অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিরিজ
২০১৭ সালের পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম জয়ের দেখা পেল পাকিস্তান।
Published : 08 Nov 2024, 03:58 PM
আগের ম্যাচের ছন্দ ধরে রেখে এবার আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন হারিস রউফ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়াকে অল্পে বেঁধে গড়ে দিলেন শক্ত ভিত। পরে সাইম আইয়ুব ও আব্দুল্লাহ শাফিকের দেড়শর কাছাকাছি উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ এক জয় তুলে নিল পাকিস্তান।
অ্যাডিলেইডে শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯ উইকেটের দাপুটে জয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে পাকিস্তান। পাকাপাকিভাবে মোহাম্মদ রিজওয়ান নেতৃত্ব পাওয়ার পর এটাই তাদের প্রথম জয়।
রউফ আর শাহিন শাহ আফ্রিদির দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ৩৫ ওভারেই ১৬৩ রান করে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। বল হাতেও তারা ন্যূনতম লড়াই করতে পারেনি। সাইম ও শাফিকের ১৩৭ রানের উদ্বোধনী জুটির সৌজন্যে ২৬.৩ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সফরকারীরা।
গতি আর সুইংয়ের মিশেলে আগুনে বোলিংয়ে ২৯ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন রউফ। ম্যাচ সেরাও হন তিনি। আর সফল রান তাড়ায় ৮২ রান করেন সাইম। ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন আরেক ওপেনার শাফিক।
আগের ম্যাচে একটু খরুচে ছিলেন রউফ, তারপরও অস্ট্রেলিয়ার ছোট লক্ষ্য তাড়ায় তিন উইকেট নিয়ে লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দুই উইকেটে হারের হতাশা তাদের সঙ্গী হয়।
অ্যাডিলেইড ওভালের উইকেটে এ দিন ঘাসের ছোঁয়া ছিল বেশ। তবে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হবে বলেই শুরুতে ধারাভাষ্যে বলা হয়। বল সেখানে ব্যাটে এসেছেও দারুণভাবে। তবে যথেষ্ট মুভমেন্ট ও বাউন্সও ছিল, যা কাজে লাগান পাকিস্তানি পেসাররা।
গতি বরাবরই রউফের বড় অস্ত্র। মুভমেন্ট সবসময় যদিও আদায় করতে সেভাবে পারেন না তিনি। লাইন-লেংথও এলোমেলো থাকে অনেক সময়। তবে এ দিন তিনি ছিলেন যেন নিজের সেরা চেহারায়।
রউফ আক্রমণে আসার আগেই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার জেইক ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ও ম্যাথু শর্টকে ফেরান আফ্রিদি। এরপর স্টিভেন স্মিথ ও জশ ইংলিসের জুটি গড়ার চেষ্টা থামান রউফ। ইংলিসকে ফেরান তিনি লেগ স্টাম্প ঘেঁষা গতিময় ডেলিভারিতে।
নিজের পরের ওভারে তিনি ফেরান মার্নাস লাবুশেনকে। আরেক প্রান্তে দারুণ খেলতে থাকা স্টিভেন স্মিথকে ৩৫ রানে বিদায় করেন হাসনাইন।
রউফ একে একে ফেরান অ্যারন হার্ডি ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে। পরে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে আউট করে তিনি পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। কয়েক ওভার পর অ্যাডাম জ্যাম্পার স্টাম্প ভেঙে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেন আফ্রিদি।
২ উইকেটে ৭৯ রান থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ইনিংসের ১৫ ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তাদের ইনিংসে ৪০ রানের কোনো জুটিও হয়নি। সর্বোচ্চ ৩৮ রান আসে স্মিথ ও ইংলিসের জুটিতে। আর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান স্মিথ।
আরও সাত জন দুই অঙ্ক স্পর্শ করেন; কিন্তু আর কেউ ২০ পর্যন্তও যেতে পারেনি।
অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট নেওয়া পাকিস্তানের নবম বোলার রউফ। সবশেষ ২০১৭ সালে পাঁচ শিকার ধরেছিলেন হাসান আলি। পাকিস্তানের হয়ে এই অভিজ্ঞতা প্রথম হয়েছিল একজন লেগ স্পিনারের। ১৯৮৪ সালে কিউ হিউজের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন কিংবদন্তি লেগ স্পিনার আব্দুল কাদিরের।
রউফের এই পাঁচ উইকেটের চারটিতেই ক্যাচ নেন রিজওয়ান। সঙ্গে আরও দুটি ক্যাচ মিলিয়ে তিনি স্পর্শ করেন বিশ্বরেকর্ড। এক ওয়ানডেতে ছয় ডিসমিসালের সপ্তদশ নজির এটি। তবে পাকিস্তানের হয়ে আগে করতে পেরেছিলেন কেবল সারফারাজ আহমেদ।
অধিনায়ক হিসেবে ছয় ডিসমিসালের কৃতিত্ব ওয়ানডে ইতিহাসে আগে ছিল কেবল একজনেরই। ২০০০ সালে রেকর্ড বইয়ে নাম তুলেছিলেন ইংল্যান্ডের অ্যালেক স্টুয়ার্ট।
অস্ট্রেলিয়াকে অল্পে আটকে দেওয়ায় পেসার আফ্রিদির অবদানও কম নয়। আট ওভারে ২৬ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন তিনি। নাসিম শাহ ও মোহাম্মদ হাসনাইন একটি করে উইকেট নেন।
লক্ষ্য ছোট হলেও, রান তাড়ায় শুরুতে বেশ সতর্ক ছিলেন সাইম ও শাফিক। এক পর্যায়ে ২৭ বলে সাইমের রান ছিল মাত্র ৭। এরপর জশ হেইজেলউডের বলে স্কয়ার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে হাত খোলেন তিনি। প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ককে ছক্কায় ওড়ানোর পর জ্যাম্পার বলও উড়িয়ে সীমানার বাইরে ফেলেন তিনি।
৫২ বলে অর্ধশতক ছোঁয়ার পর, ক্যারিয়ারে প্রথম সেঞ্চুরির আশাও জাগান সাইম। শেষ পর্যন্ত যদিও তা হয়নি; জ্যাম্পার বলে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার আগে ৭১ বলে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৮২ রান করেন তিনি।
এরপর বাবর আজমকে নিয়ে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেন ৬৯ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৪ রান করা শাফিক। দুই দলের স্কোর যখন সমান, জ্যাম্পার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করেন সাবেক অধিনায়ক বাবর।
এর আগে সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পাকিস্তান ওয়ানডে জিতেছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে, মেলবোর্নে ৬ উইকেটে।
দীর্ঘ খরা কাটানোর পর এবার সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামবে তারা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে আগামী রোববার পার্থে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৩৫ ওভারে ১৬৩ (শর্ট ১৯, ফ্রেজার-ম্যাকগার্ক ১৩, স্মিথ ৩৫, ইংলিস ১৮, লাবুশেন ৬, হার্ডি ১৪, ম্যাক্সওয়েল ১৬, কামিন্স ১৩, স্টার্ক ১, জ্যাম্পা ১৮, হেইজেলউড ২*; আফ্রিদি ৮-১-২৬-৩, নাসিম ১০-০-৬৫-১, হাসনাইন ৬-০-২৭-১, রউফ ৮-০-২৯-৫, সাইম ৩-০-১৪-০)
পাকিস্তান: ২৬.৩ ওভারে ১৬৯/১ (সাইম ৮২, শাফিক ৬৪*, বাবর ১৫*; স্টার্ক ৪-১-২৮-০, হেইজেলউড ৭-০-৩৭-০, কামিন্স ৭-১-৩৫-০, জ্যাম্পা ৬.৩-১-৪৪-১, হার্ডি ২-০-২৪-০)
ফল: পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: হারিস রউফ