পাকিস্তানের প্রথম স্পিনার হিসেবে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়লেন বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলি।
Published : 25 Jan 2025, 01:05 PM
বাতাসে একটু জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে অ্যাঙ্গেল ব্যাটে ডিফেন্স করতে চাইলেন কেভিন সিনক্লেয়ার। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল গেল গালিতে। ওত পেতে থাকা বাবর আজম ঝাঁপিয়ে পড়ে মুঠোয় জমালেন বল, মাঠে বসেই হাসতে থাকলেন তিনি। অন্য সব ফিল্ডার তখন ছুটছেন নোমান আলির দিকে। ধারাভাষ্যে ইয়ান বিশপ বললেন, ‘ইট ইজ আ হ্যাটট্রিক ফর নোমান আলি… এই মাইলফলক অর্জন করা প্রথম পাকিস্তানি স্পিনার…।’ পাশ থেকে আমির সোহেল যোগ করলেন, ‘নোমান প্রমাণ করে যাচ্ছে, বয়স স্রেফ একটি সংখ্যা…।”
এভাবেই দুর্দান্ত বোলিং, অর্জন, বয়স, সব একাকার করে অনন্য অর্জনে নিজেকে রাঙালেন নোমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুলতান টেস্টের প্রথম সকালেই হ্যাটট্রিক করে এই বাঁহাতি স্পিনার নাম লেখালেন রেকর্ডের পাতায়।
পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট হ্যাটট্রিক করা পঞ্চম বোলার নোমান। তবে স্পিনে টানা তিন বলে উইকেট শিকারের কীর্তি তারই প্রথম।
পাকিস্তানকে প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম। দ্বিতীয়টিও এসেছিল তার হাত ধরে। ১৯৯৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিকের প্রথম নজির গড়েছিলেন বাঁহাতি পেস বোলিং কিংবদন্তি।
পরের বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই হ্যাটট্রিক করেন আব্দুল রাজ্জাক, ২০০২ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেন মোহাম্মদ সামি ও দীর্ঘ বিরতির পর ২০২০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে করেন নাসিম শাহ। সেখানেই এবার নাম উঠে গেল নোমানের।
একটুর জন্য আরেকটি বিশ্বরেকর্ড হয়নি নোমানের। ৩৮ বছর ১১০ দিন বয়সে হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। তার চেয়ে বেশি বয়সে এই কীর্তি আছে টেস্ট ইতিহাসে কেবল একজনেরই। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি স্পিন গ্রেট রাঙ্গানা হেরাথ হ্যাটট্রিক করেছিলেন ৩৮ বছর ১৩৯ দিন বয়সে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ দিন ম্যাচের অষ্টম ওভারে আক্রমণে আনা হয় নোমানকে। ততক্ষণে দুটি উইকেট হারিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। ম্যাচের দ্বিতীয় আর টেস্ট ক্রিকেটে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পান কাশিফ আলি। অভিষিক্ত পেসার ফিরিয়ে দেন মিকাইল লুইকে।
পরের ওভারে পরে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান আমির জাঙ্গুর অভিষেক বিষাদে পরিণত করে তাকে শূন্য রানে ফেরান অফ স্পিনার সাজিদ খান।
নোমান আক্রমণে আসার পর শিকার ধরতে বেশি সময় নেননি। তার দ্বিতীয় ওভারে আউট হন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। পরের ওভারে আলিক আথানেজকে শূন্যতে বিদায় করেন সাজিদ।
নোমানের হ্যাটট্রিক আসে তৃতীয় ওভারের প্রথম দিন বলেই। বাড়তি বাউন্স ও টার্নে গালিতে ক্যাচ দেন এক রান করা জাস্টিন গ্রেভস। পরের ডেলিভারিতে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে সুইপের চেষ্টায় ব্যাচে-বলে করতে পারেননি টেভিন ইমলাখ। নোমানের জোরাল আবেদনে বেশ খানিকটা সময়ের পর আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার পল রাইফেল। এরপর হ্যাটট্রিকর উচ্ছ্বাস।
পরে কিমার রোচকে ফিরিয়ে ৫ উইকেটও পূর্ণ করেন নোমান। পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেট শিকারের রেকর্ডে এই নিয়ে টানা চার টেস্টে চার দফায় করলেন তিনি।
১৯ টেস্টের ক্যারিয়ারেই ৮ বার ইনিংসে ৫ উইকেট হয়ে গেল তার। এই নিয়ে টানা ৫ টেস্টে তিনি ৫ উইকেটের কৃতিত্ব দেখালেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তখন ৯ উইকেটে ৯৫।