প্রিমিয়ার লিগে জোড়া সেঞ্চুরির দিনে দেখা মিলেছে বেশ কয়েকটি ঝড়ো ফিফটির।
Published : 16 Mar 2023, 06:49 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দল পাল্টালেও, বদলায়নি এনামুল হকের ব্যাটের ধার। গত আসরে যেখানে শেষ করেছিলেন, এবার সেখান থেকেই যেন শুরু করেছেন এই ওপেনার। লিগে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে আবাহনীর হয়ে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন তিনি।
লিগের দ্বিতীয় দিন শতরানের দেখা পেয়েছেন ব্রাদার্সের মিজানুর রহমানও। ঝড়ো ফিফটি করেছেন আফিফ হোসেন, নাইম শেখ, রনি তালুকদার, আকবর আলিরা। জয় পেয়েছে আবাহনী, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্রাদার্সের বিপক্ষে ১২৪ রানে জিতেছে আবাহনী। ৩৭৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ২৪৮ রানে থামে মিজানুরের দল।
আগের আসরে তিন সেঞ্চুরিতে বিশ্ব রেকর্ড ১ হাজার ১৩৮ রান করা এনামুল এবার প্রথম ম্যাচে খেলেছেন ১১৮ বলে ১২৩ রানের ইনিংস। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি তার ষোড়শ সেঞ্চুরি। মোহর শেখ অন্তরের বলে লং অনে আনিসুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৬টি করে চার ও ছক্কা মারেন ৩০ বছর বয়সী ওপেনার।
এনামুলের আগে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগান আরেক ওপেনার নাইম। শুরু থেকেই দারুণ খেলতে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ১২ চার ও ১ ছয়ে ৭৪ বলে করেন ৮৫ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ১৫৭ রানের উদ্বোধনী জুটি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ পড়া আফিফ ব্যাটিং করেছেন অনেকটা টি-টোয়েন্টি মেজাজেই। চার নম্বরে নেমে ৫ চার ও ২ ছয়ে ৪৭ বলে উপহার দিয়েছেন ৬৫ রানের ইনিংস। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য রাতেই সিলেট যাওয়ার কথা তার।
শেষ দিকে প্রত্যাশিত ঝড় তোলেন অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন ও কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলি। ৬টি চার ও ১টি ছয়ে ২৭ বলে ৪৭ রান করেন মোসাদ্দেক। জাকের খেলেন ৩ ছয়ে ১১ বলে ২৬ রানের ক্যামিও ইনিংস।
ব্রাদার্সের বিপক্ষে ৭৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন সাব্বির হোসেন। মানিক খান ৯ ওভারে ৭১ রান খরচায় পান ২ উইকেট।
রান তাড়ায় কখনও সেভাবে জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি ব্রাদার্স। দলীয় পঞ্চাশের আগে তানজিদ হাসান (১৯ বলে 8) ও সাব্বির (৫ বলে ৫) ফিরে গেলে জুটি বাঁধেন মিজানুর ও মাইশুকুর রহমান।
১২২ রানের জুটি গড়তে ২৭.৩ ওভার নেন এই দুজন। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিতে ১১৬ বলে ১০২ রান করে আউট হন মিজানুর। মাইশুকুরের ব্যাট থেকে আসে ৯৯ বলে ৭৩ রান।
আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। ফলে আড়াইশও ছুঁতে পারেনি ব্রাদার্স।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আবাহনী: ৫০ ওভারে ৩৭২/৬ (এনামুল ১২৩, নাইম ৮৫, মাহমুদুল ৪, আফিফ ৬৫, মোসাদ্দেক ৪৬, অর্পিত ৬, জাকের ২৬, সাইফ উদ্দিন ৩; মোহর ১০-০-৮৫-১, মানিক ৯-০-৭১-২, সাকলাইন ৮-০-৩৮-০, সঞ্জিত ৬-০-৫০-০, রাহাতুল ৮-০-৪৯-০, সাব্বির ৯-০-৭৫-৩)
ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ৫০ ওভারে ২৪৮/৬ (মিজানুর ১০২, তানজিদ ৮, সাব্বির ৫, মাইশুকুর ৭৩, জাহিদুজ্জামান ১৫, নাদিফ ১৫, রাহাতুল ০, সঞ্জিত ১৬; সাইফ উদ্দিন ৮-০-৪৯-০, রিপন ৯-০-৬৩-২, তানভির ১০-১-২৭-২, আফিফ ২-০-১১-১, রকিবুল ১০-০-২৭-০, অর্পিত ৬-০-৩৪-১, মোসাদ্দেক ৫-০-৩৬-০)
ফল: আবাহনী লিমিটেড ১২৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এনামুল হক
মেহেরব-আকবরদের ঝড়ে উড়ে গেল মোহামেডান
ফতুল্লার খান সাহেব আলি ওসমান স্টেডিয়ামে আকবর, এসএম মেহেরব হাসান ও রবি তেজার ফিফটির সৌজন্যে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ১২৮ রানে জয় পেয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স।
৩৫০ রানের লক্ষ্যে ৬৪ বল বাকি থাকতে মোহামেডান গুটিয়ে গেছে ২২১ রানে।
জাতীয় দলের এক ঝাঁক তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে দল গড়েছে মোহামেডান। তবে আয়ারল্যান্ড সিরিজের দলে যোগ দেওয়ায় প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি তাদের কেউই।
বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্সের পর দীর্ঘ দিন পর জাতীয় দলে ফেরা রনি তালুকদার শুরুতে ঝড় তুলে জয়ের খানিক সম্ভাবনা জাগান। পরে ফিফটি করেন আয়ারল্যান্ড সিরিজ থেকে ‘বিশ্রাম’ পাওয়া মাহমুদউল্লাহ। তবু গাজী গ্রুপের ধারেকাছে যাওয়া হয়নি মোহামেডানের।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে ৬১ বলে ১২ চার ও এক ছক্কায় ৮০ রান করেন রনি। মাহমুদউল্লাহ ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৭ বলে ৫৮ রান করেন। আর কেউ ত্রিশও পেরোতে পারেননি।
আগের দিন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে আসা সৌম্য সরকার আউট হন ১৬ রান করে। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস আশা জাগানিয়া শুরুর পরও থামেন ২৯ রানে।
গাজী গ্রুপের পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন কাজী অনিক, হুসনা হাবিব মেহেদি ও এনামুল হক।
এর আগে দলটিকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন দুই ওপেনার মেহেদি মারুফ ও হাবিবুর রহমান। ৯ ওভারের মধ্যে দুজন ড্রেসিং রুমে ফিরলেও ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ৭৫ রান।
সবশেষ বিপিএলে খুলনা টাইগার্সের হয়ে ৩০ রানের ম্যাচ জেতানো ক্যামিও খেলা হাবিবুর ৬ চার ও ১ ছয়ে করেন ২২ বলে ৩৪ রান। মেহেদির ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান।
দারুণ শুরুর পর বাকি কাজ সারেন রবি তেজা, আকবর, মেহেরবরা। ভারতীয় রবি তেজা ৬৬ রান করতে খেলেন ৭৯ বল। তবে ঝড় তোলেন দুই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা দুই তরুণ।
আকবর ৫৪ বলে করেন ৫৯ রান। ৬ চার ও ১ ছয়। মেহেরব ৮ চার ও ১ ছয়ে ৪৩ বলে অপরাজিত থাকেন ৬২ রানে। শেষ দিকে মাহমুদুল হাসান খেলেন ১৩ বলে ২৭ রানের ইনিংস।
যুব বিশ্বকাপে ভালো ফল না করায় মেহেরবদের ওই দলের কেউই তেমন আলোয় আসতে পারেননি। তবে এবার লিগের প্রথম ম্যাচে দারুণ ব্যাটিংয়ে ম্যান অব দা ম্যাচ পুরস্কার জিতেছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স: ৫০ ওভারে ৩৪৯/৭ (মেহেদি ২৯, হাবিবুর ৩৪, ফরহাদ ৩৯, রবি তেজা ৬৬, আকবর ৫৯, মেহেরব ৬২, এনামুল ৩, কাজি অনিক ১, মাহমুদুল ২৭; রাহি ১০-০৬৪-২, খালেদ ১০-০-৭৫-৩, নাজমুল ১০-১-৬৯-০, সৌম্য ৬-০-৫৩-০, শুভাগত ৫-০-২৯-০, আরিফুল ৮-০-৩৯-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৯-০)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৩৯.২ ওভারে ২২১ (রনি ৮০, সৌম্য ১৬, ইমরুল ২৯, অনুশ্তাপ ১, মাহমুদউল্লাহ ৫৮, মাহিদুল ৬, শুভাগত ১৪, আরিফুল ১, নাজমুল ০, খালেদ ২*, রাহি ১১; কাজি অনিক ৭-০-৩৯-২, এনামুল ৯-১-৩১-২, হুসনা হাবিব ১০-০-৫৬-২, সুমন ৬-০-৪১-১, মাহমুদুল ২.২-০-২৬-১, রবি তেজা ৫-১-২৬-০)
ফল: গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ১২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এসএম মেহেরব হাসান
ফরহাদ রেজার অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শাইনপুকুরের জয়
বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাবকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। ২১৭ রানের লক্ষ্য ২২ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে তারা।
টস হেরে ব্যাট করতে নামা রূপগঞ্জ টাইগার্সের হয়ে ফিফটি করেন মুমিনুল হক ও নাইম ইসলাম। তবে দুজনের কেউই হাত খুলে খেলতে পারেননি।
মুমিনুল ৫ চারে ৬৫ রান করতে খেলেন ১০২ বল। ১০৫ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থাকেন নাইম। দলের আর কেউ বিশ রানও করতে পারেননি।
ফরহাদ রেজা ৪২ রানে নেন ২ উইকেট।
অন্য দুই মাঠের চেয়ে তুলনামূলক ছোট লক্ষ্য পেলেও খুব সহজে জয় পায়নি শাইনপুকুর। অভিষেক মিত্র (২০) ও খালিদ হাসান (৩৪) ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যর্থ হন অধিনায়ক অমিত হাসানও।
দলের শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান সঙ্গিত মালিন্দু কুরে তিন নম্বরে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে ফিফটি করেন। ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে খেলেন ৮২ বলে ৫৬ রানের ইনিংস।
এরপর শামসুর রহমান (১) ও সাজ্জাদুল হক (১) অল্পেই ফিরলে চাপে পড়ে শাইনপুকুর। তবে সপ্তম উইকেটে ৫৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলকে জেতান ফরহাদ ও আমিনুল ইসলাম।
৮০ বল খেলে ২ চারে ৫০ রান করেন আমিনুল। দারুণ বোলিংয়ের পর ৩৩ বলে ৩৬ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন ফরহাদ। তার হাতেই ওঠে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রুপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ২১৬/৬ (ইমতিয়াজ ১৯, ইমরানুজ্জামান ১১, মুমিনুল ৬৫, নাইম ৮৬, শামীম ৪, আমানদিপ ৬, আলাউদ্দিন ৬, সানজামুল ১৪; মেহেদি ১০-১-৪৩-০, ফরহাদ ৮-০-৪২-২, নাবিল ১০-১-৪৯-১, সঙ্গিত ১০-১-২৯-১, মুরাদ ১০-০-৩৩-১, খালিদ ২-০-১৮-০)
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ৪৬.২ ওভারে ২১৭/৬ (অভিষেক ২০, খালিদ ৩৪, সঙ্গিত ৫৬, অমিত ৯, শামসুর ১, আমিনুল ৫০, সাজ্জাদুল ১, ফরহাদ ৩৬; মুকিদুল ১০-০-৫০-৪, ইয়াসিন ৮-০-৫১-০, সানজামুল ১০-০-৪১-১, নাইম হাসান ১০-১-২৯-১, আলাউদ্দিন ৬-০-৩২-০, নাইম ইসলাম ২-০-৯-০, মুমিনুল ০.২-০-৪-০)
ফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফরহাদ রেজা