উপলক্ষের বিশালত্বকে আড়ালে রেখে ধীরস্থির থেকে কন্ডিশন বুঝে খেলতে পারাকেই দলের সাফল্যের রহস্য বলে মনে করেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শার্মা।
Published : 28 Jun 2024, 08:46 AM
প্রত্যাশা আকাশচুম্বি, চাপ প্রচণ্ড, উপলক্ষ বিশাল। ভারতের প্রতিপক্ষ শুধু ইংল্যান্ডই নয়, ছিল আরও অনেক কিছুই। কিন্তু রোহিত শার্মার দল পাত্তা দেয়নি কোনোকিছুকেই। প্রতিপক্ষকে যেমন তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তেমনি উড়িয়ে দিয়েছে সব পারিপার্শ্বিকতাকেও। অপরাজেয় পথচলায় ফাইনালে ওঠার পর ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, ধীরস্থির থেকে কন্ডিশন বুঝে খেলতে পেরেই এই সাফল্যযাত্রায় ছুটে চলেছে তার দল।
ম্যাচ শেষে রোহিত যা বলেছেন, ম্যাচজুড়ে ভারতের পারফরম্যান্সে সেটাই আসলে ফুটে উঠেছে। সেমি-ফাইনাল ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলার যে চাপ, সেটির লেশমাত্র দেখা যায়নি তাদের শরীরী ভাষায়। প্রবল দাপটেই ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তারা পৌঁছে যায় ফাইনালে।
রোহিত বললেন, রোমাঞ্চ ও উত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেই মাঠের ক্রিকেটে এমন প্রস্ফুটিত হতে পেরেছেন তারা।
“দল হিসেবে আমরা খুব ধীরস্থির থেকেছি। আমরা জানি, উপলক্ষ (ফাইনালের হাতছানি) কত বড়, তবে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল শান্ত ও গোছানো থাকা।”
“এটা মাঠে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে আমাদেরকে সহায়তা করে। ৪০ ওভার ধরে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এই ম্যাচেও আমরা অনড় ও প্রশান্ত ছিলাম। খুব একটা অস্থির হইনি। আমাদের সাফল্যের পেছনে এটিই ছিল মূল ব্যাপার। উপলক্ষ্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আমরা জানি। তবে ভালো ক্রিকেটও তো খেলতে হবে!।”
১০ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ভারত। ২০১৪ আসরের ফাইনালে মিরপুরে মাহেন্দ্র সিং ধোনির দল হেরে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার কাছে। ধোনির নেতৃত্বই ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ভারত। রোহিতের দলের সামনে এখন সেটির পুনরাবৃত্তির হাতছানি।
এই সুযোগটি আসতে পারত দুই বছর আগেও। ২০২২ বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলেন তারা। সেবার ১০ উইকেটে রোহিতদের বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠে পরে শিরোপাও জিতে নিয়েছিল ইংলিশরা।
এবারও ভারত আগে ব্যাট করেছে। তাই ঠিক ১০ উইকেটে জিতে প্রতিশোধ নেওয়ার উপায় ছিল না। তবে যেভাবে ইংলিশদের উড়িয়ে দিয়েছে তারা, ৬৮ রানের এই জয়কে আদর্শ প্রতিশোধ বলাই যায়। সেই সন্তুষ্টি আছে রোহিতেরও।
“এই ম্যাচ জিততে পারা খুবই তৃপ্তিদায়ক। এই পর্যায়ে আসার জন্য সত্যিই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাদের এবং এরকম একটি ম্যাচ এভাবে জিততে পারা ছিল সবার দারুণ প্রচেষ্টার ফল।”
সেমি-ফাইনালের আগে রোহিত বলেছিলেন, প্রতিটি জায়গায় প্রতিটি মাঠের কন্ডিশনের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছেন তারা। গায়ানার সেমি-ফাইনাল শেষেও সেই তৃপ্তি ফুঠে উঠল ভারতীয় অধিনায়কের কণ্ঠে।
“আমার মনে হয়, কন্ডিশনের সঙ্গে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছি আমরা। টুর্নামেন্টজুড়েই এখানে দারুণ সফল হয়েছি আমরা। বোলার ও ব্যাটাররা যদি কন্ডিশন বুঝে খেলতে পারে, বাকি কাজটা সহজ হয়ে ওঠে। আমরা যেভাবে এগিয়ে চলেছি, তা দারুণ সন্তুষ্টির।”
গত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে অ্যাডিলেইডে ১৬৮ রান তুলে ১০ উইকেটে হেরেছিল ভারত। এবার ১৭১ রানের পুঁজিতেই ধরা দিল বিশাল জয়। কন্ডিশন ও উইকেট যে এবার ভিন্ন!
ভারতীয় ইনিংসের সময়ই বল গ্রিপ করছিল বেশ, একটু থমকে আসছিল। বেশ কিছু বল বিপজ্জনকভাবে নিচু হয়ে গিয়েছিল। এমনকি লিয়াম লিভিংস্টোনের বল খেলতেও বেগ পেতে হয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। এই উইকেটে ভারতীয় স্পিনাররাও যে রাজত্ব করবেন, সেটা অনুমেয়ই ছিল। হয়েছেও তাই। ভারতের স্কোর তাই যথেষ্টরও বেশি ছিল এবার।
নিজেরা ব্যাটিংয়ের সময়ই সেটা উপলব্ধি করেছিলেন রোহিত। তবে রান বেশি হলে তো আর ক্ষতি নেই! সহজাত ব্যাটিং করা থেকে তাই কাউকে বিরত রাখেননি ভারতীয় অধিনায়ক।
“একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ১৪০-১৫০ রানই ভালো স্কোর। তবে মাঝের সময়টায় আমরা কিছু রান পেয়ে গেলাম, আমার ও সুরিয়ার একটি জুটি হলো (৫০ বলে ৭৩) এবং আমরা বললাম, ‘আরও ২৫ রানের চেষ্টা করে দেখি।’ নিজের ভাবনায় একটা স্কোরকে লক্ষ্য বানাতে পারি আমি, কিন্তু সেটা তো সবাইকে বলতে পারি না। তারা সহজাত ক্রিকেটার। আমি চাই, মাঠে নেমে তারা মুক্তভাবে খেলুক ও কোনো স্কোরের কথা না ভেবে নিজেদের মেলে ধরুক।”
“আমরা জানতাম যে, কন্ডিশন ভালোভাবে বুঝতে পারলে ভালো একটি স্কোরও গড়তে পারব। সেটিই হয়েছে। এরপর বোলাররা তো ছিল অসাধারণ।”
ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ প্রথমবার শিরোপার মঞ্চে আসা দক্ষিণ আফ্রিকা। বারবাডোজে ফাইনাল ম্যাচটি শুরু শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায়।