নিগারের অসাধারণ ইনিংসে ৯ বছর পর শ্রীলঙ্কাকে হারাল বাংলাদেশ

নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের কীর্তি গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2023, 07:48 AM
Updated : 9 May 2023, 07:48 AM

৮ বলে প্রয়োজন তখন ১৮ রান। চামারি আতাপাত্তুকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে লং অফ দিয়ে ছক্কায় ওড়ালেন নিগার সুলতানা। পরের বল সুইপ করে পাঠালেন ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে। সমীকরণ চলে এলো হাতের নাগালে। পরে শেষ ওভারে নিগারের আরেক সুইপ শটেই নিশ্চিত হলো জয়।

কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে মঙ্গলবার অধিনায়কের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ। ১৪৬ রানের লক্ষ্য এক বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে নিগারের দল।

অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নিগার। দুই ওপেনারকে দ্রুত হারানোর পর পাওয়ার প্লের মধ্যে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে করেন ৭৫ রান। ৫১ বলের অধিনায়কোচিত ইনিংস সাজান তিনি ৭ চার ও ২ ছয়ে।

এই জয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ বছরের জয়-খরা কাটল বাংলাদেশের। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম দুই টি-টোয়েন্টিতেই জিতেছিল তারা ২০১২ ও ২০১৪ সালে। এরপর টানা সাত ম্যাচ জেতে লঙ্কানরা। সেই ধারায় এবার ছেদ টানতে পারলেন নিগাররা।

টি-টোয়েন্টিতে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১৪২ রান তাড়া করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদরা।

রান তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা তেমন ভালো ছিল না। পাঁচ ওভারের মধ্যে ফিরে যান দুই ওপেনার। শামিমা সুলতানা করেন ৫ রান। অভিষিক্ত রুবাইয়া হায়দার ৯ রান করতে খেলেন ১৬ বল।

সোবহানা মুস্তারিকে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন নিগার। দুজন মিলে ৪০ বলে ৫১ রান যোগ করেন। যেখানে বড় অবদান রাখেন অধিনায়ক নিগারই।

দ্বাদশ ওভারে ওশাদি রানাসিংহেকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন সোবহানা। ১ চারে ২৪ বলে করেন তিনি ১৭ রান। তখনও জয়ের জন্য ৫৩ বলে প্রয়োজন ছিল ৭২ রান।

এরপরই রিতুকে নিয়ে রানের গতি বাড়াতে শুরু করেন নিগার। নিয়মিত বাউন্ডারির পাশাপাশি এক-দুই রান নিয়ে গড়েন দারুণ এক জুটি। স্রেফ ৩৮ বলে আসে জুটির পঞ্চাশ।

ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি করতে কেবল ৩৬ বল খেলেন নিগার। যেখানে ছিল ৬ চারের সঙ্গে একটি ছয়। তাকে সঙ্গ দিয়ে যান রিতু। এরপর নিগারের ওই ছক্কা-চার। প্রথম তিন ওভারে ১৬ রান দেওয়া বোলারের এক ওভার থেকে আসে ১৭ রান!

শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৩৫ রানের। রিতুন মনির বাউন্ডারিতে অস্টাদশ ওভার থেকে আসে ১০ রান। শেষ দুই ওভারে ২৫ রানের সমীকরণে বল হাতে আসেন লঙ্কান অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তু। ব্যাটে-বলে যিনি অতীতে অনেকবারই ভোগান্তির কারণ হয়েছেন বাংলাদেশের।

তবে এবার তাকে ভিন্ন স্বাদ দিলেন নিগার ও রিতু। ফুল টস পেয়ে পয়েন্ট দিয়ে সীমানা ছাড়া করেন রিতু।

শেষ ওভারের প্রথম বলে দারুণ স্কয়ার ড্রাইভে চার মেরে জয় আরও সহজ করেন রিতু।

তবে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেনি এই জুটি। ৩ বলে ১ রান বাকি থাকতে ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন রিতু। আসল কাজ অবশ্য ততক্ষণে সেরে ফেলেছেন ৩০ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। ২৩ বলে চারটি চারে করেন ৩৩ রান।

নিগারের সঙ্গে তার জুটির রান স্রেফ ৫০ বলে ৭১। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি এটি।

রিতু ফিরে গেলেও দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন নিগার।

দিনের প্রথম ভাগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় ওভারেই ভিশ্মি গুনারত্নের উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। ফারিহা তৃষ্ণার বলে রাবেয়া খানের হাতে ক্যাচ দেন ১১ রান করা ১৭ বছর বয়সী ওপেনার।

শুরুর ধাক্কা সামাল দেন আতাপাত্তু। চেনা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে খেলেন ২৮ বলে ৩৮ রানের ইনিংস। তাকে থামান নাহিদা আক্তার। অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে সোবহানার হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান অধিনায়ক।

অধিনায়কের বিদায়ের পর দলের ইনিংস এগিয়ে নেন হার্শিথা সামারাবিক্রমা ও নিলাকশি ডি সিলভা। ফিফটির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৪৫ রানে থামেন হার্শিথা। অভিষিক্ত সুলতানা খাতুনের বলে ফারিহার হাতে ধরা পড়েন বাঁহাতি ব্যাটার।

এরপর হাসিনি পেরেরা, কাভিশা দিলহারি, আনুশকা সাঞ্জিবানিদের বেশি কিছু করতে দেননি ফাহিমা খাতুন, রাবেয়া খানরা।

এক প্রান্ত আগলে রেখে ২৮ বলে ২৯ রানের ইনিংসে শ্রীলঙ্কাকে দেড়শ ছুঁইছুঁই সংগ্রহ এনে দেন নিলাকশি। শেষ পর্যন্ত তা জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়নি।

একই মাঠে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৪৫/৬ (আতাপাত্তুর ৩৮, গুনারত্নে ১১, হার্শিথা ৪৫, নিলাকশি ২৯*, হাসিনি ১, কাভিশা ০, আনুশকা ০, ওশাদি ৮*; ফারিহা ৪-০-৩৫-১, সুলতানা ৪-০-৩০-১, নাহিদা ৪-০-৩৫-১, রাবেয়া ৪-০-২৩-১, ফাহিমা ৪-০-২০-২)

বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৪৬/৪ (শামিমা ৫, রুবাইয়া ৯, সোবহানা ১৭, নিগার ৭৫*, রিতু ৩৩, মুর্শিদা ০*; উদেশিকা ৩-০-৭-১, কাভিন্দি ২-০-১৪-১, ওশাদি ৪-০-৩৯-১, ইনোকা ৩.৫-০-২৯-০, কাভিশা ৩-০-২১-০, আতাপাত্তু ৪-০-৩৩-০)

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে