ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার দারুণ বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ১৭০ রানেই বেঁধে ফেলে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় জিতে যায় ২৮.৩ ওভারেই।
বল হাতে তিন উইকেট নেওয়ার পর সাকিব অবদান রেখেছেন ব্যাটেও। দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংসে তামিম দলের জয় নিয়ে ফিরেছেন পরম নির্ভরতায়।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাটে-বলে লড়াই করেছেন সিকান্দার রাজা। পাশে পাননি খুব বেশি সতীর্থকে। ম্যাচও তাই হয়েছে একতরফা।
জিম্বাবুয়ের জন্য মন্থর উইকেটের পরিকল্পনা বেশ আগেই করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে পড়ল সেই পরিকল্পনারই প্রতিফলন। উইকেটে বল এসেছে ধীরে, শট খেলা খুব সহজ ছিল না। সেটি কাজে লাগান বাংলাদেশের বোলাররা।
পরের ইনিংসে উইকেট একটু ভালো হয়ে ওঠে ব্যাটিংয়ের জন্য। বাংলাদেশকে জিততে বেগ পেতে হয়নি একটুও।
টসের সময়ও কুয়াশা কাটেনি পুরোপুরি। টস জিতে অনুমিতভাবেই মাশরাফি বিন মুর্তজা বেছে নেন বোলিং। কন্ডিশন তখন পেস সহায়ক। তবে মাশরাফি শুরু করলেন স্পিন দিয়ে।
এই উইকেটের হাত ধরে এক বল পরই আরও বড় উইকেট। স্পিনে এই দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেই শুধু নয়, বাংলাদেশের দুই বাঁহাতি স্পিনারকে সামলাতেও বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ক্রেইগ আরভিনের উইকেটে থাকা ছিল জরুরি। কিন্তু ম্যাচের তৃতীয় বলেই আরভিনকে ফেরান সাকিব।
জিম্বাবুয়ে তাকিয়ে ছিল সবচেয়ে বড় ভরসা মাসাকাদজা ও আবার জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে ফেরা ব্রেন্ডন টেইলরের দিকে। কিছুটা আশা জাগিয়েও ছিলেন দুজন। কিন্তু দুজনই ফিরেছেন বাজে শটে।
মাসাকাদজার শট ছিল বেশি দৃষ্টিকটু। মাশরাফির অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে আরও বেরিয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে কট বিহাইন্ড।
টেইলরকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসার যদিও বেশি ভুগিয়েছেন সিকান্দার রাজাকে। তাকে খেলতেই পারছিলেন না রাজা, আউট হতে হতে বেঁচেছেন বারবার। কিন্তু রাজা টিকে গেলেন, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তুলনামূলক ভালো খেলতে থাকা টেইলর (২৪)।
দুইবার জীবন পাওয়া ম্যালকম ওয়ালারকে ফিরিয়েছেন সানজামুল ইসলাম। এরপর রাজার লড়াই। সঙ্গী পেয়েছিলেন পিটার মুরকে। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটি গড়েছেন এই দুজনই।
জুটি থেমেছে অবশ্য ৫০ রানেই। রাজার লড়াই শেষ হয়েছে রান আউটে। দুটি করে চার ও ছক্কার পরও রাজার ৫২ রানে লেগেছে ৯৯ বল।
পছন্দের উইকেট পেয়ে এদিন মুস্তাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত। উইকেট পেয়েছেন দুটি, ভাগ্য পাশে থাকলে তা অনায়াসেই হতে পারত ৪-৫টি। দুই বাঁহাতি স্পিনার খেলানোর যৌক্তিকতা প্রমাণ করে দারুণ বোলিং করেছেন সানজামুল। সাকিব-মাশরাফি বরাবরের মতোই দুর্দান্ত। নিজের কাজটা করেছেন রুবেলও।
বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর জয়ের সৌধ গড়েছেন ব্যাটসম্যানরা। প্রায় তিন বছর পর ধরে ফেরা এনামুল হকে ব্যাটে ছিল বদলের ছায়া।
তার প্রতি দলের বার্তা ছিল, দলের জন্য খেলা। ফেরার ম্যাচে সেই চেষ্টার প্রতিফলন ছিল এনামুলের ব্যাটে। আউট হয়ে গেছেন অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই। তবে তার ১৪ বলে ১৯ রানের ইনিংসটি শুরুতেই দমিয়ে দেয় জিম্বাবুয়ের লড়াইয়ের আশা।
প্রতিপক্ষের আশা আরও শেষ হয় যায় পরের জুটিতেই। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৭৮ রানের জুটি।
তিনে নামা সাকিবের ব্যাটিং ছিল পজিশনের সঙ্গে মানানসই। দারুণ কিছু শটের পাশাপাশি লম্বা করতে চেয়েছেন ইনিংস। সম্ভাবনাময় ইনিংসটি শেষ হয়েছে ৪৬ বলে ৩৭ রানে।
টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ, বছরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের শুরু প্রায় পরিপূর্ন এক পারফরম্যান্সে। সামনে এগিয়ে চলায় যে জয় হতে পারে আত্মবিশ্বাসের দারুণ জ্বালানী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ৪৯ ওভারে ১৭০ (মাসাকাদজা ১৫, মিরে ০, আরভিন ০, টেইলর ২৪, রাজা ৫২, ওয়ালার ১৩, মুর ৩৩, ক্রিমার ১২, জার্ভিস ৪*, চাতারা ০, মুজারাবানি ১; সাকিব ৩/৪৩, সানজামুল ১/২৯, মাশরাফি ১/২৫, মুস্তাফিজ ২/২৯, রুবেল ২/২৪, নাসির ০/১৫)।
বাংলাদেশ: ২৮.৩ ওভারে ১৭১/২ (তামিম ৮৪*, এনামুল ১৯, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১৪*; জার্ভিস ০/১৫, চাতারা ০/২৬, রাজা ২/৫৩, মুজারাবানি ০/৩১, ক্রিমার ০/৪৬)
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান