বিধ্বংসী ব্যাটিং করেও খুব কাছে গিয়ে শতরানের ছোঁয়া পাননি জিসান আলম, পরে অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ম্যাচের নায়ক ফজলে মাহমুদ।
Published : 25 Apr 2024, 06:23 PM
তাইবুর রহমানের ফুল লেংথ ডেলিভারি সুইপ করার চেষ্টায় ব্যর্থ জিসান আলম। বল প্যাডে লাগতেই জোরাল আবেদনে আঙুল তুলে দিলেন আম্পায়ার। অল্পের জন্য তিন অঙ্ক ছুঁতে পারলেন না শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবের ওপেনার। তার বিদায়ের পর প্রত্যাশিত গন্তব্যে যেতে পারল না দলও। পরে ফজলে মাহমুদের দারুণ এক অপরাজিত সেঞ্চুরিতে অনায়াস জয়ই পেল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব।
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে বৃহস্পতিবার ৭ উইকেটে জিতেছে শেখ জামাল। টানা ছয় জয়ের পর এই পরাজয়ে শেষ হয়ে গেল শাইনপুকুরের শিরোপা জয়ের সামান্য সম্ভাবনাটুকুও।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সুপার লিগের ম্যাচটিতে জিসান ও তানজিদ হাসানের ঝড়ে উড়ন্ত সূচনা করে শাইনপুকুর। দুই ওপেনার ফেরার পর আকবর আলি ছাড়া কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। ফলে ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় তারা। রান তাড়ায় ২২ বল বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় শেখ জামাল।
১৩ ম্যাচে শেখ জামালের নবম জয় এটি। শিরোপা স্বপ্ন আগেই শেষ হওয়া দলটি জোরাল করল রানার্স আপ হওয়ার আশা। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হওয়ার দৌড়ে টিকে থাকল শাইনপুকুরও।
বাঁহাতি স্পিনে ৩৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শাইনপুকুরকে আটকে রাখতে ভূমিকা রাখেন তাইবুর রহমান। পরে চলতি লিগে প্রথম সেঞ্চুরিতে ১১৯ বলে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ফজলে মাহমুদ। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানই জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
ম্যাচের প্রথম ভাগে ৮টি করে চার-ছক্কায় স্রেফ ৬১ বলে ৯৮ রান করেন জিসান। কিন্তু অন্যদের তেমন সমর্থন না পাওয়ায় ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেও পরাজিত দলেই থাকতে হয় তাকে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় বলেই ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন জিসান। জিয়াউর রহমানের পরের বলে মারেন বাউন্ডারি। পরের ওভারে রিপন মন্ডলের বলে ওয়াইড লং অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান তিনি। রিপনের পরের ওভারে তার ব্যাট থেকে আসে আরও দুটি ছক্কা।
প্রথম চার ওভারে জিসানের তাণ্ডব দেখে তানজিদ হাত খোলেন পঞ্চম ওভারে। রবিউল ইসলামের বলে দুই ছক্কার পর চার মারেন বাঁহাতি ওপেনার। ওই ওভারেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় শাইনপুকুর।
এরপর একই ছন্দে এগোতে থাকেন দুজন। ২ চার ও ৬ ছক্কায় স্রেফ ২৯ বলে ফিফটি করেন জিসান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে একশ রান করে ফেলে শাইনপুকুর।
১২২ রানের উদ্বোধনী জুটি ত্রয়োদশ ওভারে ভাঙেন মেহেদি হাসান। এই লেগ স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ৪ চার ও ২ ছক্কায় ২৯ বলে ৩৯ রান করা তানজিদ।
তানজিদের বিদায়ের পর জিসানেরও বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। তাইবুরের বলে আম্পায়ারের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করতে করতে মাঠ ছাড়েন তরুণ ওপেনার।
এরপর আকবর ছাড়া কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া শাইনপুকুর অধিনায়ক ৪টি করে চার-ছক্কায় করেন ৮৪ বলে ৬৩ রান।
রান তাড়ায় ১১ রান করে ফেরেন শেখ জামালের ওপেনার সৈকত আলি। দ্বিতীয় উইকেটে চাপ সামাল দিয়ে দলকে এগিয়ে নেন সাইফ হাসান ও ফজলে মাহমুদ। ১২২ বলে ১১১ রানের জুটি গড়েন তারা দুজন।
৪৭ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ইনিংস বেশি বড় করতে পারেননি সাইফ। নাহিদ রানার বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৫ বলে ৬৭ রান করে।
এরপর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে ৪৫ রান যোগ করেন ফজলে মাহমুদ।
২৬ রান করে সোহান আউট হলে আর বিপদ ঘটতে দেননি ফজলে মাহমুদ ও ইয়াসির আলি চৌধুরি। ৭৬ বলে ৮৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় নিশ্চিত করেন তারা।
লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের একাদশ সেঞ্চুরির ইনিংসে ৬টি করে চার-ছক্কা মারেন ফজলে মাহমুদ। ইয়াসির অপরাজিত থাকেন ৫ চারে ৪২ বলে ৪০ রান করে।
আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ বোলিং করা নাহিদ রানা এ দিন ছিলেন খরুচে। ১ উইকেটের জন্য ৭ ওভারে তার খরচ ৬৭ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.১ ওভারে ২৬৪ (জিসান ৯৮, তানজিদ ৩৯, ইরফান ৯, মেহেরব ১৬, মার্শাল ৬৪, জাওয়াদ ৩, রিশাদ ১৯, মুরাদ ১, মুকিদুল ২, নাহিদ ১*; জিয়াউর ২.১-০-১৬-২, রিপন ৬-০-৩৭-০, রবিউল ৭-১-৪৬-২, আরিফ ১০-১-৪৭-০, সাইফ ১-০-১২-০, মেহেদি ৯-০-৫৬-২, তাইবুর ১০-২-৩৮-৩, ফজলে মাহমুদ ১-০-১২-০)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ৪৬.২ ওভারে ২৬৫/৩ (সাইফ ৬৭, সৈকত ১১, ফজলে মাহমুদ ১০১*, সোহান ২৬, ইয়াসির ৪০*; নাহিদ ৭-০-৬৭-১, মুরাদ ১০-০-৩১-১, জাওয়াদ ৯-০-৬৫-০, মুকিদুল ৫.২-০-৩৭-১, রিশাদ ৯-১-২৮-০, মেহেদব ৬-০-২৯-০)
ফল: শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফজলে মাহমুদ