অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান সিরিজ
প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারাল অস্ট্রেলিয়া।
Published : 04 Nov 2024, 04:50 PM
লক্ষ্য বেশি বড় ছিল না। জয়ের পথে অনায়াসেই এগোচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন হারিস রউফ। চমৎকার এক স্পেলে তিনি জমিয়ে তুললেন ম্যাচ। তবে আরও একবার দলের বিপদের সময়ে ব্যাট হাতে নির্ভরতা দিলেন প্যাট কামিন্স। অধিনায়কের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করল স্বাগতিকরা।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সোমবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০৪ রানের লক্ষ্য ৯৯ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলেছে কামিন্সের দল। রান তাড়ার ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ছোট জয়।
পেসারদের দাপটের ম্যাচে বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ৩১ বলে ৩২ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন কামিন্স। তবে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে কাঁপন ধরিয়ে ১০ ওভারে তিন মেইডেনসহ মাত্র ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা মিচেল স্টার্ক।
ম্যাচে ফিফটি করতে পারেননি কোনো ব্যাটসম্যান। দুই দলের দুজন করে ছুঁতে পারেন চল্লিশ। ম্যাচের ১৮ উইকেটের মধ্যে ১৩টিই নেন পেসাররা। ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে কিছুটা আশা দিলেও ৯ ওভারে ৬৭ রান খরচ করে ফেলেন রউফ।
অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম ম্যাচে দলের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করেন রিজওয়ান। কিন্তু বড় পুঁজি না পাওয়ায় পরাজয়েই শুরু হলো তার নতুন যাত্রা। আর ওয়ানডেতে ফেরার ম্যাচটা দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই রাঙালেন কামিন্স।
মেলবোর্নের সবুজ উইকেটে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই স্টার্কের তোপে পড়ে পাকিস্তান। তৃতীয় ওভারে হালকা সুইং করা লেংথ ডেলিভারিতে বোল্ড হন অভিষিক্ত সাইম আইয়ুব।
সপ্তম ওভারে স্টার্কের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারির লেংথ পড়তে ভুল করেন আরেক ওপেনার আব্দুল্লাহ শাফিক। ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টায় শেষ মুহূর্তে তার ব্যাটে লেগে বল চলে যায় জশ ইংলিসের গ্লাভসে।
নতুন অধিনায়ককে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন সাবেক অধিনায়ক বাবর আজম। দুজন মিলে ৬৬ বলে যোগ করেন ৩৯ রান। ১৮তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জ্যাম্পা।
ফুল লেংথ ধরনের ডেলিভারি কিছুটা নিচু হলে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন ৪ চারে ৪৪ বলে ৩৭ রান করা বাবর। এরপর আর তেমন জুটি গড়ে ওঠেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটিংয়ে নেমে অল্পেই ফেরেন কামরান গুলাম।
দলকে একশ পার করিয়ে পাঁচ ওভারের মধ্যে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন অধিনায়ক রিজওয়ান ও সহ-অধিনায়ক সালমান আলি আগা। ২ চার ও ১ ছক্কায় দলের সর্বোচ্চ ৪৪ রান করতে ৭১ বল খেলেন রিজওয়ান। সালমানের ব্যাট থেকে আসে ১২ রান।
আরেক অভিষিক্ত ইরফান খান রান আউট হন ২২ রান করে। ভালো শুরু করেও ১৯ বলে ২৪ রানে ফিরে যান শাহিন শাহ আফ্রিদি।
পরে দলকে দুইশ পার করান নাসিম শাহ। অ্যাডাম জ্যাম্পার ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে নেন ১৮ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরার আগে ১ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কায় ৩৯ বলে তিনি করেন ক্যারিয়ার সেরা ৪০ রান।
রান তাড়ায় হতাশ করে অস্ট্রেলিয়ার নতুন উদ্বোধনী জুটি। চার ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন দুই ওপেনার। ম্যাথু শর্টকে ফেরান আফ্রিদি। আর নাসিমের শিকার হন জেইক-ফ্রেজার ম্যাকগার্ক।
শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নেন স্টিভেন স্মিথ ও জশ ইংলিস। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন তারা। দুজনের জুটিতে ৭৫ বলে আসে ৮৫ রান।
১৩তম ওভারে আক্রমণে এসে নিজের তৃতীয় ওভারে এই জুটি ভাঙেন রউফ। কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ৬ চারে ৪৪ রান করা স্মিথ।
আরেক সেট ব্যাটসম্যান ইংলিসকে ফেরান আফ্রিদি। বাঁহাতি পেসারের শর্ট বলে প্রথমে ছক্কা মারেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। পরের বল একই শট খেলার চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন তিনি। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৪২ বলে ম্যাচের সর্বোচ্চ ৪৯ রান করেন ইংলিস।
২১তম ওভারে পরপর দুই বলে মার্নাস লাবুশেন ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ড্রেসিং রুমে ফেরত পাঠিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচে ফেরান রউফ। ২৭ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কঠিন বিপদে অস্ট্রেলিয়া।
অ্যারন হার্ডির সামনে ছিল নায়ক হওয়ার বড় সুযোগ। উল্টো দলকে আরও চাপে ফেলে মোহাম্মদ হাসনাইনের বলে বোল্ড হয়ে যান হার্ডি। ১৫৫ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন পরাজয়ের শঙ্কাও হয়তো উঁকি দিচ্ছিল স্বাগতিক দলে।
দলের চরম প্রয়োজনের সময়ে ব্যাট হাতে আরেকবার বড় অবদান রাখেন কামিন্স। শন অ্যাবটের সঙ্গে তার অষ্টম উইকেট জুটিতে আসে ২৭ বলে ৩০ রান। জয় থেকে ১৯ রান দূরে থাকতে আলসে দৌড়ে রান আউট হন অ্যাবট।
ফের জেগে ওঠে পাকিস্তানের আশা। তবে সেটি বেশিক্ষণ টিকতে দেননি কামিন্স। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ৪৬.৪ ওভারে ২০৩ (শাফিক ১২, সাইম ১, বাবর ৩৭, রিজওয়ান ৪৪, কামরান ৫, সালমান ১২, ইরফান ২২, আফ্রিদি ২৪, নাসিম ৪০, রউফ ০, হাসনাইন ২*; স্টার্ক ১০-৩-৩৩-৩, কামিন্স ৯.৪-১-৩৯-২, অ্যাবট ৮-০-৩৪-১, হার্ডি ৪-০-১৫-০, জ্যাম্পা ১০-০-৬৪-২, শর্ট ১-০-২-০, ম্যাক্সওয়েল ৩-০-১১-০, লাবুশেন ১-০-৫-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৩৩.৩ ওভারে ২-৪/৮ (শর্ট ১, ম্যাকগার্ক ১৬, স্মিথ ৪৪, ইংলিস ৪৯, লাবুশেন ১৬, হার্ডি ১০, ম্যাক্সওয়েল ০, অ্যাবট ১৩, কামিন্স ৩২*, স্টার্ক ২*; আফ্রিদি ১০-০-৪৩-২, নাসিম ৭.২-০-৩৯-১, হাসনাইন ৭.১-০-৫১-১, রউফ ৯-০-৬৭-৩)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: মিচেল স্টার্ক