কঠোর পরিশ্রম করে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান বন্যা বইয়ে দিয়ে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া সারফারাজ খানের গল্পে তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার রসদ দেখছেন দিনেশ কার্তিক।
Published : 15 Feb 2024, 07:31 PM
ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন, রান করেছেন ‘এ’ দলের হয়েও। তবু সুযোগ পাচ্ছিলেন না জাতীয় দলে। অনেক প্রতীক্ষার পর অবশেষে তিনি পেয়েছেন বহুল কাঙ্ক্ষিত টেস্ট ক্যাপ। বাহারি শটে অভিষেক ইনিংসে ছড়িয়েছেন মুগ্ধতা। সারফারাজের এই যাত্রা অন্যান্য তরুণদের অনুপ্রাণিত করবে মনে করছেন দিনেশ কার্তিক।
রাজকোটে সারফারাজের টেস্ট অভিষেকের মুহূর্তটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন কার্তিক। অনিল কুম্বলের হাত থেকে সারফারাজ টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার পর আরেক অভিষিক্ত ধ্রুব জুরেলকে ক্যাপ তুলে দেন ভারতের কিপার-ব্যাটসম্যান।
ওই আনুষ্ঠানিকতার পর্ব শেষ করে সারফারাজ ছুটে যান সীমানার কাছে। সেখানে অশ্রুসজল চোখে দাঁড়িয়ে তার বাবা নওশাদ খান। ছেলের টেস্ট ক্যাপ হাতে পেয়ে ক্রিকেট বোর্ডের লোগোতে চুমু খেয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন সারফারাজের বাবা।
সারফারাজের এই টেস্ট অভিষেকের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা ছিল নওশাদেরও। কোচ হিসেবে আগেই পরিচিতি থাকা ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব ছেলেকে তৈরি করেছেন নিজ হাতে। তাই তো টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার দিন আর নিজেকে সংবরণ করতে পারেননি তিনি।
নওশাদ ও তার ছেলের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো কাছ থেকে দেখার অনুভূতি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন কার্তিক, ‘শুধু ছবিগুলো দেখছি যে সারফারাজের পরিবারের কাছে এটি কতটা গুরুত্ববহ।’
সারফারাজের এই যাত্রা মোটেও সহজ ছিল না। টানা রান করেও বারবার পুড়তে হয়েছে অপেক্ষার আক্ষেপে। অভিষেকের আগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৪৫ ম্যাচে ৬৯.৮৫ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৯১২ রান। ১১ ফিফটির সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে ১৪টি।
বিশেষ করে ভারতের মর্যাদার রঞ্জি ট্রফিতে গত কয়েক বছর সারফারাজের পারফরম্যান্স চোখধাঁধানো! মুম্বাইয়ের হয়ে ২২ ম্যাচে করেছেন ১০ সেঞ্চুরি। এর একটিকে রূপ দিয়েছে ট্রিপল সেঞ্চুরিতে। আড়াই হাজারের বেশি রান তিনি করেছেন ১০২.৪৮ গড়ে।
তবু খুলছিল না টেস্ট দলের দুয়ার। ইংল্যান্ড লায়ন্সের বিপক্ষে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে পরে খেলেছেন ১৬১ রানের ইনিংস। এর সৌজন্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগে ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলে। সেটিও লোকেশ রাহুলের চোটের কারণে।
এরপর শুরু হয় নতুন অপেক্ষা। দ্বিতীয় টেস্ট বেঞ্চে বসে কাটাতে হয় তাকে। তৃতীয়টিতে সুযোগ পেয়ে প্রথম ইনিংসে ৬৬ বলে করেছেন ৬২ রান। রবীন্দ্র জাদেজার ভুলে রান আউটে থেমেছে তার ৯ চার ও ১ ছক্কার ইনিংস।
এতে অবশ্য এক বিন্দুতে মিলেছে প্রায় তিন যুগ আগের এক স্মৃতি। যার হাত থেকে টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন সারফারাজ, সেই কুম্বলেও ১৯৯০ সালে নিজের অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে হয়েছিলেন রান আউট।
ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে সারফারাজ রেখেছেন নিজের সামর্থ্যের ছাপ। ক্রিজের দারুণ ব্যবহার করে সামলেছেন ইংল্যান্ডের স্পিনারদের। পেস আক্রমণের বিপক্ষেও খেলেছেন পরম নির্ভরতায়।
দিনের পর দিন সুযোগের অপেক্ষায় থেকে রানের ফোয়ারা ছোটানো সারফারাজের সাফল্যে আনন্দিত কার্তিকও। সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করা বার্তায় সারফারাজের এই গল্পে অন্যান্য তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণার রসদ দেখছেন তিনি।
“দেশের হয়ে খেলার জন্য দিন রাত ঘাম ঝরাতে থাকা তরুণ ছেলে-মেয়েদের জন্যও এটি শিক্ষা। পরিশ্রম করতে থাকো, স্বপ্নের পেছনে ছুটে থাক। যখন (স্বপ্ন) সত্যি হবে, এর চেয়ে ভালো অনুভূতি আর হবে না।”
“এটি শুধু সারফারাজ, তার বাবা ও তার পরিবারের জয় নয়। খেলা হিসেবে ক্রিকেটের জয় এটি। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রতিভাবান তরুণরা এটি দেখে অনুপ্রাণিত হবে এবং ভারতের হয়ে খেলার জন্য আরও চেষ্টা করবে।”