এই বয়সে এমন ম্যাচ চান না পন্টিং

আইপিলে ১১১ রানের পুঁজি নিয়েও অবিশ্বাস্য জয়ের পর পাঞ্জাবের কোচ রিকি পন্টিং বললেন, “হৃৎস্পন্দন এখনও অনেক বেশি… সম্ভবত দুইশর ওপরে!”

ম্যাচ শেষে কোচ পন্টিংকে আলিঙ্গনে জড়ালেন পাঞ্জাবের স্বত্বাধিকারীদের একজন প্রিতি জিন্তা। ছবি: আইপিএল।

একটি ম্যাচ জয়। আইপিএলের স্রেফ প্রাথমিক পর্বের একটি ম্যাচ জয়। কিন্তু রিকি পন্টিংকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছেন! সেই স্বাদ অবশ্য তিনি বহু আগেই পেয়েছেন। দুটি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, লম্বা সময় র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকাসহ বিশ্ব ক্রিকেটে রাজত্ব করেছ তার দল। আইপিএলে কোচ হিসেবে শিরোপার স্বাদও পেয়েছেন। তার পরও পাঞ্জাব কিংসের এই জয়ে যেন সব পাওয়ার আনন্দ করে ফেললেন তিনি। জয়টাই যে এমন!

আগের ম্যাচে ২৪৫ রান তুলেও জিততে পারেনি যে দল, সেই দল পরের ম্যাচে ১১১ রানের পুঁজি নিয়েও ১৬ রানে জিতে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে!

আন্দ্রে রাসেলের বিদায়ে ম্যাচ শেষ হতেই ডাগআউটে লাফিয়ে উঠলেন পন্টিং। কোচিং স্টাফের অন্যরা ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে মেতে উঠলেন খ্যাপাটে উল্লাসে। গোটা দল নিয়ে গ্যালারির কাছে দর্শকদের নাগালে গিয়েও মেতে উঠলেন উদযাপনে। সেই উদযাপন চলতে থাকল লম্বা সময় ধরে।

এসবের ফাঁকে মাইক্রোফোন হাতে দাঁড়ালেন টিভি ক্যামেরার সামনেও। খেলোয়াড়ি আর কোচিং ক্যারিয়ারে অসংখ্য রোমাঞ্চকর ম্যাচের স্বাক্ষী হওয়া অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি এমন ম্যাচ জিতে যেন উত্তেজনা সইতে পারছিলেন না।

“হৃৎস্পন্দন এখনও অনেক বেশি… সম্ভবত দুইশর ওপরে! এই পঞ্চাশের বেশি বয়সে এই ধরনের ম্যাচ আমার খুব বেশি প্রয়োজন নেই…!”

“আরেকবার ফুটে উঠল, খেলাটি কতটা মজার! তিন দিন আগে ২৪৫ রান করে জিততে পারিনি আমরা, আজকে ১১১ রান নিয়েও ১৬ রানে জিতে গেলাম।”

উইকেট বা প্রেক্ষাপট যেমনই হোক, ১১১ রানের পুঁজি নিয়ে জেতা কঠিন। তবে উইকেটের আচরণের কারণে কিছু আশা ছিল পন্টিংদের। দলকে সেভাবেই উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন কোচ।

“সত্যি বলতে, মাঝবিররিতে ছেলেদেরকে বলেছিলাম, এই ধরনের ছোট রান তাড়া কখনও কখনও সবচেয়ে কঠিন কাজ হয়ে ওঠে। উইকেট খুব সহজ ছিল না। ম্যাচজুড়েই দেখেছেন, বল একটু থেমে আসছিল।”

“(মাঝবিরতিতে) বলেছিলাম, এই ধরনের জয় সবচেয়ে মধুর অনুভূতিগুলোর একটি। বলেছিলাম, যদি আমরা জিততে পারি, সম্ভবত সবার জীবনর সবচেয়ে সেরা জয়গুলোর মধ্যে থাকবে। সেটিই হয়েছে। আইপিএলে অনেক ম্যাচে কোচিং করিয়েছি আমি। তবে এটাই আমার সবচেয়ে সেরা জয়।”

১১২ রান তাড়ায় এক পর্যায়ে কলকাতার রান ছিল ২ উইকেটে ৬২। এরপর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ইউজভেন্দ্রা চেহেল। আজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙার পর দ্রুত আরও তিনটি উইকেট নেন অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার।

এই ম্যাচের আগে চেহেল আলোচনায় ছিলেন ফর্মহীনতার কারণে। ১৮ কোটি রুপিতে এবার তাকে দলে নিয়েছে পাঞ্জাব, আইপিএলে যা স্পিনারদের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের রেকর্ড। অথচ মৌসুমের প্রথম পাঁচ ম্যাচে তার শিকার ছিল স্রেফ দুই উইকেট। আগের ম্যাচে চার ওভারে রান গুনেছিলেন ৫৬। অবশেষে ছন্দ পেয়ে চার উইকেট নিয়ে দলকে জেতালেন আইপিএল ইতিহাসের সফলতম বোলার।

ম্যাচের পর পন্টিং জানালেন, এই ম্যাচে চেহেলের খেলা নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা।

“চেহেল আজকে কতই না ভালো ছিল! কী দারুণ এক স্পেল সে উপহার দিল! এই সপ্তাহে আমরা তার ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলাম। গত ম্যাচে কাঁধে চোট পাওয়ার পর এই ম্যাচের আগে তার ফিটনেস পরীক্ষা হয়েছিল। গা গরমের সময় তাকে ধরে চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘তুমি কি ঠিক আছো?’ সে বলল, ‘কোচ, শতভাগ ঠিক আছে। মাঠে নামিয়ে দিন।’ এরপর কী দুর্দান্ত বোলিং করল!”

আইপিএল ইতিহাসে ২০০ উইকেট শিকারি একমাত্র বোলারের শিকার এখন ২১১টি। ১৯২ উইকেট নিয়ে দুইয়ে আরেক লেগ স্পিনার পিয়ুশ চাওলা। ১৮৭ উইকেট সুনিল নারাইনের।