বোসিস্টো ও মাহিদুলের ৩৫ বলে ৮৬ রানের জুটির পথ ধরে জয় দিয়ে বিপিএল শুরু করল খুলনা টাইগার্স, শামীম হোসেনের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের পরও লড়াই জমাতে পারল না চিটাগং কিংস।
Published : 31 Dec 2024, 05:04 PM
২০২১ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার চুক্তি থেকে বাদ পড়ার পর অনেকটা হারিয়েই গিয়েছিলেন উইলিয়াম বোসিস্টো। আড়াল থেকে আলোয় এসে সম্প্রতি তিনি খেলেন নেপাল প্রিমিয়ার লিগে। এই বিপিএল দিয়ে তিনি স্বীকৃত ক্রিকেটে ফিরলেন প্রায় চার বছর পর। ফেরার ম্যাচটি দারুণভাবে রাঙালেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। আরেকপ্রান্তে তাণ্ডব চালালেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। এই দুজনের ব্যাটে এমন উচ্চতায় পৌঁছে গেল খুলনা টাইগার্সের স্কোর, শামীম হোসেনের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসের পরও সেটির নাগাল পেল না চিটাগং কিংস।
নতুনভাবে ফিরে আসা চিটাগং কিংসকে ৩৭ রানে হারিয়ে এবারের বিপিএল শুরু করল খুলনা টাইগার্স।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা ২০ ওভারে তোলে ২০৩ রান। এবারের বিপিএলের প্রথম দুইশ ছাড়ানো স্কোর এটি। রান তাড়ায় চিটাগং অলআউট হয় ১৬৬ রানে।
খুলনার হয়ে ইনিংস শুরু করতে নেমে শেষ পর্যন্ত খেলে ৫০ বলে ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন উইলিয়াম বোসিস্টো। স্বীকৃতি ক্রিকেটে তিনি সবশেষ খেলেছেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, টি-টোয়েন্টিতে তার আগের ম্যাচটি ছিল ২০১৯ সালে। কদিন আগে নেপাল প্রিমিয়ার লিগে খেলে নতুনভাবে ক্রিকেটে ফিরে আসেন ৩১ বছল বয়সী ব্যাটসম্যান। এবার স্বীকৃত ক্রিকেটে ফেরার ম্যাচেই স্বাদ পেলেন প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটির।
খুলনা দুইশ ছাড়াতে পারে মূলত মাহিদুলের ব্যাটে। ১৮ বলে ফিফটি করেন এই ব্যাটসম্যান, বিপিএলে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের যা দ্রুততম ফিফটি।
রান তাড়ায় চিটাগংয়ের ব্যাটিং মুখ থুবড়ে পড়ে শুরু থেকেই। শামীম পরে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৩৮ বলে ৭৮ রানের ইনিংস উপহার দেন। তাতে কেবল ব্যবধানই কমে একটু।
নাঈমের ঝলক
প্রথম ওভারে শরিফুল ইসলামকে ছক্কায় ম্যাচ শুরু করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। চতুর্থ ওভারে টানা দুই বলে দৃষ্টিনন্দন দুটি শটে ছক্কা মারেন তিনি সৈয়দ খালেদ আহমেদকে।
চার ওভারে ৩৭ রান তোলে খুলনা। তাতে নাঈমের রানই তখন ১৪ বলে ২৬।
পরের ওভারেই আলিস আল ইসলামকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় শেষ হয় তার ইনিংস (১৭ বলে ২৬)। বোসিস্টো তখন খেলছেন ১০ বলে ৬ রান নিয়ে।
অর্ধশত জুটি
পাওয়ার প্লে পেরিয়ে একটু ‘পাওয়ার’ দেখা যায় বোসিস্টোর ব্যাটে। টম ও’কনেলকে টানা দুই বলে চার-ছক্কা মারেন তিনি। মিরাজ ক্রিজে যাওয়ার পরপরই পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন খালেদকে। তবে এর পরই একটু ঝিমিয়ে পড়েন তিনি। বোসিস্টোর সৌজন্যে অবশ্য জুটি গড়ে ওঠে।
৩৭ বলে ৫১ রান যোগ করেন দুজন। ১৮ বলে ১৮ করে মিরাজ আউট হন খালেদের বলে।
জোড়া ধাক্কার পর বিধ্বংসী জুটি
এমনিতে ওপেনার হলেও চারে নেমে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি আফগান ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরান। দ্রুত বিদায় নেন আফিফ হোসেনও। এরপরই খুলনার ইনিংসের চেহারা পাল্টে দেওয়া জুটি।
শুরুর জড়তা কাটিয়ে ৩৬ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন বোসিস্টো। প্রায় চার বছরের বিরতির আগে ১১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৩৬, স্ট্রাইক রেট ছিল ৯৭। সেই তিনি নিজেকে মেলে ধরলেন এবার ভিন্ন রূপে।
মাহিদুল শুরু থেকেই ছিলেন বিধ্বংসী চেহারায়। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই টানা দুটি ছক্কা মারেন শামীমকে। পরের ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন শরিফুলকে। এই বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারে চার ও ছক্কা মেরে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি ১৮ বলে।
শেষ ওভারে আর ছক্কা মারতে না পারলেও ২২ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। স্ট্রাইক রেট ২৬৮.১৮। বিপিএলে ফিফটি ছোঁয়া ইনিংসে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের আড়াইশ স্ট্রাইক রেটের ইনিংস এটিই প্রথম।
বোসিস্টোর সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৮৬ রান আসে ৩৫ বলে।
খরুচে শরিফুল-খালেদ
চিটাগং কিংসের পেস আক্রমণের বড় দুই ভরসাই ছিলেন সবচেয়ে বিবর্ণ। শরিফুল ও খালেদের আট ওভার থেকে রান আসে ৯২। ভালো করতে পারেননি পাকিস্তানি মোহাম্মদ ওয়াসিমও। জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে ভালো বোলিংয়ের ধারাবাহিকতায় ৪ ওভারে ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন আলিস আল ইসলাম।
১ বলে ১৫ রান ও পাগলাটে শুরু
ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগের শুরুটা ছিল ঘটনাবহুল। ইনিংসের প্রথম বলেই ওশেন টমাসের শিকার হন নাঈম ইসলাম। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার জানান, বলটি ছিল ‘নো।’ সেটি কেবলই শুরু। একের পর এক ওয়াইড আর নো বলের সঙ্গে চার-ছক্কা মিলিয়ে টমাসের ১ বল থেকে আসে ১৫ রান!
ওভারের পঞ্চম বৈধ বলে নাঈম আউট হয়ে যান। সব মিলিয়ে ওভার শেষ হয় ১২ বলে। রান ওঠে ১৮, উইকেটের পতন হয় একটি।
পেছন পানে দৌড়
অমন শুরুর পরও কাজে লাগাতে পারেনি চিটাগং কিংস। বরং একের পর এক দ্রুত উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে তারা। আগ্রাসী পারভেজ হোসেন ইমন কিংবা পাকিস্তানি উসমান খান, হায়দার আলি, অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন, ব্যর্থ সবাই।
একাদশ ওভারে যখন শরিফুল ইসলাম বিদায় নেন, চিটাগংয়ের রান তখন ৮ উইকেটে ৭৫।
শামীম-শো
চিটাগংয়ের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেলেও নিজের শেষ দেখেননি শামীম হোসেন। দুর্দান্ত পাল্টা আক্রমণে নিজের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য আরেকবার দেখান তিনি। উইকেটের চারপাশে খেলেন দারুণ সব শট।
নবম উইকেটে ৪৭ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়েন তিনি আলিস আল ইসলামের সঙ্গে। সেখানে আলিসের অবদান ১৮ বলে ৬, শামীমের রান ২৯ বলে ৬৯!
১৯তম ওভারে আবু হায়দার অবশেষে থামান শামীমকে। বিপিএল ও টি-টোয়েন্টিতে নিজের আগের সেরা ৭১ ছাড়িয়ে এবার তিনি করেন ৭৮।
ওই ওভারে খালেদের ব্যাটে দুটি ছক্কা হজম করে তাকে ফিরিয়েই চার উইকেট পূরণ করেন আবু হায়দার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ২০৩/৪ (নাঈম শেখ ২৬, বসিস্টো ৭৫*, মিরাজ ১৮, জাদরান ৬, আফিফ ৫৯*; শরিফুল ৪-০-৪৭-০, আলিস ৪-০-১৭-২, খালেদ ৪-০-৪৫-২, ওয়াসিম ৪-০-৩৯-০, ও’কনেল ২-০-২৫-০, শামীম ২-০-২৩-০)।
চিটাগং কিংস: ১৮.৫ ওভারে ১৬৬ (নাঈম ১২, পারভেজ ১৩, উসমান ১৮, মিঠুন ৬, হায়দার ০, শামীম ৭৮, ও’কনেল ০, ওয়াসিম ৮, আলিস ৬*, খালেদ ১৪*; টমাস ১-০-১৮-১, হাসান ৪-০-৩০-১, আবু হায়দার ৩.৫-০-৪৪-৪, নাসুম ৩-০-৩৫-১, নাওয়াজ ৩-০-১৩-২, মিরাজ ৪-০-২৬-১)।
ফল: খুলনা টাইগার্স ৩৭ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।