বিপিএল
মাঠে খেলা দেখতে এসে বলের আঘাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্নধারের স্ত্রী আঘাত পেয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যাওয়ায় ক্রিকেটারদের চেক প্রত্যাখ্যান হয়েছে, দাবি দুর্বার রাজশাহী দলের।
Published : 16 Jan 2025, 08:47 AM
পারিশ্রমিক না পাওয়ায় ক্রিকেটারদের অনুশীলন বয়কট করা নিয়ে তোলপাড়। টাকা না পেলে ম্যাচ না খেলার হুমকিও এলো জোরেশোরে। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি সংশ্লিষ্টদের মুখে সারা দিনই তালা। দলের মুখপাত্রদের কেউই কথা বলতে রাজি হননি। অবশেষে মাঝ রাতে দেওয়া ভিডিওবার্তায় অভিযোগ অস্বীকার করল দুর্বার রাজশাহী কর্তৃপক্ষ।
বিপিএলে চট্টগ্রাম পর্বে এসে টানা দুই দিন অনুশীলন করেনি রাজশাহী। এর মধ্যে প্রথম দিন মঙ্গলবার পূর্ব নির্ধারিত বিশ্রামে থাকে তারা। পরদিন সকাল ১০টায় ছিল অনুশীলনের সূচি। কিন্তু পারিশ্রমিক না পাওয়ায় অনুশীলন করেননি ক্রিকেটাররা। অনুশীলন শুরুর নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ আগে রাজশাহী পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দিনও বিশ্রামে থাকবে দল।
কিন্তু দলটির একাধিক ক্রিকেটার নিশ্চিত করেন, বিশ্রাম নয় বরং পারিশ্রমিক না পাওয়ায়ই অনুশীলনের জন্য মাঠে যাননি তারা। এমনকি বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ অর্থ বুঝে না পেলে শুক্রবারের ম্যাচও বয়কট করার হুমকি দেন ক্রিকেটাররা। এসব ঘিরে বুধবার সারা দিনই চলে নাটকীয়তা।
সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম এসে রাজশাহীর ক্রিকেটার, টিম ম্যানেজমেন্ট ও ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন বিসিবি সভাপতি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ। তবে এতেও মেলেনি সমাধান। বিসিবি প্রধানের পক্ষে সংবাদমাধ্যমের সামনে বোর্ড পরিচালক মঞ্জুর আলম জানান, বৃহস্পতিবার সমাধানের আশা করছেন তারা।
এরও প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর, রাত পৌনে ১২টায় বার্তা পাওয়া যায় রাজশাহীর কাছ থেকে। সারা দিন ধরে চলা নানা প্রশ্ন ও বিতর্কে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে ভিডিওবার্তা দেন দলটির অপারেশন ইন-চার্জ জায়েদ আহমেদ। যেখানে শুরুতেই পারিশ্রমিক না পাওয়ায় অনুশীলন বয়কটের খবরের সত্যতা অস্বীকার করেন তিনি।
"অনুশীলন ও পারিশ্রমিকের বিষয়ে আমরা সারা দিন যে খবরগুলো দেখেছি, এটার সাথে আসলে (পারিশ্রমিক না পাওয়ার বিষয়) একদমই সম্পৃক্ত নয়। আমরা এরই মধ্যে প্রতিটি ক্রিকেটারকে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আগামীকাল অর্থাৎ ১৬ জানুয়ারি সবাইকে পারিশ্রমিক দেওয়া হবে। এটার সঙ্গে অনুশীলনের সম্পর্ক নেই।"
কী কারণে পরপর দুই দিন অনুশীলন হয়নি রাজশাহীর, সেটিরও একটি ব্যাখ্যা দেন জায়েদ।
"সিলেট থেকে আমরা যখন চট্টগ্রামে আসি, কয়েকজন ক্রিকেটার ঢাকায় নেমে তারা বিশ্রামে গিয়েছিল। চট্টগ্রামে আমরা পুরো দলকে একসঙ্গে পাইনি। গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে কয়েকজন এসেছে, আজকে (বুধবার) এসেছে। এখনও এক-দুজন জন বাকি আছে। ক্রিকেটাররা বিশ্রাম চেয়েছিল বলেই ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। এটাই ছিল বিষয়। পারিশ্রমিকের বিষয়ে বলব, ১৬ জানুয়ারি তারা পেয়ে যাবে। এতে কোনো সংশয় নেই।"
এক-দুজন ক্রিকেটার না থাকায় গোটা দলের অনুশীলন বাতিল হয়েছে, এরকম নজির ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল। তাছাড়া, এসব কারণেই যদি অনুশীলন বাতিল হবে, তাহলে অনুশীলন শুরুর নির্ধারত সময়ের মাত্র ১২ মিনিট আগে কেন জানানো হলো, এসব কিছুর উত্তর তার কাছ থেকে মেলেনি।
ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক দিতে দেরি হওয়ায় দুঃখপ্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে জানান, বৃহস্পতিবার পারিশ্রমিকের ২৫ শতাংশ অর্থ নগদ পাবেন ক্রিকেটাররা। আর ২৫ শতাংশ অর্থের চেক দিয়ে দেওয়া হবে তাদের। যেটির মানে, শুক্রবারের ম্যাচের আগে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক পাবেন ক্রিকেটাররা।
পারিশ্রমিকের অর্থ পরিশোধে ক্রিকেটারদের এর আগেও চেক দিয়েছিল রাজশাহী। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের ওই চেক ফিরিয়ে দেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যে কারণে তখনও ম্যাচ না খেলার প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছিলেন তারা।
ব্যাংক থেকে চেক প্রত্যাখ্যানের প্রসঙ্গে জায়েদ বলেন, মাঠে খেলা দেখতে এসে ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্নধারের স্ত্রী শরীরে বলের আঘাত পেয়েছিলেন। সেটির চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে দেশের বাইরে যেতে হওয়ায় চেক জমা করে টাকা নিজেদের ব্যাংকে নিতে পারেননি ক্রিকেটাররা।
"চেক বাউন্সের ব্যাপারটা হলো, যেই ম্যাচে আমাদের দলের কর্ণধারের স্ত্রী মাঠে ছিলেন, ওই ম্যাচে সাইডলাইনে বসে থাকা অবস্থায় একটি বল আঘাত করে ওনার শরীরে। একটা হাড়ে চিড় ধরা পড়ে। তাই তৎক্ষণাৎ তাকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। তিনি সেখানেই ছিলেন।"
"চেকটা আমরা এর আগেই দিয়ে ফেলেছিলাম। আমরা চেকটা ওই তারিখে লিখে ফেলেছিলাম কিন্তু উনি দেশে নেই, তখন তিনি বললেন, 'আমি তো দেশে নেই, তুমি দলকে বলো আমি আসার পরে যেন চেকটা জমা দেয়। না হয় ব্যাংক তো ফোন করে আমাকে পাবে না।' এই জিনিসটা প্রতিটা ক্রিকেটারকে বলা হয়েছিল। এর ভেতরে ২-১ জন ক্রিকেটার হয়তো চেক জমা দিয়ে ফেলেছিল। তাদের মনে ছিল না। পরে যোগাযোগ করি যে, 'আপনাদের তো বলা হয়েছে চেকটা জমা না দিতে।' তখন তারা বলে যে, তাদের মাথায় ছিল না। তারা ভেবেছিল সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে।"
বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারেও ধারণা দেন রাজশাহীর পরিচালনা ইনচার্জ।
"বিসিবি সভাপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাদের কর্নধার কথা বলেছেন ফোনে। আমি নিজে সশরীরে দেখা করেছি। খুব সুন্দর কথা হয়েছে। পুরো পরিস্থিতিটা জানতে চেয়েছেন। খুব ছোট একটা বৈঠক ছিল। আমরা বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি যে, কোথায় কোথায় ঘাটতি ছিল। পারিশ্রমিক দিতে যে দেরি হয়েছে, এজন্য দুঃখপ্রকাশ করেছি। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, আগামীকাল পারিশ্রমিক দেওয়া হবে।"
অবশ্য ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক দেওয়া হলেও সেটি বিপিএলের নীতিমালা পুরোপুরি সমর্থন করবে না। কারণ টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই দেওয়ার কথা ৫০ শতাংশ অর্থ। আর খেলা শুরু হলে পরিশোধের কথা আরও ২৫ শতাংশ অর্থ। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে মাত্র প্রথম দফার ৫০ শতাংশ পেতে চলেছেন রাজশাহীর ক্রিকেটাররা।