উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা ঘরে তুলল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 26 Feb 2023, 09:23 PM
ম্যাচের শেষ বলটি করার আগে অ্যাশ গার্ডনার চোখেমুখে যেন লেগে ছিল আনন্দের ছাপ। সম্ভাব্য ফল যে তার আগেই ‘নিশ্চিত।’ ডিপ মিডউইকেট ফিল্ডার বল ফেরত পাঠাতেই ক্রিজে এসে জড়ো হলেন দলের বাকিরা। একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, হই-হুল্লোড়ে চারদিক মাতিয়ে তুললেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁদিয়ে উইমেন’স টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আরেকটি শিরোপা ঘরে তোলার উচ্ছ্বাসে ভাসল তারা।
কেপ টাউনে রোববার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জয় ১৯ রানে। এনিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠ শিরোপা জিতল অস্ট্রেলিয়া। এই সংস্করণে দুই দফায় বিশ্ব জয়ের হ্যাটট্রিক করল তারা। ২০১০, ২০১২, ২০১৪ সালে টানা তিনবারের পর ২০১৮, ২০২০ ও ২০২৩ সালে জিতল দলটি।
রুদ্ধশ্বাস সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নারী-পুরুষ মিলিয়েই যে কোনো সংস্করণের বিশ্বকাপে প্রথমবার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে পেরে ওঠেনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। নারী ক্রিকেটের সফলতম দলটির বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ৭ ম্যাচ খেলে জয়শূন্যই থাকতে হলো তাদের।
ভারতের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালের পর ফাইনালেও দারুণ এক ফিফটি উপহার দেন বেথ মুনি। ১ ছক্কা ও ৯ চারে ৫৩ বলে ৭৪ রান করে জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এই ওপেনারের অপরাজিত ইনিংসের সৌজন্যে ৬ উইকেটে ১৫৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার লরা উলভার্ট খেলেন ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৪৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার চমৎকার ইনিংসটিও যথেষ্ট ছিল না। ৬ উইকেটে ১৩৭ রানে থামে প্রোটিয়াদের লড়াই।
শিরোপাটি জিতে একটি রেকর্ড গড়েন মেগ ল্যানিং। নারী-পুরুষ মিলিয়ে আইসিসির সর্বোচ্চ পাঁচ শিরোপা জেতা অধিনায়ক এখন তিনি। ছাড়িয়ে গেছেন তিনি অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের ৪ শিরোপা জয়ের কীর্তি।
নিউল্যান্ডসের মন্থর উইকেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়ার শুরুটাও ছিল ধীরলয়ে। পাওয়ার প্লেতে অ্যালিসা হিলিকে হারিয়ে তারা করতে পারে কেবল ৩৬ রান। পঞ্চম ওভারে মারিজান ক্যাপের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন হিলি (৩ চারে ১৮)।
উইকেটে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দেন গার্ডনার। ননকুলুলেকু এমলাবাকে টানা দুই চারের পর নাদিন ডি ক্লার্ককে ওড়ান তিনি দুই ছক্কায়। তার ঝড় থামে ক্লোয়ি ট্রায়নের বলে লং-অফে ধরা পড়ে। দুটি করে ছক্কা-চারে ২১ বলে ২৯ রান করেন গার্ডনার।
গ্রেস হ্যারিস ও মেগ ল্যানিং পারেননি বেশিক্ষণ টিকতে। দুইজনেই করেন ১০ রান। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে বলের সঙ্গে রান করে এগোতে থাকেন ওপেনার মুনি। ডি ক্লার্ককে পরপর দুই চার মেরে বল-রানের ব্যবধান বাড়ান তিনি। ক্যাপকে চার মেরে পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৪ বলে।
শেষ ওভারে শাবনিম ইসমাইলকে ছক্কা ও চার মেরে দলের রান দেড়শ পার করেন মুনি। শেষ ৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৬ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
লক্ষ্য তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিল বেশ মন্থর। প্রথম ৬ ওভারে তারা করে কেবল ২২ রান। ওপেনার তাজমিন ব্রিটসকে এই সময় হারায় দলটি।
নবম ওভারে ক্যাপকে ফিরিয়ে দেন গার্ডনার। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৫২ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। উলভার্টের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে পরের ওভারে রানআউট হয়ে যান অধিনায়ক সানে লুসও।
শুরুতে দেখেশুনে খেলে এগোতে থাকা উলভার্ট রানের গতিতে দম দেন। তাহলিয়া ম্যাকগ্রার পর জর্জিয়া ওয়ারেহ্যামকে ছক্কায় ওড়ান তিনি। ডার্সিয়া ব্রাউনকে চার মেরে পঞ্চাশে পা রাখেন ৪৩ বলে। শেষ চারে ইংলিশদের হারানো পথেও ফিফটি করেছিলেন তিনি।
মেগান শুটের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার আশা হয়ে উইকেটে থাকা উলভার্ট। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি স্বাগতিকরা।
৬ ম্যাচে ১১০ রান ও ১০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জেতেন গার্ডনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৫৬/৬ (হিলি ১৮, মুনি ৭৪*, গার্ডনার ২৯, হ্যারিস ১০, ল্যানিং ১০, পেরি ৭, ওয়েরহ্যাম ০, ম্যাকগ্রা ১*; ম্লাবা ৩-০-২৪-১, ইসমাইল ৪-১-২৬-২, ক্যাপ ৪-০-৩৫-২, খাকা ৪-০-২৭-০, ডি ক্লার্ক ৩-০-২৭-০, ট্রায়ন ২-০-১৫-১)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৩৭/৬ (উলভার্ট ৬১, ব্রিটস ১০, ক্যাপ ১১, লুস ২, ট্রায়ন ২৫, ডি ক্লার্ক ৮*, বশ ১, জ্যাফটা ৯*; শুট ৪-০-২৩-১, গার্ডনার ৪-০-২০-১, ব্রাউন ৪-০-২৫-১, পেরি ১-০-৫-০, জোনাসেন ৩-০-২১-১, ওয়ারেহ্যাম ২-০-২১-০, ম্যাকগ্রা ২-০-১৭-০)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ১৯ রানে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: বেথ মুনি
প্লেয়ার অব দা টুর্নামেন্ট: অ্যাশ গার্ডনার