পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজ
সাজিদ খানের ৭ উইকেটের পর সালমান আলি আগার ফিফটিতে ইংল্যান্ডকে তিনশর কাছাকাছি লক্ষ্য দিয়ে দ্রুত ২ উইকেট তুলে নিয়েছে পাকিস্তান।
Published : 17 Oct 2024, 07:13 PM
তিন বলের মধ্যে দুবার জীবন পেলেন সালমান আলি আগা। পাকিস্তানের লিড তখনও দুইশ স্পর্শ করেনি। পরে তারা যোগ করল আরও প্রায় একশ রান। ব্যাট হাতে ছোট্ট, কিন্তু মূল্যবান ইনিংস খেলার আগে-পরে মূল কাজ বোলিংয়ে আলো ছড়ালেন সাজিদ খান। মুলতানে দারুণ একটি দিন কাটিয়ে ম্যাচে চালকের আসনে এখন পাকিস্তান।
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ২৯৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় দিন শেষ ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩৬ রান। ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরাতে বাকি দুই দিনে পাকিস্তানের চাই আর ৮ উইকেট, ইংল্যান্ডের প্রয়োজন এখনও ২৬১ রান।
দুই দল মিলিয়ে পতন হয়েছে এদিন ১৬ উইকেট। পাকিস্তানে কোনো টেস্টে এক দিনে এর চেয়ে বেশি উইকেট পড়েছে কেবল একবারই, ২০০৩ সালে মুলতানেই পাকিস্তান-বাংলাদেশ টেস্টের দ্বিতীয় দিন পড়েছিল ১৮ উইকেট। ১৯৯৭ সালে করাচিতে পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্টের তৃতীয় দিন পড়েছিল ১৬ উইকেট।
উইকেট থেকে স্পিনাররা সহায়তা পাচ্ছেন যেভাবে, অফ স্পিনার সাজিদ ও বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলি যেভাবে বোলিং করছেন, ইংলিশদের জন্য কাজটা হবে ভীষণ কঠিন।
পাকিস্তানের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে ২২০ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি সফরকারী কোনো দল।
এদিন প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ২৯১ রানে থামিয়ে ৭৫ রানের লিড নেয় পাকিস্তান।
আগের দিন ৪ উইকেট নেওয়া সাজিদ বৃহস্পতিবার প্রথম ইনিংসে ধরেন আরও ৩ শিকার। ১১১ রানে তার প্রাপ্তি ৭টি।
মুলতানে টেস্ট ইনিংসে কোনো বোলারের সেরা বোলিং এটি। ২০২২ সালে এখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ১১৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ।
২০০০ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাকলাইন মুশতাকের পর এই প্রথম ঘরের মাঠে টেস্ট ইনিংসে পাঁচ বা এর বেশি উইকেট পেলেন পাকিস্তানের কোনো অফ স্পিনার।
পরে দ্বিতীয় ইনিংসে সালমানের ফিফটিতে ২২১ রান করে ইংল্যান্ডকে তিনশর কাছাকাছি লক্ষ্য ছুড়ে দেয় পাকিস্তান।
৪ ও ৬ রানে জীবন পেয়ে ৮৯ বলে ৬৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন সালমান। নবম উইকেটে তার সঙ্গে ৬৫ রানের জুটি গড়ে মূল্যবান ২২ রান করেন সাজিদ।
আগের দিন শেষ ঘন্টায় ১৮ বলের মধ্যে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড তৃতীয় দিন শুরু করে ৬ উইকেটে ২৩৯ রান নিয়ে।
দিনের পঞ্চম ওভারে ব্রাইডন কার্সকে ফিরিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন সাজিদ। নিজের পরের ওভারে তিনি বোল্ড করে দেন ম্যাথু পটসকে। পরের ওভারে নোমানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন জেমি স্মিথ (৫৫ বলে ২১)।
দশম উইকেটে দুই স্পিনার জ্যাক লিচ ও শোয়েব বাশিরের ২৯ রানের জুটিতে তিনশর কাছাকাছি যেতে পারে ইংল্যান্ড। বাশিরকে ফিরিয়ে ইনিংসের ইতি টেনে দেন সাজিদ। লিচ অপরাজিত রয়ে যান ২৫ রানে।
সাজিদের ৭টি ছাড়া বাকি ৩ উইকেট নেন নোমান।
৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইনিংসে পাঁচ বা এর বেশি উইকেট নিলেন ৩১ বছর বয়সী সাজিদ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে মিরপুরে ৪২ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে পঞ্চম ওভারে আবদুল্লাহ শাফিককে হারায় পাকিস্তান। অফ স্পিনার বাশিরের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন তিনি। ইংল্যান্ড উইকেটটি পায় রিভিউ নিয়ে।
অধিনায়ক শান মাসুদও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বাশিরের বলেই দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি। লাঞ্চ-বিরতির আগে সাইম আইয়ুবকে ফিরিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন বাশির।
অভিষেকে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা কামরান গুলাম এবার থামেন ২৬ রানে। তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন বাঁহাতি স্পিনার লিচ। ৭৭ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি মোহাম্মদ রিজওয়ান (৪৩ বলে ২৩) ও সাউদ শাকিলও (৫১ বলে ৩১)। কার্সের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন রিজওয়ান, লিচের বলে এলবিডব্লিউ হন শাকিল।
এর মাঝেই দুই দফায় জীবন পান সালমান। কার্সের ওই ওভারে প্রথমে তার ক্যাচ ফেলেন কিপার স্মিথ, এক বল পর স্লিপে বল মুঠোয় জমাতে ব্যর্থ হন রুট।
এক প্রান্তে যদিও পাকিস্তান উইকেট হারাতে থাকে নিয়মিত। আমের জামাল ও নোমান বিদায় নেন দ্রুত। দলের স্কোর তখন ৮ উইকেটে ১৫৬।
সেখান থেকেই সাজিদের সঙ্গে ৭৩ বলে ৬৫ রানের ওই জুটিতে দলের লিড বাড়ান সালমান। লিচকে ছক্কায় উড়িয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৭৬ বলে।
অবশেষে তার ৫ চার ও এক ছক্কায় গড়া ৬৩ রানের ইনিংস থামে কার্সের শর্ট বলে ক্যাচ দিয়ে। পরের ওভারে সাজিদকে ফিরিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেন ম্যাথু পটস।
৬৬ রানে ৪ উইকেট নেন বাশির, ৬৭ রানে ৩টি লিচ।
পরে ফের বল হাতে নিয়ে ইনিংসের তৃতীয় বলে বেন ডাকেটকে ফিরিয়ে দেন সাজিদ। সুইপ করার চেষ্টায় বল আকাশে তোলেন বাঁহাতি ওপেনার। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর এবার তিনি ফেরেন শূন্য রানে।
চতুর্থ ওভারে আরেক ওপেনার জ্যাক ক্রলিকে বোল্ড করে দেন নোমান। ১১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দিনের বাকিটা কাটিয়ে দেন অলিভার পোপ ও জো রুট। চতুর্থ দিনে তাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৬৬
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৭.২ ওভারে ২৯১ (আগের দিন ২৩৯/৬) (স্মিথ ২১, কার্স ৪, পটস ৬, লিচ ২৫*, বাশির ৯; জামাল ৬-০-৩৯-০, সাজিদ ২৬.২-১-১১১-৭, নোমান ২৮-৫-১০১-৩, জাহিদ ৬-০-২৭-০, সালমান ১-০-৫-০)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৫৯.২ ওভারে ২২১ (শাফিক ৪, সাইম ২২, মাসুদ ১১, কামরান ২৬, শাকিল ৩১, রিজওয়ান ২৩, সালমান ৬৩, জামাল ১, নোমান ১, সাজিদ ২২, জাহিদ ০*; লিচ ১৭-৩-১৬৭-৩, বাশির ১৯-১-৬৬-৪, রুট ৪-০-১৩-০, কার্স ৯-১-২৯-২, পটস ৫.২-০-১৯-১, স্টোকস ৫-১-১৩-০)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৯৭) ১১ ওভারে ৩৬/২ (ক্রলি ৩, ডাকেট ০, পোপ ২১*, রুট ১২*; সাজিদ ৬-০-২৭-১, নোমান ৫-০-৯-১)