মারুফা হ্যাটট্রিক করলেও অবশ্য হেরে গেছে তার দল, ১০ ওভারে ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দলকে জিতিয়েছেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান।
Published : 26 May 2024, 05:28 PM
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন উইমেন’স ক্রিকেট লিগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন মারুফা আক্তার। দেশ সেরা পেসারের এমন কীর্তির পরও অবশ্য মোহামেডানের বিপক্ষে জিততে পারেনি তার দল বিকেএসপি। তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ের ধারবাহিকতায় রূপালী ব্যাংককে আরেকটি জয় এনে দেন লেগ স্পিনার রাবেয়া খান। দিনের অন্য ম্যাচে জয়ের দেখা পায় আবাহনী লিমিটেড।
মারুফার হ্যাটট্রিক এবং হার
হ্যাটট্রিক করে ম্যাচের প্রথম ভাগে হাসি মুখে মাঠ ছাড়লেন মারুফা আক্তার। কিন্তু দিন শেষে জয়ের হাসির দেখা তিনি পেলেন না। তার দল বিকেএসপি ৭২ রানে হেরে গেল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে।
মারুফা হ্যাটট্রিক করেন মোহামেডানের ইনিংসের শেষ ওভারে। তবে বিকেএসপি চার নম্বর মাঠে ম্যাচের শুরুতেও প্রতিপক্ষকে বড় এক ধাক্কা তিনি দেন। এই লিগে বোলারদের আতঙ্ক মোহামেডানের ভারতীয় ওপেনার জেসিয়া আখতারকে তিনি বিদায় করে দেন শূন্য রানেই। ৮ বল খেলে এ দিন রান করতে পারেননি আগ্রাসী এই ওপেনার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে ৯৭ রানের জুটি গড়েন মুর্শিদা খাতুন ও সোবহানা মোস্তারি। ফিফটি থেকে চার রান দূরে মুর্শিদা আউট হয়ে গেলেও তিন ছক্কায় ৬৪ রান করেন সোবহানা।
পরে দুই অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ ও আয়েশা রহমানের ব্যাটে দুইশ ছাড়ায় মোহামেডান। ৬১ বলে ৩৫ রান করেন রুমানা, ৩৯ বলে ৩২ আয়েশা।
শেষ ওভারে মোহামেডান উইকেট হারায় চারটি। প্রথম বলে রান আউট হন শম্পা। পরে টানা তিন বলে সাবেকুন নাহার, সুলতানা ইয়াসমিস বৈশাখি ও ফারিহা তৃষ্ণাকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক করেন মারুফা।
মোহামেডান তোলে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২৮ রান।
১০ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে চার উইকেট নেন রাবেয়া। দুটি উইকেট নিতে পারেন নিশিতা আক্তার, একটি করে ফারজানা ইয়াসমিন ও সুবর্না কর্মকার।
রান তাড়ায় বিকেএসপি শুরুতে লড়াই খারাপ করেনি। এক পর্যায়ে দুই উইকেট হারিয়ে ১০০ ছুঁয়ে ফেলে তারা। কিন্ত ওপেনার ফাহমিদা ছোঁয়া ৩৯ রান করে তৃষ্ণার বলে বোল্ড হওয়ার পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে দলের ইনিংস। ১৮ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে তারা লড়াই থেকে ছিটকে পরে।
অধিনায়ক সুমাইয়া আক্তারের ব্যাট থেকে আসে ৩০ রান।
২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মোহামেডানের সফলতম বোলার তৃষ্ণা। দুটি করে নেন সাবেকুন নাহার, ফাতেমা জাহান সোনিয়া ও রুমানা আহমেদ। অভিজ্ঞ সালমা খাতুনকে দেখা যায়নি একাদশে।
দুর্দান্ত রাবেয়া
১০ ওভারের ছয়টিই মেডেন। ১৩ রানে শিকার চার উইকেট। গুলশার ইয়ুথ ক্লাবের ব্যাটিংয়ের মেরুদন্ডই ভেঙে দেন রাবেয়া খান। তার দারুণ বোলিংয়ে গড়ে ওঠা ভিত রূপালী ব্যাংক ক্রীড়া পরিষদকে এনে দেয় ৬ উইকেটের জয়।
বিকেএসপি এক নম্বর মাঠে গুলশান ইয়ুথের প্রথম ছয় ম্যাচের চারজনকেই বিদায় করেন রাবেয়া। তাদের মধ্যে দুঅঙ্ক ছুতে পারেন কেবল জুয়াইরিয়া ফেরদৌস (২৬)।
৫১ রানে ৫ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন সুরাইয়া আজমিন। সাতে নেমে ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ১১৫ রানে গুটিয়ে যায় গুলশান ইয়ুথ।
রাবেয়ার মতো ১০ ওভারে কেবল ১৩ রান দেন মুক্তা রাভিন্দ্রা মাগরে। ভারতীয় পেসারের উইকেট দুটি।
জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা, লাকি খাতুন ও লতা মণ্ডল নেন একটি করে উইকেট।
রূপালি ব্যাংকের রান তাড়া খুব মসৃণ হয়নি। ৬২ রানে ৪ উইকেট হারায় তারা। এর মধ্যে অধিনায়ক নিগার সুলতানাও ফেরেন ১৬ রান করে। তবে দুই অভিজ্ঞ ফারজানা হক ও লতা মণ্ডল আর কোনো বিপদ হতে দেননি।
৬৩ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থাকে ফারজানা, ৪০ বলে ৩২ রানে লতা।
আবাহনীর বড় জয়
ব্যাটে-বলে সম্মিলিত পারফরম্যান্সে বিকেএসপি তিন নম্বর মাঠে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রকে ৭৮ রানে হারায় আবাহনী লিমিটেড।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা আবাহনী ৫০ ওভারে তোলে ৫ উইকেটে ২৭৭ রান। খুব বড় ইনিংস খেলতে পারেননি দলের কেউ। তবে শারমিন সুলতানা ও রুবাইয়া হায়দার ঝিলিকের ফিফটির সঙ্গে অন্যদের কার্যকর অবদানে বড় স্কোর গড়ে তারা।
২৬ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে আবাহনীকে দ্রুতগতির শুরু এনে দেন দিলারা দোলা। দ্বিতীয় উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়েন শারমিন ও ঝিলিক। ১০২ বলে ৬৮ করেন শারমিন, ৮১ বলে ৬৬ ঝিলিক।
পরে আফিয়া আসিমা ইরা অপরাজিত থাকেন ৪৮ বলে ৪৫ করে। তিন চার ও দুই ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত থাকেন অভিজ্ঞ নাহিদা আক্তার।
কলাবাগানের মেহেরুন নিসা জয়া উইকেট নেন তিনটি, তমালিকা সুমনা একটি।
কলাবাগানের রান তাড়ায় টপ অর্ডারে তিন ব্যাটার আউট হন থিতু হয়ে। পরে জান্নাতুল ফেরদৌস তিথি ও লাতিকা মাধাব ইনামদার ফিফটি করলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউ।
৪৭ বলে ৪২ করে আউট হন তিথি, ৫৫ বলে ৫২ লাতিকা। পরে তমালিকা সুমনা ২৮ রান করলেও দুইশ করতে পারেনি কলাবাগান।
আবাহনীর অধিনায়ক জাহানারা আলম ও শরিফা খাতুন দুটি করে উইকেট নেন, একটি করে নেন নাহিদা আক্তার ও সানজিদা আক্তার মেঘলা।