টেস্ট দল নিউ জিল্যান্ডে থাকায় বাংলাদেশে আসেনি ইংল্যান্ডের ‘বার্মি আর্মি’, তবে গ্যালারিতে আছে গুটিকয় ইংলিশ দর্শকের উপস্থিতি।
Published : 01 Mar 2023, 03:54 PM
মাঠের লড়াইয়ে তখন মইন আলির বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড সাকিব আল হাসান। গ্যালারিতে খানিকটা উল্লাস করে টুক করে নোটবুকে কিছু একটা লিখলেন এক ইংলিশ সমর্থক। কাছে গিয়ে জানা গেল তার নাম- পল ফেলোস। সংবাদকর্মীর পরিচয় দিয়ে কথা শুরু করেই বার্মি আর্মির হ্যাট বের করে মাথায় চাপালেন পাশে থাকা ভদ্রমহিলা। তার নাম জেন ফেলোস। নামেই ফুটে উঠছে পরিচয়। বাংলাদেশ সফরে ইংল্যান্ডের 'বার্মি আর্মি' সমর্থকগোষ্ঠীর অনুপস্থিতিতে এই দম্পতিই যেন ইংলিশ দর্শকদের প্রতিনিধি।
ইংল্যান্ড দলের এই সফরের সঙ্গে মিলিয়ে প্রায় এক মাসের জন্য বাংলাদেশ ঘুরতে এসেছে জেন-পলসহ সাত জনের একটি দল। জেন-পলের পাশে বসেই খেলা দেখছিলেন তাদের বন্ধু জন। বাকিরাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেন ইংল্যান্ডের প্যাভিলিয়নের কাছাকাছি।
এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে আসা জেন ও পল জন্মসূত্রে স্কটল্যান্ডের নাগরিক। 'নট আউট ট্রাভেল' এজেন্সির মাধ্যমে প্রথমবার বাংলাদেশে আসা দলটির বাকি সবাই ইংল্যান্ডেরই। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবগুলো ম্যাচ মাঠে বসে দেখার পরিকল্পনা করেছেন তারা।
শের-ই বাংলায় প্রথম ওয়ানডেতে খেলার ফাঁকে পলকে ম্যাচের বিভিন্ন তথ্য টুকে রাখতে সাহায্য করছিলেন তার বন্ধু জন। চোখে দুরবিন লাগিয়ে খেলা দেখছিলেন জেন। একটু পরপর স্বামীকে প্রশ্ন করছিলেন নানা বিষয়ে।
কথার শুরুতেই জেন জানান, গত ডিসেম্বরে পাকিস্তান সফরে গিয়ে তিনি পেয়েছেন বার্মি আর্মি হ্যাট। এবার বার্মি আর্মির সঙ্গে না এলেও, তাদের হ্যাট ঠিকই নিয়ে এসেছেন জেন।
স্কটিশ দম্পতি উঠেছেন বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের টিম হোটেলে। বাংলাদেশি কোনো ক্রিকেটারকে তেমনভাবে চেনেন না জেন।
তবে নিজ থেকেই মোবাইল বের করে দেখালেন, মুস্তাফিজুর রহমান ও ইবাদত হোসেনের সঙ্গে তোলা ছবি। ম্যাচের আগের দিন লিফটে দেখা হলে বাংলাদেশের দুই পেসারের সঙ্গে হালকা কথাবার্তা বলেন তারা।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের মধ্যে জেনের প্রিয় বেন স্টোকস। তবে এবারের বাংলাদেশ সফরে স্টোকস না থাকায় কিছুটা মন খারাপ তার।
“স্টোকস অনেক সাহসী ক্রিকেটার। তার এই বিষয়টি আমার খুব ভালো লাগে। আমাদের বিশ্বকাপের নায়ক (বিস্তৃত হাসি)! এখন তো তারা নিউ জিল্যান্ডে। নয়তো এখানে থাকতে পারত।”
স্টোকস যদিও এখন অবসর নিয়েছেন ওয়ানডে থেকে। তবে টি-টোয়েন্টি দলের অংশ হতেই পারতেন।
ঘোরাঘুরির ইচ্ছে নিয়ে আসা জেন ও তার বন্ধুরা বাংলাদেশে এসে এরই মধ্যে ঘুরে দেখেছেন আহসান মঞ্জিল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও স্বাধীনতা জাদুঘর। সামনের তিন সপ্তাহে কক্সবাজার ও সুন্দরবনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
“আমাদের বাংলাদেশে আসার প্রধান কারণগুলোর একটি অবশ্যই ক্রিকেট। তবে এটি আমাদের জন্য ঘোরাঘুরির সুযোগও বটে। ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে আসায় তারা দারুণভাবে সব ঠিক করছে। সুন্দরবনের কথা অনেক শুনেছি। যাব সেখানে।”
জেন-পল-জনদের বাইরেও নিজেদের মতো করে ইংল্যান্ডের খেলা দেখতে এসেছেন অ্যান্ড্রু ম্যাকলারেন ও তার বন্ধু। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নের ওপরের দিকে ব্রিস্টলের পতাকা টাঙিয়ে খেলা দেখছিলেন তারা। ম্যাকলারেনের বন্ধুর পরনে দেখা যাচ্ছিল বার্মি আর্মির ম্যাগি।
তবে তারাও বার্মি আর্মির অন্তর্ভুক্ত কেউ নয়। মঙ্গলবার সকালে বন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশে আসা ম্যাকলারেন বোঝানোর চেষ্টা করেন বার্মি আর্মি না আসার কারণ।
“আমরা বার্মি আর্মির নই। এগুলো (বার্মি আর্মি জার্সি) অনেক বিক্রি হয় দোকানে (হাহাহা)। বাংলাদেশে এবার বার্মি আর্মি আসেনি।”
“বার্মি আর্মি (জানুয়ারিতে) দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিল। এখন তারা নিউ জিল্যান্ডে। ওখানে টেস্ট চলছে। আর টেস্ট তো সব কিছুর ওপরে। বার্মি আর্মি বেশিরভাগ সময় টেস্ট ক্রিকেটই অনুসরণ করে। এখানে আসা কঠিন ছিল। তারা ঠিক করেছে যে, টেস্ট দলের সঙ্গে থাকবে।”
সুযোগ পেয়ে ম্যাকলারেনকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, মঙ্গলবার নিউ জিল্যান্ডের কাছে ১ রানে হারের কথা। তবে বাংলাদেশ সফরে থাকা ইংলিশ অলরাউন্ডার মইন আলির মতো ম্যাকলারেনও সেই হার সরাসরি দেখেননি।
“আমরা তখন ফ্লাইটে ছিলাম। ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমে ওয়াইফাই পেতেই দেখি হেরে গেছি! সেই 'বেয়ারেস্ট অব অল মার্জিনস' (হাসি)।”
জেন-পলদের মতো পুরো মাসের জন্য আসেননি ম্যাকলারেন ও তার বন্ধু। টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ দেখে দেশে ফিরবেন তারা।
“এখন এতো বেশি খেলা হয়... ডিসেম্বরে পাকিস্তান, জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ফেব্রুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ড... ক্রিকেটারদের জন্য যেমন ব্যস্ত সূচি, সমর্থকদের জন্যও... জেনুইন সমর্থকদের জন্য (হাহাহা)।”