উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাটিতে নামাল ডাচরা।
Published : 17 Oct 2023, 11:33 PM
চাপের মুখে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ এক ইনিংস খেললেন স্কট এডওয়ার্ডস। নড়বড়ে অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের পুঁজি পেল নেদারল্যান্ডস। পরে বোলারদের সম্মিলিত অবদানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্মরণীয় জয়ের আনন্দে মাতল ডাচরা।
বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে দাপুটে জয়ে উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে এবার মাটিতে নামাল নেদারল্যান্ডস। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচটি তারা জিতল ৩৮ রানে।
ধারামশালায় মঙ্গলবার ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে নেদারল্যান্ডস করে ২৪৫ রান। জবাবে ৯ উইকেটে ১৬৬ থেকে কোনোমতো ২০৭ পর্যন্ত যেতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আট ওয়ানডেতে এই প্রথম জয়ের স্বাদ পেল নেদারল্যান্ডস। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রোটিয়াদের হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল তারা।
ওয়ানডের বিশ্ব মঞ্চে ২৩ ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের তৃতীয় জয় এটি। এর আগে ২০০৩ আসরে নামিবিয়া ও ২০০৭ আসরে স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা।
একটা পর্যায়ে দুইশ কিংবা দেড়শ রানই নেদারল্যান্ডসের জন্য মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ। ২৭ ওভারে ৬ উইকেটে ১১২ রানের বিপর্যয় থেকে তারা আড়াইশর কাছাকাছি পুঁজি পায় তিন জনের ব্যাটে চড়ে।
অধিনায়ক এডওয়ার্ডস ৬৯ বলে ১০ চার ও এক ছক্কায় খেলেন অপরাজিত ৭৮ রানের ইনিংস। দুটি ক্যামিও ইনিংস উপহার দেন রুলফ ফন ডার মেরওয়া (১৯ বলে ২৯) ও আরিয়ান দত্ত (৯ বলে ২৩)।
ফন ডার মেরওয়া পরে আলো ছড়ান বল হাতেও। ক্যারিয়ারের একটা সময় দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে খেলা ৩৮ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনার ৩৪ রানে ধরেন ২ শিকার। দারুণ বোলিংয়ে দুটি করে উইকেট নেন পেসার বাস ডে লেডে ও পল ফন মেকেরেনও।
কিছুটা খরুচে বোলিং করলেও দলের সফলতম বোলার অবশ্য আরেক পেসার লোগান ভন বিক। ৬০ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট।
তিন দিনের মধ্যে দুটি অঘটনের সাক্ষী হলো চলতি বিশ্বকাপ। গত রোববার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান।
এই প্রথম আইসিসির কোনো সহযোগী দেশের কাছে ওয়ানডেতে হারল দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিশ্বকাপের রেকর্ড ৪২৮ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩১১ রান করা দলটির ব্যাটিং এবার মুখ থুবড়ে পড়ল।
রান তাড়ায় শুরুটা অবশ্য ভালোই করেন কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমা। উদ্বোধনী জুটিতে তারা তুলে ফেলেন ৩৬ রান। এরপর হঠাৎ করেই ধস নামে প্রোটিয়াদের ব্যাটিংয়ে। ২১ বল আর ৮ রানের মধ্যে হারায় চার ব্যাটসম্যানকে।
ডি কককে ফিরিয়ে নেদারল্যান্ডসকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আকারম্যান। ফন ডার মেরওয়া প্রথম বলেই শিকার ধরেন বাভুমাকে বোল্ড করে।
দারুণ এক ডেলিভারিতে এইডেন মারক্রামের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন পল ফন মেকেরেন। ফন ডার মেরওয়ার পরের ওভারে রিভার্স সুইপ করে ক্যাচ তুলে নেন রাসি ফন ডার ডাসেন।
বিনা উইকেটে ৩৬ থেকে দ্রুতই স্কোর হয়ে যায় ৪ উইকেটে ৪৪!
প্রতিরোধ গড়েন এরপর ডেভিড মিলার ও হাইনরিখ ক্লাসেন। দুজন দলকে এগিয়ে নেন একশর কাছে। শর্ট বলে ক্লাসেনকে ফিরিয়ে ৪৫ রানের জুটি ভাঙেন ফন বিক।
খানিক পর মিলারকেও ফেরানোর সুযোগ আসে, কিন্তু ফন ডার মেরওয়ার বলে লং-অন বাউন্ডারিতে ক্যাচ ফেলেন ডে লেডে।
পরের ওভারে মার্কো ইয়ানসেনকে ফেরান মেকেরেন। ২৩ রানে জীবন পাওয়ার পর দারুণ কয়েকটি শট খেলে নেদারল্যান্ডসের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন মিলার। ৪৩ রানে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে বোল্ড করে দলকে জয়ের পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে দেন ফন বিক। দক্ষিণ আফ্রিকার আশাও অনেকটাই শেষ হয়ে যায় ওখানে।
কেশভ মহারাজ ও লুঙ্গি এনগিডির ৪১ রানের শেষ উইকেট জুটিতে কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারে তারা।
এর আগে বৃষ্টির বাগড়ায় খেলা শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পরে। টস জিতে বোলিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও ভালো হয়। পাওয়ার প্লের মধ্যে দুই ওপেনার ভিক্রামজিত সিং ও মাক্স ও'ডাওডকে বিদায় করে দেন কাগিসো রাবাদা ও ইয়ানসেন।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আকারম্যান ও ডে লেডেও। ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় নেদারল্যান্ডস।
সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেশটের মন্থর ইনিংস (৩৭ বলে ১৯) থেমে যায় দলীয় স্কোর একশ হওয়ার আগে। এডওয়ার্ডসের লড়াই শুরু সেখান থেকেই। তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি অবশ্য তেজা নিদামানুরু ও ফন বিক।
৩৪তম ওভারে নেদারল্যান্ডসের স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ১৪০। সেখান থেকে ফন ডার মেরওয়ার সঙ্গে ৩৭ বলে ৬৪ রান ও আরিয়ানের সঙ্গে ১৯ বলে ৪১ রানের দারুণ দুটি জুটিতে দলকে উদ্ধার করেন এডওয়ার্ডস।
দারুণ ইনিংসের পর উইকেটের পেছনে তিনটি ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের সেরাও ডাচ অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নেদারল্যান্ডস: ৪৩ ওভারে ২৪৫/৮ (ভিক্রামজিত ২, ও'ডাওড ১৮, আকারম্যান ১২, ডে লেডে ২, এঙ্গেলব্রেশট ১৯, নিদামানুরু ২০, এডওয়ার্ডস ৭৮*, ফন বিক ১০, ফন ডার মেরওয়া ২৯, আরিয়ান ২৩*; এনগিডি ৯-১-৫৭-২, ইয়ানসেন ৮-১-২৭-২, রাবাদা ৯-১-৫৬-২, কুটসিয়া ৮-০-৫৭-১, মহারাজ ৯-০-৩৮-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪২.৫ ওভারে ২০৭ (বাভুমা ১৬, ডি কক ২০, ফন ডার ডাসেন ৪, মারক্রাম ১, ক্লাসেন ২৮, মিলার ৪৩, ইয়ানসেন ৯, কুটসিয়া ২২, মহারাজ ৪০, রাবাদা ৯, এনগিডি ৭*; রিয়ান ৫-১-১৯-০, ফন বিক ৮.৫-০-৬০-৩, আকারম্যান ৩-০-১৬-১, মেকেরেন ৯-০-৪০-২, ফন ডার মেরওয়া ৯-০-৩৪-২, ডে লেডে ৩৬-২)
ফল: নেদারল্যান্ডস ৩৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: স্কট এডওয়ার্ডস