সিলেটে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরির মাঝে হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। চট্টগ্রামে ঠিক বিপরীত। এখানে পুরো দাপট রোদের। আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও নেই বৃষ্টির শঙ্কা। প্রকৃতির চেহারা ভিন্ন হলেও বাংলাদেশ দলের অবস্থা অভিন্ন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে দলের কাছ থেকে চান্দিকা হাথুরুসিংহের চাওয়াটাও আগের মতোই। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পর এবার আইরিশদের বিপক্ষেও ৩-০তে জিততে চান বাংলাদেশের প্রধান কোচ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সোমবার দুপুর ২টায় শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান স্বাগতিকরা সিরিজ শুরুর আগের দিন করেছে ঐচ্ছিক অনুশীলন। যেখানে ছিলেন না অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাসুম আহমেদরা।
সাকিব-লিটনসহ দলের বাকি সবাই অবশ্য শনিবার পুরো দমে অনুশীলন করেন। টি-টোয়েন্টির আমেজে বড় শট খেলার দিকেই বেশি মনোযোগ দেখা গেছে সেদিন। রোববার ঐচ্ছিক অনুশীলনেও সেন্টার উইকেটে বড় বড় ছক্কা মারতে দেখা যায় তাওহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্তদের।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে ছিল টি-টোয়েন্টিতে নতুন শুরুর বার্তা। তাদের হোয়াইটওয়াশ করে সেই অভিযানে উড়ন্ত সূচনাই করেছে সাকিবের দল। আইরিশদের বিপক্ষে এবার সেই সাফল্যের ধারা আরও লম্বা করার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে।
এবারের অভিযানে নিজেদের স্কোয়াডে অবশ্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড সিরিজে বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামকে দেখার পর এবার দলে নেওয়া হয়েছে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনকে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় তার ওপর আস্থার কথা বলেছেন হাথুরুসিংহে।
এছাড়া লিটন দাসের ব্যাকআপ কিপার হিসেবে নুরুল হাসান সোহানের জায়গায় নেওয়া হয়েছে জাকের আলি অনিককে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করার পুরস্কার পেয়েছেন ২৫ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান। দলে ফেরানো হয়েছে বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামকেও।
কয়েকটি পরিবর্তন এলেও দলের লক্ষ্য যে অভিন্ন সিরিজ শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তা পরিষ্কার করেছেন প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে।
“আমরা একই প্রক্রিয়ায় খেলতে নামব। আমরা যদি প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারি, আমার মতে আমরা খুব ভালো দল। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আমরা এটিই চাইতে পারি এবং প্রতিনিয়ত এই প্রক্রিয়ায় উন্নতির চেষ্টা করছি আমরা।”
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের তুলনায় কাগজে-কলমে সহজ প্রতিপক্ষ আয়ারল্যান্ড। তাদের বিপক্ষে পরিসংখ্যানও সাক্ষ্য দেয় বাংলাদেশের হয়ে। দুই দলের আগের পাঁচ লড়াইয়ে স্বাগতিকদের জয় তিন ম্যাচে, পরিত্যক্ত হয়েছে সবশেষ ম্যাচ। আইরিশদের একমাত্র জয়, ২০০৯ বিশ্বকাপে।
তবু আয়ারল্যান্ড বা কোনো প্রতিপক্ষকেই হালকা করে নিতে নারাজ হাথুরুসিংহে। বরং নিজেদের সামর্থ্যের ওপর আস্থা রেখে সেরা ক্রিকেট খেলার বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রধান কোচের।
“কোনো ক্রিকেট ম্যাচই সহজ নয়। আমরা যদি এমনটা ভাবি, এটি আমাদেরই ক্ষতি করবে। আমাদের ক্যারিয়ারের শুরুতেই এই কথা শিখেছি। এই কারণেই আমরা খেলাটি ভালোবাসি। আমরা সব প্রতিপক্ষকে একইভাবে দেখি। তবে কাউকে ভয় পাই না। এটিই আমাদের মন্ত্র। আমরা সেরা স্কিল নিয়েই খেলতে নামি। তারা যদি আমাদের চেয়ে ভালো খেলে, তাদের জন্য টুপিখোলা সম্মান এবং তাদের থেকে আমরা শিখি।”
প্রতিপক্ষের প্রতি পূর্ণ সম্মান দেখিয়েছেন হাইনরিখ মালানও। তবে নিজস্ব ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারলে ফল পক্ষে আসবে বলে আশাবাদী আইরিশদের প্রধান কোচ। এর পেছনে তাদের প্রেরণা সবশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
অস্ট্রেলিয়ায় গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম পর্বে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে ওঠে আয়ারল্যান্ড। পরে সেখানে তারা হারিয়ে দেয় ইংল্যান্ডকে।
“(বাংলাদেশের বিপক্ষে) সিরিজটি দারুণ চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে, তাই নয় কি? কয়েক সপ্তাহ আগেই তারা এই সংস্করণে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেখিয়েছে। তবে আমরা এটি নিয়ে রোমাঞ্চিত। আমার মতে, আমরাও বিশ্বকাপে দেখিয়েছি যে এমন ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলতে পারি, যা দর্শকদের দেখার জন্য রোমাঞ্চকর।”
“সবসময় যত বেশি সম্ভব ম্যাচ জেতার চেষ্টাই করবেন আপনি। আমরাও সেই কথাই বলে আসছি। আমরা জানি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয়-পরাজয়ই সব কিছু। দেখুন সবসময়ই চাইব ৩-০তে জয়। তবে এটিই সব নয়। এখানে বিষয়টা হলো মাঠে নেমে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ক্রিকেটটা খেলা। আমরা যদি লম্বা সময় ধরে সেটি করতে পারি তাহলে ৩-০র বিষয়টি নিজ থেকেই হয়ে যাবে।”
মালানের আয়ারল্যান্ডের মতো সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশও খেলছে নিজস্ব ব্র্যান্ডের ক্রিকেট। দলের মানসিকতায় পরিবর্তন এনে মাঠে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার মন্ত্রে ক্রিকেটারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন হাথুরুসিংহে। যার ফলও পেয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে।
হাথুরুসিংহে পুনরায় দায়িত্ব নেওয়ার পর খেলা তিন সিরিজে দারুণ বোলিং করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডেতে সবকয়টি উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন তারা। ফিল্ডিংয়েও স্পষ্ট উন্নতির ছাপ। ব্যাটিংয়েও পরপর দুই ম্যাচে দেখা গেছে তিনশ ছাড়ানো ইনিংস।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও দলের পারফরম্যান্স ছিল দারুণ। তিন ম্যাচেই ফুটে ওঠে দলের ভয়ডরহীন মানসিকতা। তবে এটিকে নতুন কোনো যুগের সূচনা হিসেবে মানতে নারাজ হাথুরুসিংহে। বরং সামনের দিনগুলোতে আগ্রাসী ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলারই আশা তার।
“আমি এটিকে (বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অ্যাপ্রোচ) নতুন যুগ হিসেবে দেখছি না। সামনের দিকে যাওয়ার জন্য আমরা ঠিক এভাবেই খেলতে চেয়েছি। আমরা আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে চাই।”
“আগ্রাসী ক্রিকেট মানে এমন নয় যে আমরা গিয়েই যত দূরে সম্ভব মারব। আগ্রাসী বলতে সবকিছুতে... দল বাছাই, ফিল্ড সাজানো, শরীরী ভাষা, ফিল্ডিং, ব্যাটিং। ট্যাকটিক্যালি আমরা আগ্রাসী হবো। আমরা নিজেদের সেরাটাই খেলতে চাই। আমার মতে, যখন এমন আগ্রাসন ও স্বাধীনতা নিয়ে খেলে, এই দল সবসময় ভালো করে।”