অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দলের চাওয়া পূরণ করতে পারছেন না, বললেন খালেদ মাহমুদ।
Published : 12 Sep 2022, 09:57 PM
পারফরম্যান্সে ভাটার টান অনেক দিন ধরেই। কাঁধ থেকে নেতৃত্বভার সরিয়ে দেওয়ার পরও উন্নতির কোনো আভাস নেই মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ে। দল টি-টোয়েন্টিতে যে ঘরানার ক্রিকেট খেলতে চায়, এর সঙ্গে মানানসই নয় তার ইনিংস। টুকটাক রান পেলেও সেগুলো দলের জন্য কতটা কাজে আসে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সব মিলিয়েই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে মাহমুদউল্লাহর জায়গা এখন অনিশ্চিত।
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ স্বীকার করলেন, দলের প্রত্যাশা মেটাতে না পারায় অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবছেন তারাও।
মাহমুদউল্লাহ কিছুদিন আগেও ছিলেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। ২০১৯ সালে সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে এই দায়িত্ব তিনি পালন করে আসছিলেন। দলের বাজে পারফরম্যান্স আর ব্যাট হাতে তার রান খরায় জুলাই-অগাস্টের জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে হারান নেতৃত্ব। শুরুতে তাকে রাখা হয়নি ওই সফরের টি-টোয়েন্টি দলেও। পরে সেই সিরিজে নেতৃত্ব পাওয়া নুরুল হাসান সোহানের চোটে জায়গা পান দলে।
সোহানের অনুপস্থিতিতে মোসাদ্দেক হোসেনকে তৃতীয় ম্যাচের জন্য অধিনায়ক করে বিসিবি। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্বে ফেরায় সাকিবকে।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে এশিয়া কাপের আগ পর্যন্ত ১৪ ইনিংসে ১৭.৪১ গড় ও ১০০.৪৮ স্ট্রাইক রেটে ২০৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ দেখাতে পারেননি উন্নতির আভাস। এশিয়ার শ্রেষ্টত্বের লড়াইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ২৭ বলে এক চারে করেন কেবল ২৫। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি করে ছক্কা ও চারে ২২ বলে খেলেন ২৭ রানের ইনিংস।
আগের সেই রিফ্লেক্স নেই। শট খেলার চেষ্টা করেও সফল হননি, রানিং বিটুইন দা উইকেটেও এখন মন্থর। সব মিলিয়ে এশিয়া কাপের পর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে প্রশ্নগুলো আরও উচ্চকিত হয়।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার শুরু হয়েছে তিন দিনের প্রস্তুতি ক্যাম্প। সেখানেও নেটে আশা জাগানিয়া কিছু করতে পারেননি ৩৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। প্রথম দিনের অনুশীলন শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে টিম ডিরেক্টর জানান, বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহর থাকা না থাকা নিয়ে নানা ভাবনা কাজ করছে তাদের মাথায়।
“সাদা বলে অবশ্যই (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওর জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটা নিয়ে আমরা চিন্তা করিনি যে তা না। আমাদের মাথায় অবশ্যই আছে বিষয়টা। যখন দল হবে তখন সিদ্ধান্ত হবে।”
“রিয়াদ থাকবে কী থাকবে না, দলে ওর প্রয়োজন আছে কী নেই- সেটা আমরা চিন্তা করব। তবে আমি এইটুকু বলি, রিয়াদ আমাদের জন্য এখনও অনেক গুরত্বপূর্ণ। দল নির্বাচনে বসলে তর্ক হবে, কথা হবে, কেন আমাদের রিয়াদকে দরকার। যদি এই মত থাকে যে রিয়াদকে আমাদের দরকার নেই, তাহলে কেন দরকার নেই সেটাও ভাবা বা ওর জায়গায় যদি কাউকে সুযোগ দিই, সে কেন সুযোগ পাবে কিংবা রিয়াদই কেন সুযোগ পাবে (সেটা নিয়ে আলোচনা হওয়াটা) গুরুত্বপূর্ণ।”
এসব ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় আগেও ছিল। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ শেষ ম্যাচটা খেলার পর কেটে গেছে ১০ দিন। আগামী বৃহস্পতিবার দল ঘোষণার শেষ দিন। এর মধ্যে আর কোনো খেলা নেই, যে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তাহলে কেন এত দেরি? মাহমুদ বললেন, বিশ্রামে থাকার কথা!
“অশ্যই, আপনি ঠিক। আমাদের হাতে যেহেতু সময় ছিল না, দল পুরো বিশ্রামে ছিল। কোচও বিশ্রামে ছিল। দল হারার পর আসলে মানসিক অবস্থা ঠিক থাকে না।”
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা না করার কথা বললেও মাহমুদউল্লাহর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মাহমুদ টানলেন অতীতের অবদানের কথা।
“রিয়াদ যদি এই সংস্করণে খেলে, ওকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেব, এটা একটা চিন্তার ব্যাপার আছে। একটা ছেলে এত বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সার্ভিস দিচ্ছে। সারা জীবন কেউ থাকবে না, এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে তাদের সার্ভিসকে আমরা সবসময় মূল্যায়ন করতে চাই। রিয়াদকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবেই। রিয়াদের এখনও খেলার আগ্রহ আছে, ইচ্ছা আছে, চেষ্টাটা আছে।”
“হয়তো ও পারফর্ম করেনি, সেটাও মাথায় আছে, রিয়াদের কাছ থেকে যেটা আশা করি সেটা আমরা পাইনি। ছোট ছোট রান আছে, একদম নেই তা না। ২৭ বলে ২৭ (২৫) আছে, ২২ বলে কিছু রান (২৭) আছে। তবে রিয়াদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা করি। রিয়াদ আমাদের ম্যাচ উইনার। এটা ভুলে গেলে হবে না।… এমন একটা খেলোয়াড়কে হুট করে ‘নো’ বলতে পারবেন না।”
আগামী ২৪ অক্টোবর বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে বাংলাদেশের। এর আগে দলটি নিউ জিল্যান্ডে খেলবে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ। এই টুর্নামেন্টের আরেক দল পাকিস্তান।