করে দ্রুত আরও তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় স্বাগতিকরা।
স্পিনাররা উইকেট থেকে সুবিধা পাচ্ছিলেন কিছুটা। তাই দুই প্রান্তেই স্পিনারদের আক্রমণে আনে আফগানিস্তান।
অভিষিক্ত কারান রান আউট হন ৬১ বলে ৪১ রান করে। টাকুডজোয়ানাশে কাইটানোকে এলবিডব্লিউ করে দেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার জাহির খান। অফ স্পিনার এএম গাজানফারের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড ডিওন মেয়ার্স।
৬ উইকেট হাতে নিয়ে তখনও ২৫ রানে পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে। উঁকি দিচ্ছিল নাটকীয় কিছুর সম্ভাবনা। তবে তেমন কিছু হতে দেননি উইলিয়ামস ও আরভিন। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন তারা। উইলিয়ামস অপরাজিত থাকেন ৪০ বলে ৩৫ রানে, ২৬ বলে ২২ রানে অধিনায়ক আরভিন।
একই মাঠে আগামী বৃহস্পতিবার শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৫৮৬
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৫১৫/৩) ১৯৭ ওভারে ৬৯৯ (শাহিদি ২৪৬, জাজাই ১১৩, শাহিদউল্লাহ ২৯*, ওমারজাই ০, জিয়া ৫, গাজানফার ৬, নাভিদ ০, জাহির ০; মুজারাবানি ২৮-৭-৫২-১, গুয়ান্ডা ৩৩-১-১৪২-১, নিয়ামহুরি ২৩-২-৮২-১, উইলিয়ামস ৩৫-১-১৪৫-২, মাভুটা ৪০-০-১৫২-০, বেনেট ২৮-১-৯৫-৫)
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ৩৪ ওভারে ১৪২/৪ (গাম্বি ২৪, কারান ৪১, কাইটানো ৫, উইলিয়ামস ৩৫, মেয়ার্স ৪, আরভিন ২২*; নাভিদ ৬-২-১৮-০, গাজানফার ৬-০-৩৪-১, জিয়া ৯-০-২৪-০, ওমারজাই ৩-০-৮-০, জাহির ১০-০-৪৩-২)
ফল: ড্র
সিরিজ: ২ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ০-০ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: হাশমাতউল্লাহ শাহিদি