শ্রীলঙ্কা-নিউ জিল্যান্ড
নিউ জিল্যান্ডকে ৮৮ রানে গুটিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখছে লঙ্কানরা।
Published : 28 Sep 2024, 07:12 PM
সহায়ক উইকেটে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন প্রাবাথ জায়াসুরিয়া। প্রথম টেস্টে সেরার পুরস্কার জেতা বাঁহাতি স্পিনার আরও একবার ধস নামালেন নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে। দারুণ বোলিংয়ে তাকে সঙ্গ দিলেন অভিষিক্ত নিশান পেইরিস। তাদের স্পিনে প্রতিপক্ষকে ফলো-অন করিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের সুবাস পাচ্ছে শ্রীলঙ্কা।
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ৩১৫ রানে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে কিউইদের স্রেফ ৮৮ রানে গুটিয়ে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠায় তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৯৯ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে সফরকারীরা।
প্রথম টেস্টে ৯ উইকেট নেওয়া জায়াসুরিয়া এবার প্রথম ইনিংসেই ধরেন ৪২ রানে ৬ শিকার। তার স্পিন বিষে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে একশর নিচে গুটিয়ে গেছে নিউ জিল্যান্ড। লঙ্কানদের বিপক্ষে তাদের আগের সর্বনিম্ন রান ছিল ১০২।
প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার পেইরিস দ্বিতীয়ভাগে এরই মধ্যে ঝুলিতে পুরেছেন আরও তিনটি। দ্বিতীয় ইনিংসে জায়াসুরিয়ার এখন পর্যন্ত শিকার কেবল একটি।
এদিনের শেষ সেশনের বেশিরভাগ সময়ই খেলা হয়নি আলোকস্বল্পতা ও পরে বৃষ্টির কারণে। আগেভাগে দিনের খেলা শেষ হওয়ায় বলা যায় লঙ্কানদের জয়ের অপেক্ষাই বেড়েছে কেবল।
২২ রানে ২ উইকেট নিয়ে দিন শুরু করা কিউইদের প্রথম সেশনেই দুইবার ব্যাটিংয়ে পাঠায় শ্রীলঙ্কা। এই সময়ে উইকেট পড়ে ৯টি। তাতে এক সেশনে দুইবার ব্যাটিংয়ে নামতে হয়ে কেন উইলিয়ামসনকে।
তার বিদায় দিয়েই সফরকারীদের ব্যাটিং ধসের শুরু। দিনের তৃতীয় ওভারেই জায়াসুরিয়ার বলে স্লিপে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসন। প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালানো রাচিন রাভিন্দ্রা স্টাম্প হারান পেইরিসকে ল্যাপ সুইপ করে। আগের দিনের নাইটওয়াচ ম্যাচ এজাজ প্যাটেল এলবিডব্লিউ পেইরিসের বলে।
পরের ওভারে তিন বলের মধ্যে টম ব্লান্ডেল ও গ্লেন ফিলিপসকে ফিরিয়ে দেন জায়াসুরিয়া। দুইজনেই ধরা পড়েন স্লিপে। ছক্কার চেষ্টায় লং অনে ড্যারিল মিচেল ক্যাচ দিলে টেস্ট ক্যারিয়ারের নবম পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় জায়াসুরিয়ার।
টিম সাউদিকে ফিরিয়ে ষষ্ট শিকার ধরেন তিনি। কয়েক ওভার পর মিচেল স্যান্টনারকে বোল্ড করে প্রতিপক্ষের ইনিংস গুটিয়ে দেন পেইরিস। নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসে দুই অঙ্কে ছুঁতে পারেন কেবল তিনজন; তার মধ্যে ১ ছক্কা ও ৪টি চারে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন স্যান্টনার।
জায়াসুরিয়ার ৬ উইকেটের ৫টিতেই ক্যাচ নেন লঙ্কান অধিনায়ক ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা। টেস্টে একই ইনিংসে এক বোলারের বলে ৫ ক্যাচ, বোলার-ফিল্ডার সংযোগের এমন নজির টেস্ট ইতিহাসে আছে আর কেবল ৪টি।
৫১৪ রানে এগিয়ে থেকে নিউ জিল্যান্ডকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে প্রথম ওভারেই টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। পেইরিসের বলে শর্ট লেগে দারুণ ক্যাচ নেন পাথুম নিসাঙ্কা।
লাঞ্চ বিরতির পর দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন ডেভন কনওয়ে ও উইলিয়ামসন। তাদের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেয় কিউইরা। ৪৮ বলে ফিফটি করেন কনওয়ে। কিন্তু এরপর আর ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি।
৬২ বলে ৬১ রান করে কট বিহাইন্ড হয়ে ফেরার আগের ওভারে একবার বেঁচে যান কনওয়ে। এলবিডব্লিউর আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলে রিভিউ নেন তিনি। উইলিয়ামসনের সঙ্গে কনওয়ের জুটিতে রান আসে ১০৮ বলে ৯৭।
উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে পেইরিসকে উড়িয়ে খেলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন উইলিয়ামসন (৪টি চারে ৪৬)। জায়াসুরিয়া টিকতে দেননি মিচেলকে। চমৎকার এক ডেলিভারিতে রাভিন্দ্রাকে বোল্ড করে দেন পেইরিস।
১২১ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হয়ে প্রতিরোধ গড়েন ব্লান্ডেল ও ফিলিপস। তাদের জুটি শেষ পর্যন্ত ভাঙতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৭৮ রানে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেন তারা।
২ ছক্কা ও ৪টি চারে ৫০ বলে ৪৭ রানে অপরাজিত আছেন ব্লান্ডেল। ২ ছক্কায় ৩২ রানে খেলছেন ফিলিপস। চতুর্থ দিনে কতক্ষণ টিকতে পারেন তারা, সেটাই দেখার বিষয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৬০২/৫ ইনিংস ঘোষণা
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২২/২) ৩৯.৫ ওভারে ৮৮ (উইলিয়ামসন ৭, এজাজ ৮, রাভিন্দ্রা ১০, মিচেল ১৩, ব্লান্ডেল ১, ফিলিপস ০, স্যান্টনার ২৯, সাউদি ২, ও’রোক ২*; আসিথা ৪-১-৮-১, পেইরিস ১৭.৫-৩-৩৩-৩, জায়াসুরিয়া ১৮-৬-৪২-৬)
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (ফলো-অন) ৪১ ওভারে ১৯৯/৫ (ল্যাথাম ০, কনওয়ে ৬১, উইলিয়ামসন ৪৬, রাভিন্দ্রা ১২, মিচেল ১, ব্লান্ডেল ৪৭*, ফিলিপস ৩২*; পেইরিস ১৭-১-৯১-৩, জায়াসুরিয়া ১৭-১-৭৬-১, আসিথা ২-০-৮-০, মিলান ২-০-৭-০, ধানাঞ্জায়া ৩-০-১৭-১)