দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা সিরিজ
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডারবান টেস্ট জিততে স্বাগতিকদের প্রয়োজন আর ৫ উইকেট, সফরকারীদের চাই ৪১৩ রান।
Published : 29 Nov 2024, 10:12 PM
ফেরার ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাতে আলো ছড়ালেন টেম্বা বাভুমা। প্রথমভাগে ৭০ রান করা দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এবার উপহার দিলেন চমৎকার এক সেঞ্চুরি। তার সঙ্গে দারুণ জুটি গড়া ট্রিস্টান স্টাবসও পেলেন তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া। তাদের নৈপুণ্যে রান পাহাড়ে উঠে বোলারদের হাত ধরে দারুণ এক জয়ের সুবাস পাচ্ছে স্বাগতিকরা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডারবান টেস্টের তৃতীয় দিন ৫ উইকেটে ৩৬৬ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসের ১৪৯ রানের লিডের সুবাদে প্রতিপক্ষকে ৫১৬ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় তারা।
প্রথম ইনিংসে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে কম ৪২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার বিব্রতকর রেকর্ড গড়া লঙ্কানরা ব্যাট হাতে দ্বিতীয়বারও ধুঁকছে। ৫ উইকেটে ১০৩ রান করে দিন শেষ করেছে তারা।
সিরিজের প্রথম টেস্টটি জিততে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রয়োজন আর ৫ উইকেট, শ্রীলঙ্কার চাই ৪১৩ রান। অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে বড় জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দেড় বছরের বেশি সময় পর টেস্ট সেঞ্চুরি করা বাভুমা ৯ চারে ২২৮ বলে খেলেন ১১৩ রানের ইনিংস। ৬০ টেস্টের ক্যারিয়ারে এটি তার স্রেফ তৃতীয় শতক। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা স্টাবস করেন ২ ছক্কা ও ৯ চারে ২২১ বলে ১২২ রান।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে ২৪৯ রানের জুটি গড়েন বাভুমা ও স্টাবস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে চতুর্থ উইকেটে যা দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ, যেকোনো উইকেট মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ।
৩ উইকেটে ১৩২ রান নিয়ে দিন শুরু করা দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে প্রথম ঘণ্টায় আঘাত হানার সুযোগ পায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ভিশ্ব ফার্নান্দোর বলে প্রথম স্লিপে স্টাবসের ক্যাচ ছাড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তখন ৩৫ রানে খেলছিলেন স্টাবস।
২৮ রান নিয়ে খেলতে নামা বাভুমা ফিফটি স্পর্শ করেন ১১২ বলে। প্রথম ইনিংসে ৭০ রান করা ডানহাতি ব্যাটসম্যান এই প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশ ছুঁলেন। ১৭ রান নিয়ে দিন শুরু করা স্টাবস পঞ্চাশে পা রাখেন এক ওভার পর, ১২১ বলে।
কিছুক্ষণ পর আরেক দফায় বেঁচে যান ৫৫ রানে থাকা স্টাবস। এবার তার কঠিন ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি কুসাল মেন্ডিস।
লাঞ্চের পরও দৃঢ়তার সঙ্গে দলকে টানেন তারা। সাবধানী ব্যাটিংয়ে বাড়াতে থাকেন রান। দ্বিতীয় নতুন বল নিয়েও এই দুজনকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারছিল না শ্রীলঙ্কা।
ডারবানে ছয় বছরের মধ্যে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করেন স্টাবস, ১৮৩ বলে। টানা দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। গত মাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে খেলেছিলেন ১০৬ রানের ইনিংস।
পরের ওভারে লাহিরু কুমারার বলে স্টাবসকে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর ২০১ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন চোট কাটিয়ে ফেরা বাভুমা। গত বছরে মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকটি করেছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তৃতীয় প্রোটিয়া অধিনায়ক হিসেবে সেঞ্চুরি পেলেন বাভুমা; আগের দুইজন ছিলেন শন পলক ও হাশিম আমলা।
স্টাবসের স্টাম্প ভেঙে জুটিতে ফাটল ধরান ভিশ্ব। তিন ওভার পর আরেক সেঞ্চুরিয়ান বাভুমাকে এলবিডব্লিউ করেন আসিথা ফার্নান্দো। এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টেস্ট ইতিহাসে কখনও ৪০০ রান তাড়া করে জিততে না পারা শ্রীলঙ্কা ফের ব্যাট হাতে ধাক্কা খায় শুরুতেই। পঞ্চম ওভারেই তারা হারায় অভিজ্ঞ দিমুথ কারুনারাত্নে।
রান আউট থেকে বেঁচে যাওয়া পাথুম নিসাঙ্কা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েও জীবন পান কাগিসো রাবাদা ‘ফ্রন্ট ফুট নো বল’ করায়। পরের ওভারেই তাকে ফিরিয়ে দেন জেরল্ড কুটসিয়া। কিছুটা আশা জাগানো দিনেশ চান্দিমাল ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের জুটি ভেঙে দেন প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট নেওয়া মার্কো ইয়ানসেন। কামিন্দু মেন্ডিসকেও টিকতে দেননি এই পেসার।
নাইটওয়াচম্যাচ হিসেবে নামা প্রাবাথ জায়াসুরিয়ার বিদায়ের পর দিনের খেলা শেষ ঘোষণা করে দেন আম্পায়াররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ১৯১
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪২
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ১০০.৪ ওভারে ৩৬৬/৫ ডিক্লে (আগের দিন ১৩২/৩) (স্টাবস ১২২, বাভুমা ১১৩*, বেডিংহ্যাম ২১*; আসিথা ১৭.৪-২-৫৪-১, ভিশ্ব ১৮-২-৬৪-২, কুমারা ১৮-৫-৪৩-০, জয়াসুরিয়া ৪০-২-১৩২-২, ধানাঞ্জায়া ৬-০-৩১-০, কামিন্দু ১-০-১২-০)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৫১৬) ৩১ ওভারে ১০৩/৫ (নিসাঙ্কা ২৩, কারুনারাত্নে ৪, চান্দিমাল ২৯*, ম্যাথিউস ২৫, কামিন্দু ১০, জায়াসুরিয়া ১, ধানাঞ্জায়া ০*; রাবাদা ১১-২-৩৪-২, ইয়ানসেন ১১-৩-২২-২, কুটসিয়া ৫-০-৩৯-১, মহারাজ ৪-০-৪-০)