প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর শেখ মেহেদির দুর্দান্ত বোলিং, দুই পরাজয়ে আসর শুরু করা রংপুর রাইডার্স ফাইনালে উঠে গেল টানা দুই জয়ে।
Published : 06 Dec 2024, 09:43 AM
ম্যাচের শেষ বলটি হতেই গর্জন শোনা গেল মাঠ থেকে। কে করলেন কে জানে, মাঠে তখন উল্লাসে মাতোয়ারা রংপুরের সবাই। ড্রেসিং রুমের ব্যালকনিতেও উচ্ছ্বাসের জোয়ার টিম ম্যানেজমেন্ট ও দলের অন্যদের। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে তলানিতে ছিল যে দল, টুর্নামেন্ট থেকে যাদের বিদায় মনে হচ্ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার, সেই দলই উঠে গেল গ্লোবাল সুপার লিগের ফাইনালে!
গায়ানায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে লাহোর কালান্দার্সকে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন (ডিএলএস) পদ্ধতিতে ২৩ রানে হারিয়ে গ্লোবাল সুপার লিগের প্রথম আসরের ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলাদেশের প্রতিনিধি রংপুর রাইডার্স।
ম্যাচটি কার্যত রূপ নিয়েছিল সেমি-ফাইনালে। লাহোর কালান্দার্সের জন্য সমীকরণ ছিল সোজা-জিতলেই ফাইনাল। রংপুর রাইডার্সের জন্য জয়ের পাশাপাশি রান রেটের সামান্য সমীকরণ ছিল। তবে ব্যাটে-বলে দারুণ খেলে ছোট ম্যাচে বড় জয়ে ফাইনালে উঠে গেছে নুরুল হাসান সোহানের দল।
প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকালে শেষ হওয়া ম্যাচে রংপুর ৯ ওভারে তোলে ৮৫ রান তোলার পর বৃষ্টির কারণে আর ব্যাটিং করতে পারেনি। ঝড়ো ব্যাটিং উপহার দেন ক্রিজে যাওয়া তিন ব্যাটসম্যান স্টিভেন টেইলর, সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান।
রংপুর স্রেফ একটি উইকেট হারানোয় ডিএলএস পদ্ধতিতে লাহোরের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় অনেক বড়, ৯ ওভারে ১১১। শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম ওভারেই বড় ধাক্কা খায় তারা তিন উইকেট হারিয়ে। পরে চেষ্টা করেও তারা যেতে পারে কেবল ৮৭ রান পর্যন্ত।
গায়ানায় এখন বৃষ্টির মৌসুম হলেও টুর্নামেন্টের আগের কোনো ম্যাচে বাধা আসেনি। এই ম্যাচেই বৃষ্টি হানা দেয় বারবার। ম্যাচ শুরু হতে দেরি হয় অনেকটা।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরে উড়ন্ত শুরু এনে দেন স্টিভেন টেইলর ও সৌম্য সরকার। সালমান মির্জার করা প্রথম ওভারেই দুটি চার একটি ছক্কা মারেন টেইলর। পরের দুই ওভারে আসে দুটি করে চার। চতুর্থ ওভারে ফাহিম আশরাফকে দারুণ শটে ছক্কায় উড়িয়ে দেন সৌম্য।
চার ওভারে রান যখন ৪৬, আবার বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। ম্যাচ নেমে আসে ১৬ ওভারে।
বৃষ্টির পর খেলা শুরু হতেই দ্বিতীয় বলে বিদায় নেন সৌম্য। ১৩ বলে ২২ রান করে তিনি বোল্ড হন বাঁহাতি পেসার সালমান মির্জার বলের লাইন মিস করে।
তবে রংপুরের ঝড় থামেনি। সাইফ হাসান ক্রিজে গিয়েই দুটি চার মারেন। ৫ ওভারে রংপুর তোলে ৫৮ রান।
পরের ওভারটিতে টেইলরকে আটকে রেখে মেইডেন নেন তাব্রেইজ শামসি। তবে সাইফ ছুটতে থাকেন। শামসির পরের ওভারে ছক্কা মারেন তিনি, আফিস আফ্রিদির ওভারে মারেন দুটি ছক্কা।
এরপরই বৃষ্টিতে আবার বন্ধ হয় খেলা। রংপুরের ব্যাটিং আর শুরু হতে পারেনি। টেইলর অপরাজিত ছিলেন ২৭ বলে ৩২ রান করে, ১৪ বলে ২৭ রানে সাইফ।
ম্যাচের আগে রংপুরের জন্য বড় ধাক্কা ছিল খুশদিল শাহর দেশে ফিরে যাওয়া। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের অভাব অনুভূত হয়নি তাদের।
লাহোরের লক্ষ্য ছিল ৯ ওভারে ১১১, তবে রংপুরে ফাইনালে উঠতে হলে জিততে হতো চার বা এর বেশি রানে। সেই পথে রংপুরকে প্রথম ওভারেই অনেকটা এগিয়ে দেন শেখ মেহেদি।
প্রথম ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে সোজা ব্যাটে ড্রাইভ করেন রংপুরের ইংলিশ ব্যাটসম্যান লুক ওয়েলস। বোলিং প্রান্তে শেখ মেহেদির হাতে লেগে বল ছোবল দেয় স্টাম্প। রংপুরের আরেক ইংলিশ ওপেনার অ্যাডাম রসিংটন তখন ক্রিজের বাইরে।
পরের বলে বিদায় নেন ওয়েলসও। উইকেটের পেছনে দারুণ ক্ষিপ্রতায় স্টাম্পিং করেন সোহান। নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মাদ ফাইজান ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই সুইপ খেলার চেষ্টা করেন। বল তার শরীরে লেগে আঘাত করে স্টাম্পে। দলীয় হ্যাটট্রিক!
পরের বলটি মির্জা তাহির বেগ ঠেকিয়ে দেওয়ায় শেখ মেহেদির হ্যাটট্রিক হয়নি।
হারমিত সিংয়ের বলে ছক্কা ও চার মেরে হাত খোলার চেষ্টা করেন মোহাম্মদ আখলাক। কিন্তু পরের ওভারেই তাকে বিদায় করেন শেখ মেহেদি।
তিন ওভারে চার উইকেট হারিয়ে সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে যায় লাহোরের। কিছুটা চেষ্টা তারা করে গেছেন পরে। রিশাদ হোসেনের এক ওভারে চারটি চার মারেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান টম অ্যাবেল। আরেকপ্রান্তে কামরুল ইসলাম রাব্বিকে ছক্কা মারেন মির্জা।
তবে রান-বলের কঠিন সমীকরণ মেলাতে পারেননি তারা। ১২ বলে ২৫ রান করা অ্যাবেলকে থামান তার স্বদেশী জ্যাক চ্যাপেল। ২০ বলে ৩১ রান করা মির্জাকে ফিরিয়ে শোধ তোলেন কামরুল। শেষ পর্যন্ত বড় জয়ই পায় রংপুর।
ফাইনালের রংপুরের প্রতিপক্ষ ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া। প্রাথমিক পর্বে দুই দলের লড়াইয়ে ১০ রানে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়ার দলটি।
শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টায় শুরু ফাইনাল ম্যাচ। রংপুরকে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে তাই টানা তিন দিন।
প্রাথমিক পর্বের দুই ম্যাচ জিতে ৫০ হাজার ডলার প্রাইজমানি জিতেছে রংপুর। টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দলের প্রাইজমানি ৫ লাখ ডলার, রানার্স আপ দলের আড়াই লাখ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রংপুর রাইডার্স: ৯ ওভারে ৮৫/১ (টেইলর ৩২*, সৌম্য ২২, সাইফ ২৭*; সালমান ২-০-২৬-১, ফাহিম ২-০-২২-০, আফ্রিদি ২-০-১৯-০, শামসি ২-১-১০-০, ওয়েলস ১-০-৭-০)
লাহোর কালান্দার্স: (লক্ষ্য ৯ ওভারে ১১১) ৯ ওভারে ৮৭/৭ (ওয়েলস ০, রসিংটন ১, আখলাক ১১, ফাইজান ০, মির্জা ৩১, অ্যাবেল ২৫, ফাহিম ১৮*, ব্র্যাথওয়েট ০, আফ্রিদি ১*; শেখ মেহেদি ২-০-১১-৩, হারমিত ২-০-২০-০, রিশাদ , কামরুল ২-০-২২-১, চ্যাপেল ২-০-১৭-২)
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে রংপুর রাইডার্স ২৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: স্টিভেন টেইলর