চূড়ায় থাকা রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলা নিশ্চিত করল শিরোপাধারীরা।
Published : 20 Feb 2024, 09:26 PM
ব্যর্থতা ঝেড়ে ঘুরে দাঁড়াতে স্রেফ এক ম্যাচ নিলেন আন্দ্রে রাসেল। উড়তে থাকা রংপুর রাইডার্সকে বিধ্বংসী ইনিংসে মাটিতে নামালেন ক্যারিবিয়ান তারকা। একইসঙ্গে সেরা দুইয়ে থাকা নিশ্চিত করল তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
আগের দিন সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ২০ বলে ৫১ রানের কঠিন সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন রাসেল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে লিটন কুমার দাস বলেছিলেন, ‘পরের ম্যাচই জেতাবেন রাসেল।’ ঠিক পরের ম্যাচেই অধিনায়কের কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দিলেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে রাসেল ঝড়ে ৬ উইকেটে জিতেছে কুমিল্লা। ১৫১ রানের লক্ষ্য ১৪ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলেছে বিপিএলের চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।
১১ ম্যাচে কুমিল্লার অষ্টম জয় এটি। এতে সেরা দুইয়ে থেকে প্রথম কোয়ালিফায়ার খেলা নিশ্চিত করেছে তারা। টানা আট ম্যাচ জেতার পর পরাজয়ে প্রথম পর্ব শেষ করেছে রংপুর। তবে ১২ ম্যাচে ৯ জয় নিয়ে এখনও টেবিলের শীর্ষেই অবস্থান করছে তারা।
আগামী রোববার টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ালিফায়ারে আবার মুখোমুখি হবে দুই দল। ওই ম্যাচের জয়ী দল পাবে ফাইনালের টিকেট। আর হেরে যাওয়া দলের সামনে থাকবে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলে ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ।
ম্যাচের শেষ দিকে ৩৩ বলে ৪৮ রানের সমীকরণে ক্রিজে যান রাসেল। এর মধ্যে তিনি একাই করেন ৪৩ রান, স্রেফ ১২ বলে। সমান ৪টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। এর আগে বল হাতেও ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন রাসেল।
ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় অবশ্য একশর আশপাশেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল রংপুর। সেখান থেকে নিশামের ফিফটিতে দেড়শ পর্যন্ত যায় তারা। ছয় নম্বরে নেমে অপরাজিত ইনিংসে ৪২ বলে ৬৯ রান করেন কিউই অলরাউন্ডার। ৯ চারের সঙ্গে ২টি ছক্কা মারেন তিনি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারায় রংপুর। দ্বিতীয় ওভারে ব্র্যান্ডন কিংকে ফেরান তানভির ইসলাম। পরের ওভারে ম্যাথু ফোর্ডের শিকার আরেক ওপেনার রনি তালুকদার।
ফোর্ডের পরের ওভারে কট বিহাইন্ড হন শেখ মেহেদি হাসান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নুরুল হাসান সোহানও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ।
নিশামকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। তবে তিনিও টিকতে পারেননি। নবম ওভারে তাকে ফেরান মুশফিক হাসান। ফুল লেংথ ডেলিভারি মিড অফে ক্যাচ দেন ১৯ বলে ২৪ রান করা সাকিব।
এরপর টম মুরস, শামীম হোসেন, আবু হায়দাররাও হতাশ করেন। সেখান থেকে দলকে একাই টানেন নিশাম। শেষ উইকেটে ইমরান তাহিরের সঙ্গে গড়েন ৪৩ রানের জুটি।
১৮তম ওভারে ফোর্ডের প্রথম বলে ছক্কা মারেন নিশাম। পরের দুই বলে মারা বাউন্ডারিতে স্রেফ ৩৩ বলে পঞ্চাশে পৌঁছে যান তিনি। পরের ওভারে মইন আলির বলে তিনি মারেন দুটি চার। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে তাহির আউট হলে অপরাজিত থেকে যান কিউই অলরাউন্ডার।
৪ ওভারে স্রেফ ১৮ রানে ৩ উইকেট নেন মুশফিক।
রান তাড়ায় সুনিল নারাইনকে নিয়ে ইনিংস শুরু করেন লিটন। আবু হায়দারের প্রথম ওভারে কুমিল্লা অধিনায়ক মারেন দুটি চার। পরের ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের বলে নারাইন মারেন তিনটি বাউন্ডারি।
পঞ্চম ওভারে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাকিব। শর্ট ডেলিভারিতে পুল করেন নারাইন। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ নেন শামীম। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছেন বুঝতে পেরে ফের বাতাসে ছুড়ে মারেন তিনি। পরে সীমানার ভেতরে ঢুকে দ্বিতীয়বারে সম্পন্ন করেন ক্যাচ।
এক বল পর ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন তাওহিদ হৃদয়। প্রথম দুই ওভারে ২৭ রান করা কুমিল্লা পাওয়ার প্লে শেষ করে ২ উইকেটে ৩৯ রানে।
তৃতীয় উইকেটে মাহিদুল ইসলামের সঙ্গে ৬৫ রানের জুটি গড়েন লিটন। এজন্য দুজন খেলেন ৫৫ বল। ফলে কিছুটা চাপে পড়ে কুমিল্লা। তবে শেষ দিকে তা একদমই বুঝতে দেননি রাসেল।
পাওয়ার প্লে শেষে প্রথম ওভারেই সাকিবের বলে ছক্কা ওড়ান লিটন। পরের ওভারে হাসান মাহমুদকে বাউন্ডারি মারেন মাহিদুল। এরপর রয়েসয়ে খেলতে থাকেন তারা। বাড়তে থাকে রান রেটের চাপ।
দ্বাদশ ওভারে গা ঝারা দেন দুজন। মেহেদির বলে লিটনের চারের পর মাহিদুল মারেন ছক্কা। হাসানের পরের ওভারে পরপর তিনটি চার মারেন মাহিদুল।
নিজের শেষ ওভারে জুটি ভাঙেন সাকিব। ক্রিজ ছেড়ে মারার চেষ্টায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সহজ ক্যাচ তুলে দেন লিটন। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ রান করতে ৪২ বল খেলেন কুমিল্লা অধিনায়ক। পরের ওভারে আবু হায়দারের শিকার মাহিদুল। অধিনায়কের মতোই ৪ চার ও ১ ছক্কায় তিনি ২৯ বলে করেন ৩৯ রান।
এরপর পুরোটাই রাসেল ‘শো।’ তৃতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন তিনি। পরের ওভারে তাহিরের নিচু ফুল টসে মারেন নিজের প্রথম ছক্কা।
১৭তম ওভারে হাসানের ওপর টর্নেডো বইয়ে দেন রাসেল। দ্বিতীয় বলে স্ট্রাইক পেয়ে তিন চারের সঙ্গে দুই ছক্কায় তিনি নেন ২৪ রান। ম্যাচ চলে আসে কুমিল্লার হাতের মুঠোয়।
পরে মেহেদির বলে লং অফ দিয়ে ছক্কা মেরে রাসেলই নিশ্চিত করেন কুমিল্লার জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ১৯.৫ ওভারে ১৫০ (কিং ৪, রনি ১৪, সাকিব ২৪, মেহেদি ৮, সোহান ২, নিশাম ৬৯*, মুরস ৮, শামীম ২, আবু হায়দার ৭, হাসান ১, তাহির ৫; ফোর্ড ৪-০-৩২-২, তানভির ১-০-১২-১, নারাইন ৪-০-২৬-০, রাসেল ২.৫-০-২০-৩, মইন ৪-০-৪০-০, মুশফিক ৪-০-১৮-৩)
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৭.৪ ওভারে ১৫১/৪ (লিটন ৪৩, নারাইন ১৫, হৃদয় ০, মাহিদুল ৩৯, মইন ৬*, রাসেল ৪৩*; আবু হায়দার ২.৫-০-২০-১, মেহেদি ৩.৩-০-৩৬-০, সাকিব ৪-০-২০-৩, তাহির ৪-০-২০-০, হাসান ৩-০-৫১-০, শামীম ০.১-০-৪-০)
ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: আন্দ্রে রাসেল