লিগের প্রথম ছয় ম্যাচেই চারশ রান ছাড়িয়ে গেছেন এনামুল হক ও মোহাম্মদ নাইম শেখ।
Published : 02 Apr 2023, 08:58 PM
আরিফুল জনির অফ স্টাম্পের বাইরের বল কাভারের দিকে ঠেলে দ্রুত দুই রান নিলেন এনামুল হক। পৌঁছে গেলেন শত রানে। ডান হাত বাতাসে ছুঁড়ে করলেন উদযাপন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দুই আসর ধরে এটিকে নিয়মিত দৃশ্যই বলা চলে। গত বারের রেকর্ড গড়া মৌসুমের পর এবারও দুর্বার এনামুল।
বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে এনামুলের সেঞ্চুরির পর ঢাকা লেপার্ডসের বিপক্ষে ৫৪ রানের সহজ জয় পেয়েছে আবাহনী লিমিটেড। ২৬৭ রানের লক্ষ্যে ইনিংসের ৭ বল বাকি থাকতে ২১২ রানে গুটিয়ে গেছে লেপার্ডস।
ছয় ম্যাচে আবাহনীর ষষ্ঠ জয় এটি। সমান ম্যাচে এখনও জয়ের দেখা পায়নি লিগের নবাগত দল লেপার্ডস। আবাহনীর মতো ১২ পয়েন্ট লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জেরও। তবে নেট রান রেটের হিসেবে শীর্ষস্থান দখলে রেখেছে আবাহনী।
আসরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করলেন এনামুল। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের ১৭তম লিস্ট 'এ' সেঞ্চুরিতে করেন ১২৬ বলে ১০৭ রান। ৭ চার ও ৪ ছক্কার ইনিংসে ম্যাচ সেরা তিনিই।
গত প্রিমিয়ার লিগে রেকর্ড ১ হাজার ১৩৮ রান করা এনামুল এবার প্রথম ছয় ম্যাচেই করে ফেলেছেন ৪১৯ রান। দুই সেঞ্চুরির সঙ্গে দুইটি ফিফটি করেছেন আবাহনীর ডানহাতি ওপেনার।
এনামুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন আবাহনীর আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইম শেখ। লেপার্ডসের বিপক্ষে ৩ চার ও ২ ছক্কায় তিনি খেলেছেন ৮৫ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। সব মিলিয়ে ছয় ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৪১২ রান।
দুই ওপেনারের সৌজন্যে লেপার্ডসের বিপক্ষে প্রথম উইকেটে ১৪৮ রান পায় আবাহনী। ফিফটির পরপর নাইম ফিরে গেলেও এগিয়ে যান এনামুল।
তবে পরের ব্যাটসম্যানরা তেমন কিছু করতে পারেননি। শেষ দিকে সাইফ উদ্দিন ১৮ ও তানজিম হাসান ১২ রানের ক্যামিও খেলে দলকে আড়াইশ পার করান।
রান তাড়ায় পিনাক ঘোষ ছাড়া আর কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি। চলতি লিগে দ্বিতীয় ফিফটিতে ৬৮ রান করেন ২৪ বছর বয়সী ওপেনার।
আবাহনীর পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন রিপন মন্ডল ও রকিবুল হাসান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী লিমিটেড: ৫০ ওভারে ২৬৬/৬ (এনামুল ১০৭, নাইম ৫৭, জাকের ১৩, আফিফ ২১, মোসাদ্দেক ২১, দানিশ ৬, সাইফ উদ্দিন ১৮*, তানজিম ১২*; সালাউদ্দিন ১০-০-৬০-১, দেলোয়ার ১০-০-৪৫-২, মইন ৫-০-২৩-০, সোহরাওয়ার্দি ১০-০-৪৮-০, ইমরান ৪-০-২৬-০, আরিফুল ১০-০-৫৪-১, রিদয় ১-০-৫-০)
ঢাকা লেপার্ডস: ৪৮.৫ ওভারে ২১২ (পিনাক ৬৮, জসিম ৮, জাকিরুল ১০, রকিবুল ১০, ইমরান ২৯, রিদয় ১৫, মইন ৩১, সোহরাওয়ার্দি ৭, দেলোয়ার ১৯, আরিফুল ০, সালাউদ্দিন ৩*, সাইফ উদ্দিন ৭-১-১৮-২, তানজিম ৬-০-৩২-০, রিপন ৫.৫-০-৩৩-৩, মোসাদ্দেক ৬-১-২৪-০, তানভির ১০-১-৪৪-২, রকিবুল ৮-০-৩০-৩, দানিশ ৬-০-২৪-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৫৪ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা: এনামুল হক
ফরহাদ-মুরাদের দারুণ বোলিংয়ে শাইনপুকুরের অনায়াস জয়
দুর্দান্ত বোলিংয়ে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে অল্পে বেঁধে রাখেন ফরহাদ রেজা ও হাসান মুরাদ। ছোট লক্ষ্যে অনায়াসে বাকি কাজ সারেন মাহফিজুল ইসলাম। শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব পায় ৮ উইকেটের সহজ জয়।
ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলি স্টেডিয়ামে ১৬২ রানের লক্ষ্যে ১০৩ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে শাইনপুকুর।
৪টি করে উইকেট পেয়েছেন ফরহাদ ও মুরাদ। মাহফিজুল খেলেছেন ৬৯ রানের অপরাজিত ইনিংস।
১০ ওভারে স্রেফ ২৭ রানে ৪ উইকেট নেওয়া মুরাদের হাতে উঠেছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পঞ্চাশের আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় অগ্রণী ব্যাংক। একশর আগে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন আজিম নাজির কাজি ও মার্শাল আইয়্যুবও।
সপ্তম উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়েন নুরুজ্জামান ও শরিফউল্লাহ। ত্রিশ পেরোলেও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি দুজনের কেউই। নুরুজ্জামান ৩৮ ও শরিফউল্লাহ ৩১ রান করে আউট হন।
ইনিংসের ২৬ বল আগেই ১৬১ রানে গুটিয়ে যায় অগ্রণী ব্যাংক।
রান তাড়ায় ভালো শুরু করেন শাইনপুকুরের দুই তরুণ ওপেনার মাহফিজুল ও জিসান আলম। আফগানিস্তানে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রিদেশীয় সিরিজে দারুণ খেলে আসা জিসান ৩ চারে করেন ২০ রান। তার দূর্ভাগ্যজনক রান আউটে ভাঙে ৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক অমিত হাসানকে নিয়ে ৬৯ রান যোগ করেন মাহফিজুল। লিস্ট 'এ' অভিষেকে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ বলে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন ১৯ বছর বয়সী ওপেনার।
অমিতের ব্যাট থেকে আসে ৩৬ রান। প্রিয়াঙ্ক পঞ্চল অপরাজিত থাকেন ২৬ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৪৫.৪ ওভারে ১৬১ (আজমির ২৭, নাকিব ২, জাহিদ ১, শামসুল ৩, আজিম ১১, মার্শাল ২৫, নুরুজ্জামান ৩৮, শরিফউল্লাহ ৩১, আবু হায়দার ১০*, আরাফাত ০, এনামুল ২; মেহেদি ৮-০-৪০-০, ফরহাদ ৮.৪-০-৩১-৪, নাবিল ১০-৩-১৯-১, মুরাদ ১০-০-২৭-৪, জিসান ৭-০-২৯-০, আমিনুল ২-০-১৪-০)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৩২.৫ ওভারে ১৬২/২ (মাহফিজুল ৬৯*, জিসান ২০, অমিত ৩৬, প্রিয়াঙ্ক ২৬*; আবু হায়দার ৪-০-২২-০, আরাফাত ৭-০-৪৯-০, আজিম ১০-০-৪২-০, এনামুল ৪-০-২১-০, জাহিদ ৬-০-২৩-১, শরিফউল্লাহ ১.৫-০-৪-০)
ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: হাসান মুরাদ
সিটি ক্লাবের শ্বাসরুদ্ধকর জয়
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ১ উইকেটে হারিয়েছে সিটি ক্লাব। ব্রাদার্সের ২১৯ রানের সংগ্রহ এক বল হাতে রেখে টপকে যায় সিটি ক্লাব।
জয়ের জন্য ৪২ রান বাকি থাকতে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে সিটি ক্লাব। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নেন রাফসান আল মাহমুদ। রাহাতুল ফেরদৌসের করা শেষ ওভারে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনিও ফিরে যান ড্রেসিং রুমে।
তখন প্রয়োজন ছিল তিন বলে ৩ রান। ক্রিজে নেমে প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন আসিফ হাসান। পরের বলে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন ইফরান হোসেন। ২২ বলে ১২ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন এই ডানহাতি পেসার।
ছয় ম্যাচে সিটি ক্লাবের দ্বিতীয় জয় এটি। ব্রাদার্স পেয়েছে একটি জয়।
ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সে এসেছে সিটি ক্লাবের এই জয়। শুরুতে ১ চার ও ৫ ছক্কায় স্রেফ ৩৩ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন তৌফিক খান। দলের হাল ধরা রাফসান খেলেন ৫৩ বলে ৩৫ রানের ইনিংস।
মাঝে জয়রাজ শেখ ৩৪, আসিফ আহমেদ ২১, রবিউল হক ১৮ ও শাহরিয়ার কোমল ১৫ রান করেন।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চাশের আগে ৪ ও সত্তরের আগে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ব্রাদার্স। সেখান থেকে সাদ নাসিমের ৭৪ রানের ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ায় তারা।
পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের ফিফটির সঙ্গে আরাফাত সানি ৩১ ও জাহিদুজ্জামান ২৭ রান করলে দুইশ ছাড়ানো স্কোর পায় ব্রাদার্স। যা পরে জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৪৬.৫ ওভারে ২১৯ (মিজানুর ৫, তানজিদ ৪২, সাব্বির ১৩, আনিসুল ০, মাইশুকুর ০, সাদ ৭৪, জাহিদুজ্জামান ২৭, রাহাতুল ৯, আরাফাত ৩১, সাকলাইন ১০*, মেহেদি ২; রবিউল ৯-১-৪০-১, ইফরান ১০-০-৫২-৩, আসিফ হাসান ১০-০-৩১-৩, আসিফ আহমেদ ৮-০-৩৯-১, মাজ ৩.৫-০-২৯-১, রায়ান ২-০-৮-০, এসএম আব্দুল্লাহ ১-০-১০-০, রাফসান ৩-১-৯-১)
সিটি ক্লাব: ৪৯.৫ ওভারে ২২২/৯ (রায়ান ৮, তৌফিক ৪২, শাহরিয়ার ১৫, মাজ ১২, জয়রাজ ৩৪, আসিফ আহমেদ ২১, রাফসান ৩৫, রবিউল ১৮, এসএম আব্দুল্লাহ ১৪, ইফরান ১২*, আসিফ হাসান ১*; মেহেদি ৮-০-৪১-০, সাকলাইন ১০-০-৪১-১, সাব্বির ৪-০-১৬-৩, আনিসুল ১-০-১০-০, আরাফাত ১০-০-৩৭-২, রাহাতুল ৬.৫-০-৩৬-১, সাদ ১০-১-৩৯-২)
ফল: সিটি ক্লাব ১ উইকেটে জয়ী