সাইফের ৪ উইকেটে আবাহনীর টানা চতুর্থ জয়

রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ও অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব পেয়েছে নিজেদের দ্বিতীয় জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 12:12 PM
Updated : 25 March 2023, 12:12 PM

দারুণ বোলিংয়ে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে অল্পেই থামিয়ে মঞ্চ সাজিয়ে দেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। সহজ লক্ষ্যে আরও একবার পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন মোহাম্মদ নাইম শেখ। সাইফ-নাইমের যুগলবন্দীতে টানা চতুর্থ জয় পেল আবাহনী লিমিটেড। 

বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে গাজী গ্রুপের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছে আবাহনী। ১৫৪ রানের ছোট লক্ষ্য ১১৫ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। 

টানা চার জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে আবাহনী। শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জও প্রথম চার ম্যাচ জিতেছে। তবে নেট রান রেটে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে আবাহনী। 

গাজী গ্রুপকে ১৫৩ রানে বেধে ফেলার পথে ৯ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন সাইফ। তার হাতেই উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার। 

আগের ম্যাচে মোহামেডানের বিপক্ষে অপরাজিত সেঞ্চুরি করা নাইম এবার খেলেছেন ১০০ বলে ৭৪ রানের হার না মানা ইনিংস। লিগের চার ম্যাচে এটি তার তৃতীয় পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস।

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে দশ রানের মধ্যে গাজী গ্রুপের দুই ওপেনারকে ফেরায় আবাহনী। শুরুর এই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি গাজী। 

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেন ভারতীয় রবি তেজা। এছাড়া মাহমুদুল হাসান (৩০), আকবর আলি (১৫), এসএম মেহেরব হাসানরা (২১) ভালো শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। 

সাইফের ৪ উইকেট ছাড়া দুই বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম ও রকিবুল হাসান নেন ২টি করে উইকেট। 

রান তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে ৭৬ রান করে ফেলে আবাহনী। দারুণ শুরু করা এনামুল হককে আউট করেন হুসনা হাবিব মেহেদী। বোল্ড হয়ে ফেরা এনামুল ৩৪ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে করেন ৩৮ রান। 

দ্বিতীয় উইকেটে মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে ৬৩ রান যোগ করেন নাইম। ম্যাচ জিততে ১৫ রান বাকি থাকতে আউট হন জয়। ২ চার ও ১ ছয়ে ৩৪ বলে ২৯ রান। 

ইন্দ্রজিত বাবাকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন নাইম। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ১৯তম ফিফটির ইনিংসে ৪ চার ও ১টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৪২.২ ওভারে ১৫৩ (হাবিবুর ৪, মেহেদি ০, অমিত ১২, মাহমুদুল ৩০, রবি তেজা ৪১, আকবর ১৫, মেহেরব ২১, এনামুল ২, কাজি অনিক ৮, সুমন ১২*, হুসনা হাবিব ১; তানভির ৬-০-২৭-২, সাইফ উদ্দিন ৯-০-৩০-৪, তানজিম ৭-০-১৮-০, রকিবুল ৭.২-০-৩২-২, নাহিদুল ১০-০-৪০-১, মোসাদ্দেক ৩-০-৬-১)

আবাহনী লিমিটেড: ৩০.৫ ওভারে ১৫৪/২ (এনামুল ৩৮, নাইম ৭৪*, জয় ২৯, ইন্দ্রজিত ১০*; সুমন ৬-০-৩৩-০, এনামুল ৫-০-৩০-০, কাজি অনিক ৩-০-২২-০, হুসনা হাবিব ৫-০-১৮-১, রবি তেজা ৩-০-৯-০, মাহমুদুল ৫-০-২৯-০, মেহেরব ৩.৫-০-১৩-১)

আজমির-মার্শাল-আজিমের ফিফটির পর শরিফউল্লাহর ঘূর্ণি

বিকেএসপির ৪ নম্বর মাঠে বড় রানের ম্যাচ উপহার দিল অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও সিটি ক্লাব। যেখানে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে প্রথম বিভাগ থেকে উঠে আসা অগ্রণী ব্যাংক। 

সিটি ক্লাবকে ১৮ রানে হারিয়েছে তারা। ২৯২ রানের বিশাল লক্ষ্যে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭৩ রানের বেশি করতে পারেনি সিটি ক্লাব। চার ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের দ্বিতীয় জয় এটি। আর সিটি ক্লাব এখনও প্রথম জয়ের খোঁজে।

অগ্রণী ব্যাংককে তিনশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর আজমির আহমেদ, মার্শাল আইয়ুব ও আজিম নাজির কাজি। পঞ্চাশ পেরোলেও তিন জনের কেউই সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ১১ রানের আক্ষেপে পুড়েছেন আজমির।

পরে বল হাতে ৩ উইকেট নেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার শরিফউল্লাহ। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনজনকেই আউট করেন তিনি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লের মধ্যে সাদমান ইসলাম (৫) ও ইলিয়াস সানির (২) উইকেট হারায় অগ্রণী ব্যাংক। চাপ সামাল দিতে পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেন আজমির।

২৩তম ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে ১০ চার ও ৫ ছয়ে ৯২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন ডানহাতি ওপেনার। ২২ ম্যাচের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এটি তার সর্বোচ্চ ইনিংস।

পঞ্চম উইকেটে ১০৬ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক মার্শাল ও ভারতীয় আজিম। দুজনই আউট হন ষাটের ঘরে। ৫ চারে ৫৭ বলে ৬২ রান করেন মার্শাল। 

লিগের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আজিমের ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৭৭ বলে ৬৬ রান। শেষ দিকে ১৮ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলেন আবু হায়দার রনি। 

সিটি ক্লাবের পক্ষে ৪ উইকেট নেন অধিনায়ক রবিউল হক। তৌফিক আহমেদের শিকার ৩টি। 

রান তাড়ায় শুরুতেই আব্দুল্লাহ আল মামুনের উইকেট হারায় সিটি ক্লাব। তবে চাপ বাড়তে দেননি তৌফিক খান তুষার ও শাহরিয়ার কোমল। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ৫ চার ও ৪ ছয়ে ৫৬ বলে ৫৯ রান করেন তৌফিক খান।

শাহরিয়ারের ব্যাট থেকে আসে ৬৮ বলে ৫১ রান। পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস খেলেন চার নম্বরে নামা রাফসান আল মাহমুদও। ৪০তম ওভারে আউট হওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ৭৩ বলে করেন ৫৩ রান। 

শেষ ১০ ওভারে সিটি ক্লাবের প্রয়োজন ছিল ৭৮ রান। আসিফ আহমেদ রাতুল ৪৫ বলে ৪৬ রান করে আউট হয়ে যাওয়ার পর আর কেউই আশা দেখাতে পারেননি। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৯১/৮ (আজমির ৮৯, সাদমান ৫, ইলিয়াস ২, শামসুল ১৬, মার্শাল ৬২, আজিম ৬৬, শরিফউল্লাহ ২, আবু হায়দার ২১, জাহিদ ০*; রবিউল ১০-১-৬৩-৪, তৌফিক আহমেদ ৯-০-৫৭-৩, নাইমুর ১০-০-৪৯-০, মামুন ৪-০-২৩-০, আসিফ হাসান ৫-০-৩১-১, রাফসান ৬-১-২৫-০, আসিফ আহমেদ ৬-০-৩৯-০)

সিটি ক্লাব: ৫০ ওভারে ২৭৩/৯ (মামুন ১, তৌফিক খান ৫৯, শাহরিয়ার ৫১, রাফসান ৫৩, আসিফ আহমেদ ৪৬, সাইফুল ২০, রবিউল ১১, রাফসান ১০, নাইমুর ০, আসিফ হাসান ৪*, তৌফিক আহমেদ ৪*; আরাফাত ৯-০-৫৯-১, শরিফউল্লাহ ৯-১--৩৫-৩, এনামুল ৯-১-৪৫-২, আবু হায়দার ৯-০-৫৩-১, ইলিয়াস ৩-০-২৬-০, জাহিদ ১০-০-৪৫-১, আজমির ১-০-৬-০)

ফল: অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ১৮ রানে জয়ী 

মুমিনুল-আমানদিপের ফিফটিতে রূপগঞ্জ টাইগার্সের জয়

চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দারুণ ফর্মে মুমিনুল হক। চার ম্যাচে তিনবার খেললেন পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংস। মুমিনুলের সঙ্গে আমানদিপ খারের ফিফটিতে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব পেয়েছে নিজেদের দ্বিতীয় জয়। 

ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ঢাকা লেপার্ডসের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জিতেছে রূপগঞ্জ টাইগার্স। ২৪৮ রানের লক্ষ্য ৪ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। 

চার ম্যাচে লেপার্ডসের চতুর্থ পরাজয় এটি। দুই জয় ও এক পরিত্যক্ত ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের পাঁচ নম্বরে রূপগঞ্জ টাইগার্স।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে সাব্বির হোসেনের উইকেট হারায় লেপার্ডস। দ্বিতীয় উইকেটে ১০২ রান যোগ করেন পিনাক ঘোষ ও জাকিরুল আহমেদ।

৬ চার ও ২ ছয়ে ১০২ বলে ৭৯ রান করেন পিনাক। অল্পের জন্য ফিফটি করতে পারেননি জাকিরুল। ৩ চার ও ১ ছয়ে ৫১ বলে ৪৭। 

পরের ব্যাটসম্যানরা কেউই দায়িত্ব নিয়ে দলের ইনিংস এগিয়ে নিতে পারেননি। রকিবুল হাসান (২১), মইন খান (৩৬), সোহরাওয়ার্দি শুভদের (১৯) ছোট ছোট ইনিংসে আড়াইশ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ পায় লেপার্ডস।

রান তাড়ায় ঝড়ো শুরুর ইঙ্গিত দেন ইমরানুজ্জামান। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি কিপার-ব্যাটসম্যান। ৩ চার ও ২ ছয়ে ২৩ বলে ২৬ রান। 

দ্বিতীয় উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়েন ইমতিয়াজ হোসেন ও মুমিনুল। ইমতিয়াজ ফেরেন ৪১ রান করে। মুমিনুল করেন লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের ২৬তম ফিফটি। 

মইনের বল কট বিহাইন্ড হয়ে থামে মুমিনুলের ইনিংস। ৫ চার ও ১ ছয়ে ৯৪ বলে করেন ৭৫ রান। যা এবারের লিগে তার সর্বোচ্চ। 

পরে অধিনায়ক নাঈম ইসলাম ও আমানদিপ দলকে এগিয়ে নেন। নাইম ৪০ রান করে ফিরলে কিছুটা চাপে পড়ে যায় রূপগঞ্জ টাইগার্স। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে বাকি কাজ সারেন আমানদিপ।

ভারতীয় ব্যাটসম্যানের ৪৩ বলে ৫১ রানের ইনিংসে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রূপগঞ্জ টাইগার্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ঢাকা লেপার্ডস: ৫০ ওভারে ২৪৭/৮ (সাব্বির ৯, পিনাক ৭৯, জাকিরুল ৪৭, জুনায়েদ ৬, রকিবুল ২১, মইন ৩৬, চতুরাঙ্গা ৬, সোহরাওয়ার্দি ১৯, রায়হান ৯*, সালাউদ্দিন ৩*; মুকিদুল ৯-১-৪৩-২, আলাউদ্দিন ১০-০-৬১-২, নাইম হাসান ৬-০-৩১-০, সানজামুল ৮-০-৩৯-১, নাঈম ইসলাম ৯-০-৩২-২, ইয়াসিন ৮-০-৪০-১)

রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৪৯.২ ওভারে ২৪৯/৫ (ইমতিয়াজ ৪১, ইমরানুজ্জামান ২৬, মুমিনুল ৭৫, নাঈম ইসলাম ৪০, আমানদিপ ৫১*, আলাউদ্দিন ১, সালমান ১০*; চতুরাঙ্গা ১০-০-৪৯-০, সোহেল ৯.২-০-৫৫-০, সালাউদ্দিন ৯-১-৪৩-৩, মইন ১০-০-৩৩-১, সোহরাওয়ার্দি ৭-০-৫০-০, রায়হান ৪-০-১৭-০)

ফল: রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব ৫ উইকেটে জয়ী