সাব্বিরকে বিশ্বাস জুগিয়েছে বেঙ্গালুরুর সেঞ্চুরি

পরিচয় ছিল রঙিন পোশাকের স্পেশালিস্ট। শ্বেতশুভ্র পোশাকে ২২ গজে ব্যাট হাতে সাব্বির রহমান - কদিন আগেও ছবিটা ছিল অভাবনীয়। সেটিই এখন বাস্তব হওয়ার পথে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছেন। কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে জানিয়েছেন, একাদশেও সাব্বিরকে রাখার উপায় খুঁজছে টিম ম্যানেজমেন্ট।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2016, 12:20 PM
Updated : 17 Oct 2016, 04:04 PM

টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট থেকে ওয়ানডে হয়ে সম্ভাব্য টেস্ট ব্যাটসম্যান, আন্তজার্তিক ক্রিকেটে অভিষেক থেকে দ্রুত বদলে গেছে সাব্বিরের জগত। তার টেকনিক, ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু ঠিকই টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও তিন নম্বর পজিশনে উঠে এসেছেন। শুরুটায় ভালো কিছুর ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

এত দ্রুত তবু তাকে টেস্টের আঙিনায় সম্ভাব্য একজন হিসেবে ভাবতে পারেননি অনেকেই। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার রেকর্ডও গড়পড়তা। ৮ বছরে খেলেছেন মাত্র ৩৫ ম্যাচ। সেঞ্চুরি ৩টি, গড় ৩৪.৭১।

কিন্তু নির্বাচকরা তার এই রেকর্ড দেখেননি, দেখেছেন তার ব্যাটিংয়ের উন্নতি, বিকশিত হওয়া। দিন দিন নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। কোচ হাথুরুসিংহে রীতিমত রোমাঞ্চিত সম্ভাব্য টেস্ট ব্যাটসম্যান সাব্বিরকে নিয়ে।

বদলেছে সাব্বিরের নিজের মনোজগতও। পরিবর্তন এসেছে ক্রিকেটার হিসেবে তার ভাবনা, মানসিকতায়। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় ছিল নিজেরও। সময়ের সঙ্গে নিজেকে চিনেছেন। সংশয়গুলি উড়িয়ে দিয়েছে মূলত দুটি ইনিংস।

দুটি ইনিংসই বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে, দেশের বাইরে। প্রথমটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে, বেঙ্গালুরুতে। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সিমিং উইকেটে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে কাঁপছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর উইকেটে গিয়েছিলেন সাব্বির। খানিক পরই রান হয়ে গেল ৪ উইকেটে ৬। আউট সৌম্য সরকার, এনামুল হক, মুমিনুল হক, লিটন দাস!

সাব্বির কিন্তু কাঁপলেন না, নুইয়ে পড়লেন না, ঝিমিয়েও গেলেন না। প্রতিপক্ষের আক্রমণে ছিলেন বরুন অ্যারন, অভিমন্যু মিথুনের মতো টেস্ট পেসারররা। ছিলেন ইশ্বর পান্ডে, রবিন্দ্র জাদেজার মত নাম। সাব্বির গিয়েই শুরু করলেন প্রতি আক্রমণ। খেললেন অসাধারণ এক ইনিংস।

বাংলাদেশ ‘এ’ শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়েছিল ২২৮ রানে, তবে আউট হননি সাব্বির। ২৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ১৩১ বলে ১২২!

সেটির এক মাস হতে না হতেই নিজের সামর্থ্যটা আরেকবার টের পেলেন সাব্বির। এবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। প্রিটোরিয়ায় নর্দান্টসের বিপক্ষে বাউন্সি উইকেটে ৯৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছি দল। যথারীতি সাব্বির নেমেই পাল্টা আক্রমণ। যখন আউট হলেন, নামের পাশে ৮৯ বলে ৭৫ রান। ১৩ চারের পাশে ২ ছক্কা।

আজ যখন হাতছানি নিচ্ছে টেস্ট ক্রিকেট, সাব্বিরের মনে পড়ছে ওই দুটি ইনিংসই। টেস্ট ক্রিকেটের স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলার ভিত্তি ছিল ইনিংস দুটি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, ওই ইনিংস দুটিই ছিল তার আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি।

“বেঙ্গালুরুর সেঞ্চুরিটা খুব কঠিন পরিস্থিতিতে ছিল। উইকেটও কঠিন ছিল। ওই সেঞ্চুরিটা আমাকে বিশ্বাস জুগিয়েছিল যে লঙ্গার ভার্সনে, কোয়ালিটি বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারি। পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ভালো খেলার পর নিজের ওপর বিশ্বাসটা আরও শক্ত হয়েছিল।”

“সবাই তখন আমাকে লিমিটেড ওভার স্পেশালিস্টই ভাবত। ইনিংস দুটি তাই নিজের জন্য খুব ভালো হয়েছিল। বুঝতে পেরেছিলাম এই লেভেলেও ভালো খেলার সামর্থ্য আমার আছে।”

সাব্বিরের আত্মবিশ্বাসের পালে জোর হাওয়া লেগেছিল নিজের মতো খেলেই সফল হওয়ায়। উইকেট, কন্ডিশন, পরিস্থিতি কঠিন হলেও নিজের ব্যাটিংয়ের ধরনের সঙ্গে আপোস করেননি। বুঝতে পেরেছিলেন, দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করতে চাইলেও ব্যাটিংয়ের ধরন বদলানো জরুরি নয়।

“বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট মানেই যে শট খেলব না, সেটা নয়। এই ইনিংসগুলো খেলে বুঝেছিলাম যে আমার মত খেলেই সফল হওয়া সম্ভব। বল সিলেকশনে একটু সতর্ক হতে হয়, এছাড়া আর খুব পার্থক্য নেই। যে বল আমি মারতে পারি, সেটা সব ধরনের ক্রিকেটেই মারতে পারি।”

হাথুরুসিংহের রোমাঞ্চটাও এই কারণেই। সাব্বিরের মতো ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলা মানে প্রতিপক্ষের বোলিংয়ের সঙ্গে মানসিকতাকেও গুঁড়িয়ে দেওয়া। এই ঘরানার, এই ব্যাটিং দর্শন নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সফল হওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা আধুনিক ক্রিকেটে কম নয়। সাব্বির সেখানে নতুন সংযোজন হতে পারবেন কিনা, উত্তর মিলবে হয়ত শিগগিরই!