১৭৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে নির্বাচকদের বার্তা দিয়ে রাখলেন জাকির

ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়ার পর এবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়েও দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2022, 12:42 PM
Updated : 2 Dec 2022, 12:42 PM

টেস্টে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের সমস্যা অনেক দিনের। এর মধ্যেই আবার ভারতের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে অন্তত চোটের কারণে পাওয়া যাবে না অভিজ্ঞ তামিম ইকবালকে। বিকল্প তাই খুঁজতেই হবে নির্বাচকদের। সেখানেই নিজের দাবি জানিয়ে রাখলেন জাকির হাসান। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের জোয়ার বইয়ে দেওয়া ব্যাটসম্যান এবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে উপহার দিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।

ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে কক্সবাজারে এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ইনিংসে স্রেফ সেঞ্চুরি করেই থামেননি, ইনিংসকে এগিয়ে নেন আরও অনেক দূর। ১০ ঘণ্টা ২৩ উইকেটে উইকেটে থেকে ৪০২ বলে ১৭৩ রানের অসাধারণ এক লড়িয়ে ইনিংস খেলেন তিনি।

ম্যাচের শেষ দিনে শুক্রবার অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে তার বিদায়ের পর অবশ্য হারের শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। তবে লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় আর আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে আনঅফিসিয়াল টেস্ট ম্যাচটি বাঁচিয়ে ফেলে তারা।

জাকিরের সঙ্গে নয় নম্বরে নামা নাঈম হাসানের জুটিতে ম্যাচ ড্রয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ বেলায় অল্প সময়ের ব্যবধানে দুজনের বিদায়ে বিপাকে পড়ে যায় দল। শেষ জুটিতে দুই বোলার রেজাউর রহমান রাজা ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ ২.২ ওভার কাটিয়ে দেন প্রবল চাপের মধ্যে। দিনের খেলার যখন বাকি আরও দুই ওভার, লাইট মিটার দেখে ম্যাচের সমাপ্তি টানেন দুই আম্পায়ার। ভারতীয় অধিনায়ক অভিমন্যু ইশ্বরন ও দলের অন্যরা যদিও প্রতিবাদের চেষ্টা করেন যথেষ্ট, তবে আলোর ক্ষেত্রে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

শেষের ওই নাটকীয়তা বাদ দিলে দিনটি জাকিরের। আগের দিন শতরানের জুটি অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে তিনি শুরু করেন শেষ দিনের লড়াই। বাংলাদেশ তখনও পিছিয়ে ১৮১ রানে।

জাকির ও শান্তর জুটি সাবধানী ব্যাটিংয়ে আরও অনেকটা টেনে নেয় দলকে। প্রথম ঘণ্টায় বাউন্ডারি আসে স্রেফ একটি। জয়ন্ত যাদবের বল লেগ সাইডে আলতে ঠেলে জাকির শতরান পূরণ করেন ২২৭ বলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার ত্রয়োদশ সেঞ্চুরি এটি।

শতরানে চোখ ছিল শান্তরও। তবে মুহূর্তের ভুলে তা তিন অঙ্কের কাছে তিনি যেতে পারেননি। পেসার মুকেশ কুমারের ভেতরে ঢোকা বল ছোবল দেয় তার প্যাডে। থেমে যায় ১৮৭ বলে তার ৭৭ রানের ইনিংস।

এরপর বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যান খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। দুঃসময়ের বৃত্তে থাকা মুমিনুল হক ব্যর্থতার জাল ছিঁড়তে পারেননি এ দিনও। শুরুটা ভালো করলেও আউট হন তিনি ১৭ রানে। অফ স্পিনার জয়ন্ত যাদবকে লেট কাটে চার মারার পরের বলে সামনে খেলার ডেলিভারি পেছনের পায়ে আলতো কলে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।

অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি জাকিরকে। কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলি অনিকের লড়াই শেষ হয় ৯০ বলে ১৬ রান করে। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা মোসাদ্দেক হোসেন এবার বিদায় নেন শূন্যতে। রানের দেখা পাননি তাইজুল ইসলামও। ৫ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় দল।

নাঈম হাসান তখন কিছুটা সময় সঙ্গ দেন জাকিরকে। দলকে একটা পর্যায়ে নিরপদ বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ মনোযোগ হারিয়ে বসেন জাকির। সৌরভের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে একটু বেরিয়ে আলসে ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বসেন। টার্ন করে বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। শেষ হয় তার ম্যারাথন ইনিংস।

তবে নিজেকে জানান দেওয়ার কাজটি তিনি ততক্ষণে করে ফেলেছেন। এবছর জাতীয় লিগে ৫৫.২৫ গড়ে সর্বোচ্চ ৪৪২ রান তার, গত বিসিএলে করেন ৯৯ গড়ে ৩৯৬ রান। এছাড়া গত বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও ছিলেন দারুণ সফল। অপেক্ষা এখন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার।

সৌরভের পরের ওভারে দারুণ একটি আর্ম ডেলিভারিতে ৪৫ বলে ৫ করে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নাঈম। চোখ রাঙাচ্ছিল তখন পরাজয়। তবে শেষ পর্যন্ত তা এড়াতে পারে বাংলাদেশ।

সিরিজের দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল টেস্ট মঙ্গলবার থেকে সিলেটে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ ১ম ইনিংস: ১১২

ভারত ‘এ’ দল ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৪০৪/৫) ১৩২ ওভারে ৪৬৫/৫ (ডি.) (যাশাসবি ১৪৫, ইশ্বরন ১৪২, ঢুল ২০, তিলক ৩৩ আহত অবসর, সরফরাজ ২১, উপেন্দ্র ৭১*, জয়ন্ত ১০, অতিত ৮*; খালেদ ২৫-১-৯৩-২, রাজা ২৩-৩-৮০-০, তাইজুল ৪৮-৯-১৭০-৩, নাঈম ৩২-৪-১০৫-০, মোসাদ্দেক ৪-১-১০-০)।

বাংলাদেশ ‘এ’ ২য় ইনিংস: ৬৩ ওভারে ১৭২/১ (জয় ২১, জাকির ৮১*, শান্ত ৫৬*; মুকেশ ১০.৫-৩-২৫-০, সাইনি ১১-৩-২৪-০, অতিত ৩.১-১-৪-০, জয়ন্ত ১৮-২-৫৫-০, সৌরভ ১৮-৫-৪৫-১, সরফরাজ ২-০-১২-০)।