পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
পাকিস্তানের মাটিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতন দেখল টেস্ট ক্রিকেট, সাজিদ খান ও নোমান আলির দারুণ বোলিংয়ের পর শান মাসুদের ফিফটিতে মুলতান টেস্টে জয়ের পথ তৈরি করে ফেলল স্বাগতিকরা।
Published : 18 Jan 2025, 07:33 PM
দুই দল মিলিয়ে গোটা দিনে উইকেট পড়ল ১৯টি। দুটি রান আউট বাদে ১৭ উইকেটের সবকটি নিলেন স্পিনাররা। এতেই পরিষ্কার উইকেটের আচরণ। অদ্ভুতুড়ে এক দিন শেষে মুলতান টেস্টের লাগাম এখন পাকিস্তানের হাতে।
সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে ২০২ রানে এগিয়ে স্বাগতিকরা। উইকেট হাতে আছে এখনও ৭টি। পিচের যা অবস্থা, চতুর্থ ইনিংসে ২৫০ রান তাড়া করাও ভীষণ কঠিন।
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্টে একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ড হয়েছে এ দিন। ২০০৩ সালে মুলতানেই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের টেস্টের দ্বিতীয় দিনের ১৮ উইকেট ছিল আগের সর্বোচ্চ।
মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সাউদ শাকিলের ১৪১ রানের জুটির পর ৪৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় ২৩০ রানে।
জবাবে ৬৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে একশর আগে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে নবম উইকেটে ২৫ ও দশম উইকেটে ২১ বলে ৪৬ রানের জুটিতে ১৩৭ পর্যন্ত যেতে পারে সফরকারীরা।
ক্যারিবিয়ানদের ১০ উইকেটই ভাগ করে নেন পাকিস্তানের তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনার মিলে। অফ স্পিনার সাজিদ খান নেন প্রথম ৪টি। পরের ৫টি নেন বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলি, শেষটি লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ।
৯৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে অধিনায়ক শান মাসুদের ফিফটিতে দিন শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১০৯ রান।
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তান শনিবারের খেলা শুরু করে ৪ উইকেটে ১৪৩ রান নিয়ে। প্রথম দিন ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দলকে উদ্ধার করা শাকিল ও রিজওয়ানের জুটি এ দিন প্রথম ঘন্টায় অবিচ্ছিন থেকে দলকে এগিয়ে নেয় ১৮৭ পর্যন্ত।
এরপরই আরেকবার ধস নামে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে। পানি-পানের বিরতির পর প্রথম বলেই শাকিলকে ফিরিয়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন অফ স্পিনার কেভিন সিনক্লিয়ার।
১৮৬ বলে ৬ চারে ৮৪ রানের ইনিংস খেলেন শাকিল।
সালমান আলি আগাকে বোল্ড করে প্রথম শিকার ধরেন বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যান। নোমান রান আউটে বিদায় নেওয়ার পরের বলে রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউ করে দেন সিনক্লিয়ার।
১৩৩ বলে ৯ চারে ৭১ রান করেন পাকিস্তানের কিপার-ব্যাটসম্যান।
নিজের পরপর দুই ওভারে বাকি উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের ইনিংসের ইতি টেনে দেন ওয়ারিক্যান। ৬৯ রানে তার শিকার ৩টি।
ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যেই ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওভারে সাজিদ পরপর দুই বলে মিকাইল লুই ও কেসি কার্টিকে ফিরিয়ে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। লুই বোল্ড হওয়ার পর শর্ট লেগে অভিষিক্ত মোহাম্মদ হুরাইরার এক হাতে নেওয়া দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন কার্টি।
হ্যাটট্রিক না হলেও, সাজিদ পরের ওভারে আবার ধরেন জোড়া শিকার; ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে বোল্ড করার পর ফিরতি ক্যাচে ফেরান কাভেম হজকে।
টপ অর্ডারের পর ব্যর্থ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের মিডল অর্ডারও। নোমান টানা চার ওভারে একে একে ফেরান জাস্টিন গ্রেভস, অভিষিক্ত টেভিন ইমলাক, আলিক আথানেজ ও সিনক্লেয়ারকে।
প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্কে যেতে পারেন কেবল অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট (১১)।
৬৬ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে ৯১ পর্যন্ত টেনে নেয় গুডাকেশ মোটি ও ওয়ারিক্যানের ২৫ রানের জুটি। ২৫ বলে ১৯ রান করা মোটিকে ফিরিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে সপ্তমবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন নোমান।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ২১ বলে ৪৬ রান যোগ করেন জেডেন সিলস ও ওয়ারিক্যান। ৩ ছক্কায় ১৩ বলে ২২ রান করা সিলসকে থামান আবরার। ওয়ারিক্যান অপরাজিত থাকেন ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ বলে সর্বোচ্চ ৩১ রান করে।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ভালো হয় পাকিস্তানের। উদ্বোধনী জুটিতে ৬৭ রান যোগ করেন হুরাইরা ও মাসুদ। ৬২ বলে ৩ চারে ২৯ রান করা হুরাইরাকে এলবিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন ওয়ারিক্যান।
তিনে নেমে টিকতে পারেননি বাবর আজম। তাকেও এলবিডব্লিউ করে ফেরান ওয়ারিক্যান। তার পরের ওভারে কামরান গুলামকেও এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বাঁচেন ব্যাটসম্যান।
মাসুদ ফিফটি পূর্ণ করেন ৬০ বলে। একটু পরই কামরানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে ফেরেন তিনি, ২টি করে চার ও ছক্কায় ৭০ বলে করেন ৫২ রান।
আলোকস্বল্পতায় আগেভাগে দিনের খেলা শেষ হয়ে গেলে কামরান ৪০ বলে ৯ ও শাকিল ২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৪৩/৪) ৬৮.৫ ওভারে ২৩০ (শাকিল ৮৪, রিজওয়ান ৭১, সালমান ২, নোমান ০, সাজিদ ১৮, শাহজাদ ৭, আবরার ০*; মোটি ১৫-১-৪৮-১, সিলস ১৪-২-২৭-৩, গ্রেভস ৩-০-১২-০, সিনক্লিয়ার ১৫-১-৬১-২, ওয়ারিক্যান ২০.৫-৩-৬৯-৩, ব্র্যাথওয়েট ১-০-৩-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৫.২ ওভারে ১৩৭ (ব্র্যাথওয়েট ১১, লুই ১, কার্টি ০, হজ ৪, আথানেজ ৬, গ্রেভস ৪, ইমলাক ৬, সিনক্লিয়ার ১১, মোটি ১৯, ওয়ারিক্যান ৩১*, সিলস ২২, সাজিদ ১২-০-৬৫-৪, শাহজাদ ১-০-৭-০, নোমান ১১-২-৩৯-৫, আবরার ১.২-১-৬-১)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৩১ ওভারে ১০৯/৩ (মাসুদ ৫২, হুরাইরা ২৯, বাবর ৫, কামরান ৯*, শাকিল ২*; মোটি ৯-০-৩৯-০, সিলস ৫-০-১৩-০, সিনক্লিয়ার ৫-১-১৬-০, ওয়ারিক্যান ১০-৩-১৭-২, হজ ২-০-১৩-০)