পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
মুলতানে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সমতায় সিরিজ শেষ করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই আর ৬ উইকেট।
Published : 26 Jan 2025, 06:08 PM
দিনের শেষ দিকে সাউদ শাকিলের ব্যাট ছুঁয়ে বুটে লেগে যাওয়া বল গ্লাভসে জমাতে পারলেন না কিপার টেভিন ইমলাখ। ইনিংসে তৃতীয় ক্যাচ হাতছাড়া করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে মাঠ ছাড়ল তারা হাসি মুখেই। আগেই চারটি উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে তিন দশকের বেশি সময় পর টেস্ট জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই উজ্জ্বল এখন তাদের।
মুলতানে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সমতায় সিরিজ শেষ করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই আর ৬ উইকেট। সিরিজ জিততে পাকিস্তানের প্রয়োজন আরও ১৭৮ রান।
স্পিন-স্বর্গে ২৫৪ রানের চালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়ায় পাকিস্তান দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে।
পাকিস্তানের মাটিতে এখন পর্যন্ত কেবল চারটি টেস্ট জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যার সবশেষটি সেই ১৯৯০ সালের নভেম্বরে ডেসমন্ড হেইন্সের নেতৃত্বে, দলে ছিলেন তখন গর্ডন গ্রিনিজ, ম্যালকম মার্শাল, কার্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, ইয়ান বিশপরা। চলতি টেস্টের কিমার রোচ ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকিদের কারও তখন জন্মই হয়নি।
টেস্টের প্রথম সকালে ৩৮ রানে ৭ উইকেট হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬৩ রানে অল আউট হয়েও প্রথম ইনিংসে ৯ রানের ছোট্ট লিড পায় স্পিনারদের নৈপুণ্যে। দ্বিতীয় ইনিংসে রোববার অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের ফিফটি ও লোয়ার অর্ডারের সৌজন্যে তারা করে ২৪৪ রান।
অফ স্পিনার সাজিদ খান ও বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলি ধরেন ৪টি করে শিকার। প্রথম দিন হ্যাটট্রিক করা ৩৮ বছর বয়সী নোমান ম্যাচে নেন ১০ উইকেট। পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে ১০ উইকেট নেওয়ার নিজের রেকর্ড নতুন করে লেখেন তিনি।
সিরিজে পাকিস্তানের স্পিনাররা মিলে নিয়েছেন মোট ৩৮ উইকেট, দুই টেস্টের সিরিজে কোনো দলের স্পিনারদের যা যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম তিন ওভারেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে পাকিস্তান। নিজের প্রথম বলে শান মাসুদকে এলবিডব্লিউ করে দেন অফ স্পিনার কেভিন সিনক্লেয়ার। পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোটিকে রিভার্স সুইপের চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন মোহাম্মদ হুরাইরা।
নিজের পরের ওভারে কামরান গুলামের উইকেটও পেতে পারতেন মোটি। কিন্তু গালিতে ক্যাচ নিতে পারেননি জাস্টিন গ্রেভস। ১৩ রানে বাবর আজমের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি মোটি নিজেই, যদিও কঠিন ছিল সেটি।
জীবন পাওয়া দুই ব্যাটসম্যান প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তবে ৪৩ রানের জুটি ভাঙে কামরানের বাজে শটে। বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানকে বেরিয়ে এসে খেলে বল আকাশে তুলে দেন এই ব্যাটসম্যান।
দিনের শেষ দিকে বাবরকে (৭৬ বলে ৩১) ফেরান সিনক্লেয়ার। শর্ট লেগে ক্যাচ দেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক।
একবার জীবন পেয়ে ১৩ রানে অপরাজিত আছেন শাকিল। তার সঙ্গী ‘নাইটওয়াচম্যান’ কাশিফ আলি।
এর আগে ব্র্যাথওয়েটের ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা ভালো করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে তারা দ্বাদশ ওভারে। ওই ওভারেই নোমানের বলে আলগা শট খেলে মিকাইল লুই ফেরেন ৩০ বলে ৭ রান করে।
দ্বিতীয় উইকেটে আমির জাঙ্গুর সঙ্গে ৪২ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন ব্র্যাথওয়েট। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ৫৭ বলে ফিফটি করার পর আর বেশিক্ষণ টেকেননি। নোমানকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন তিনি, ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৪ বলে করেন ৫২ রান।
সাজিদের স্পিনে অভিষিক্ত জাঙ্গু ফেরেন ৫২ বলে ৩০ রান করে। ব্র্যাথওয়েটের মতোই স্টাম্পড হয়ে ফেরেন কাভেম হজ। আলিক আথানেজ ও জাস্টিন গ্রেভসও টিকতে পারেননি।
একটা পর্যায়ে ২ উইকেটে ১০৬ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ১৪৫। আরেকবার দলকে টানেন লেজের ব্যাটসম্যানরা।
সপ্তম উইকেটে ইনিংস সেরা ৫১ রানের জুটি গড়েন ইমলাখ ও সিনক্লিয়ার। ৫১ বলে ২৮ রান করেন সিনক্লিয়ার। ৫৭ বলে ২৮ রান আসে ইমলাখের ব্যাট থেকে।
পরে গুডাকেশ মোটি ও জোমেল ওয়ারিক্যানের ব্যাটে আড়াইশর কাছে যায় সফরকারীরা। দুজনই করেন ১৮ রান করে।
পরে তারা বল হাতেও জ্বলে উঠলেন আরেকবার, জাগালেন দারুণ জয়ের সম্ভাবনা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ১৬৩
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ১৫৪
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: ৬৬.১ ওভারে ২৪৪ (ব্র্যাথওয়েট ৫২, লুই ৭, জাঙ্গু ৩০, হজ ১৫, আথানেজ ৬, গ্রেভস ১০, ইমলাখ ৩৫, সিনক্লেয়ার ২৮, মোটি ১৮, ওয়ারিক্যান ১৮, রোচ ৪*; সাজিদ ২৪.১-৪৭৬-৪, কাশিফ ৬-২-২৩-১, নোমান ২১-০-৮০-৪, আবরার ১৫-১-৪৫-১)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৫৪) ২৪ ওভারে ৭৬/৪ (মাসুদ ২, হুরাইরা ২, বাবর ৩১, কামরান ১৯, শাকিল ১৩*, কাশিফ ১*; মোটি ৭-১-২৫-১, সিনক্লেয়ার ১১-০-৪১-২, ওয়ারিক্যান ৬-৪-৩-১)